মধ্যযুগীয় বর্বরতার সাক্ষী হয়েছে আমাদের রাজ্যের কোচবিহার জেলা। বিজেপি করায় এক মহিলাকে বিবস্ত্র করে মারধরের অভিযোগ উঠেছে তৃণমূল কংগ্রেসের বিরুদ্ধে। পুরো ঘটনা খতিয়ে দেখতে ৭ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করল রাজ্য বিজেপি নেতৃত্ব।
কোচবিহারের মাথাভাঙ্গায় ওই সংখ্যালঘু মহিলা কেন বিজেপি করবে এই কারণে তাকে বিবস্ত্র করে মারধর করার অভিযোগ উঠেছে। পুরো ঘটনা খতিয়ে দেখতে ৭ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করল রাজ্য বিজেপি নেতৃত্ব। শুক্রবার ৭ সদস্যের নাম ঘোষণা করে লিখিত বিবৃতি দেন দলের রাজ্য সভাপতি তথা বালুরঘাটের সাংসদ সুকান্ত মজুমদার। কমিটির সদস্যরা শনিবার মাথাভাঙ্গায় গিয়ে নির্যাতিতার সঙ্গে দেখা করবেন। এই কমিটির নেতৃত্বে থাকবেন মহিলা মোর্চার সম্পাদিকা তথা বিজেপি বিধায়ক অগ্নিমিত্রা পাল। ঘটনা প্রসঙ্গে খুঁটিনাটি জেনে এই প্রতিনিধি দল একটি রিপোর্ট দেবে রাজ্য নেতৃত্বকে।
জানা গেছে, মঙ্গলবার মাথাভাঙ্গার ঘোকসাডাঙ্গার এলাকার রুইডাঙ্গায় এক মুসলিম মহিলা বিজেপি মহিলা মোর্চার সক্রিয় সদস্যা, নিজের জমি থেকে কাজ করে ফিরছিলেন। সেই সময় তার ওপর হামলা হয়। তৃণমূলের বেশ কিছু দুষ্কৃতী তাকে ঘিরে ধরে মারধর করতে থাকেন। তাকে নগ্ন করে তার শাড়ি পাশের নদীতে ফেলে দেওয়া হয়। এরপরে ওই অবস্থায় প্রায় এক কিলোমিটার টেনে হিঁচড়ে তাকে নিয়ে যাওয়া হয়। এই ঘটনায় ওই নির্যাতিতা জ্ঞান হারালে তাকে বাড়ির কাছে ফেলে দিয়ে যায় দুষ্কৃতীরা।
জানা গেছে, বিজেপি করার জন্য বার বার হুমকি পেয়ে তার পরিবারের অন্য দু’জন সদস্য বাড়ি ছেড়ে অন্য জায়গায় গিয়েছে। তারপর ওই মহিলা এই বর্বরতার শিকার হয়েছেন।
এই নিয়ে নির্যাতিতা যখন পুলিশে অভিযোগ দায়ের করতে যান প্রথমে এফআইআর নিতে অস্বীকার করে পুলিশ। পরে মহিলা কমিশন সহ একাধিক চাপের মুখে লিখিত অভিযোগের ভিত্তিতে তদন্তে নেমে পুলিশ চারজনকে গ্রেফতার করেছে।
কোচবিহারের ঘটনা জানতে পেরেই রাজ্য বিজেপি সভাপতি সুকান্ত মজুমদার তৎক্ষণাৎ ৭ সদস্যের কমিটি গঠন করেছেন। অগ্নিমিত্রা পাল, ফাল্গুনী পাত্র, শিখা চট্টোপাধ্যায়, মালতি রাভা রায়, শশী অগ্নিহোত্রী, মাফুজা খাতুন ও জলপাইগুড়ির সাংসদ জয়ন্ত রায় রয়েছেন কমিটিতে। এনারা শনিবার যাবেন কোচবিহারের মাথাভাঙ্গায়। সেখানে ওই নির্যাতিতা মহিলার সঙ্গে কথা বলে ঠিক কি ঘটনা ঘটেছিল তা বিশদে জানতে চাইবেন তারা। এরপর একটি রিপোর্ট পেশ করবেন তারা।
এদিকে কোচবিহারের ঘটনায় যেমন বঙ্গ রাজনীতি তোলপাড় হয়েছে, তেমনি বিজেপি নেতা অমিত মালব্যের টুইট থেকে বিষয়টি নজরে আসে জাতীয় মহিলা কমিশনের। তারপর জাতীয় মহিলা কমিশনের চেয়ারপার্সন রেখা শর্মা কড়া ভাষায় ঘটনার নিন্দা করেছেন। তিনি লেখেন, পুলিশ যাতে যথাযথ ভাবে বিষয়টি দেখেন তার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। জাতীয় মহিলা কমিশনের তরফে ঘটনায় অভিযুক্তদের দ্রুত গ্রেপ্তার এবং মহিলাকে যাতে বিনামূলে চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হয় তা নিশ্চিত করতে বলা হয়েছে। মহিলা কমিশনের তরফে আগামী তিন দিনের মধ্যে এই ঘটনার রিপোর্টও তলব করা হয়েছে।