জুনিয়র ডাক্তারদের আন্দোলন নিয়ে সিপিএমের সুরেই সুর মেলালেন রাজ্য বিজেপির দুই শীর্ষনেতা। রবিবার জুনিয়র ডাক্তারদের আন্দোলনকে এক কথায় ‘ব্যর্থ’ বলে মন্তব্য করলেন বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার এবং বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। তাঁদের দাবি, জুনিয়র ডাক্তারদের আন্দোলনের শুরুটা ভাল হলেও, শেষটা ভাল নয়। পাশাপাশি এ-ও বলেন, ‘‘মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক করাই উচিত হয়নি জুনিয়র ডাক্তারদের। মানুষ ভাল ভাবে নেননি।’’ প্রসঙ্গত, ‘আমরণ অনশন’ প্রত্যাহার করার পরের দিন সিপিএমের দৈনিক মুখপত্রে লেখা হয়েছিল, নবান্ন থেকে ‘কার্যত শূন্য হাতে’ই ফিরতে হয়েছে জুনিয়র ডাক্তারদের। একই কথা মনে করছে বিজেপিও। জুনিয়র ডাক্তারদের দাবি, তাঁরা লড়াইয়ের ময়দান ছাড়েননি। অনেক দাবি সরকার মানলেও, নির্যাতিতার জন্য সুবিচারের লড়াই চলবে।
১৭ দিন অনশনের পর মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক করে ‘আমরণ অনশন’ তুলে নেন জুনিয়র ডাক্তারেরা। তবে তাঁরা জানান, অনশন তুললেও আন্দোলনের পথ থেকে সরে আসবেন না তাঁরা। অনশন ওঠার পর অনেকেই প্রশ্ন তোলেন, জুনিয়র ডাক্তারদের আন্দোলন কি থেমে গেল? রবিবার শুভেন্দু-সুকান্তের গলাতেও শোনা গেল প্রায় একই সুর।
শুভেন্দু বলেন, ‘‘মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে বৈঠকে বসাই ঠিক হয়নি জুনিয়র ডাক্তারদের। তাঁদের আন্দোলনের শুরুটা ভাল ছিল। কিন্তু শেষটা ভাল হল না। সামনে পরীক্ষা আছে বলে বৈঠকে উনি জুনিয়র ডাক্তারদের প্রছন্ন হুমকি দিয়েছেন। তার পরই দেখা গেল জুনিয়র ডাক্তারদের ভিড় পাতলা হয়ে গেল।’’ একই সঙ্গে তিনি এ-ও জানান, রাজ্যের প্রধান বিরোধী দলকে (বিজেপি) আন্দোলনে সামিল না করে ভুল করেছেন জুনিয়র ডাক্তারেরা। শুভেন্দুর কথায়, ‘‘২৭ অগস্ট নবান্ন অভিযানে না গিয়ে জুনিয়র ডাক্তারেরা ভুল করেছেন।’’
উল্লেখ্য, আন্দোলনের প্রথম দিন থেকেই জুনিয়র ডাক্তারেরা ঘোষণা করে রেখেছেন, তাঁদের আন্দোলন ‘অরাজনৈতিক’। কোনও রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বকে পাশে ঘেঁষতে দেননি। তাঁদের জানিয়েছিলেন, কোনও দলের পতাকা ছাড়া এবং পরিচিত রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বেরা ছাড়া যে কেউ আন্দোলনে যোগ দিতে এলে স্বাগত। বিজেপি বার বার নিজেদেরকে জুনিয়র ডাক্তারদের আন্দোলনের সঙ্গে জুড়ে দিতে চেয়েছিল। কিন্তু আন্দোলনকারীরা তা হতে দেননি। বিজেপি চেয়েছিল জুনিয়র ডাক্তারদের আন্দোলনের সঙ্গে মিশে রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে সুর চড়াতে। জুনিয়র ডাক্তারদের দাবি দাওয়ার সঙ্গে ভাসিয়ে দিয়েছিল ‘মুখ্যমন্ত্রীর পদত্যাগ’-এর দাবিও। তবে জুনিয়র ডাক্তারেরা সেই ‘দফা এক দাবি এক মুখ্যমন্ত্রীর পদত্যাগ’ দাবি গ্রহণ করেননি। আন্দোলনে গিয়ে ‘গো ব্যাক’ স্লোগান শুনতে হয়েছে বিজেপি সাংসদ অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় এবং বিজেপি বিধায়ক অগ্নিমিত্রা পালকে। শুভেন্দুরা মনে করেন, অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়কে ‘গো ব্যাক’ স্লোগান দেওয়াটাও উচিত হয়নি জুনিয়র ডাক্তারদের।
‘আমরণ অনশন’ প্রত্যাহারের পর শনিবার আরজি করে ‘গণকনভেশন’ করেন আন্দোলনকারীরা। ‘গণকনভেশন’-এর পর আরজি কর চত্বরে ‘নির্যাতিতার জন্য বিচার’-এর দাবিতে মশাল মিছিল করেন তাঁরা। তার পরই আগামী বুধবার সিজিও কমপ্লেক্স অভিযানের ডাক দেন জুনিয়র ডাক্তারেরা। সেই কর্মসূচিকে কটাক্ষ করেছেন শুভেন্দু। তাঁর কথায়, ‘‘সিজিও কেন? ক্ষমতা থাকলে সুপ্রিম কোর্টের সামনে বিক্ষোভ দেখাক।’’
জুনিয়র ডাক্তারদের ‘থ্রেট কালচার’ অভিযোগ নিয়ে মমতাকে বিঁধেছেন সুকান্ত। তিনি বলেন, ‘‘থ্রেট কালচারের জন্মই দিয়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। জুনিয়র ডাক্তারেরা সেই তাঁর সঙ্গেই ‘থ্রেট কালচার’ নিয়ে আলোচনা করলেন। তা কখনওই সফল হতে পারে না।’’ তাঁর দাবি, মমতার ‘গেমপ্ল্যানে’ই খেলছেন জুনিয়র ডাক্তারেরা। তাঁদের ‘চোকার্স’ বলেও কটাক্ষ করেন সুকান্ত। সেই সঙ্গে শনিবার আত্মপ্রকাশ করা জুনিয়র ডাক্তারদের নতুন সংগঠন ‘ওয়েস্ট বেঙ্গল জুনিয়র ডক্টর্স’ অ্যাসোসিয়েশন’কে ‘তৃণমূলেরই শাখা’ বলে আক্রমণ শুভেন্দু-সুকান্তের। পাশাপাশি দীপাবলির পর রাজভবনে গিয়ে রাজ্যপালের কাছে ‘গণস্বাক্ষর’ তুলে দেবেন বলে জানান তাঁরা। শুভেন্দু বলেন, ‘‘কলকাতায় বড় জমায়েত হবে। আমরা ইতিমধ্যেই ৫০ লক্ষের বেশি স্বাক্ষর সংগ্রহ করেছি। সেটা এক কোটি হলে, তা নিয়ে আমরা রাজ্যের সাংবিধানিক প্রধানের দুয়ারে পৌঁছে দেব।’’
শুভেন্দু-সুকান্ত তাঁদের আন্দোলন নিয়ে যে দাবিই করুন না কেন, তা মানতে নারাজ জুনিয়র ডাক্তারেরা। আন্দোলনের অন্যতম মুখ আশফাকুল্লা নাইয়া বলেন, ‘‘রাজনৈতিক দিক থেকে ওঁরা বলতেই পারেন। কিন্তু আমাদের আন্দোলনের ব্যর্থতা বা সাফল্য, আমরা মনে করি, নির্যাতিতার জন্য বিচারের উপরই দাঁড়িয়ে। আমরা ময়দান ছাড়িনি। আমরা কিছু পদক্ষেপ করেছি, কিছু করব। তবে যত দিন না ন্যায়বিচার পাচ্ছি, আন্দোলন চালিয়ে যাব।’’ আন্দোলনে রাজনৈতিক যোগ দূরে রাখার পক্ষেই সওয়াল করলেন আরও আন্দোলনকারী জুনিয়র ডাক্তার দেবাশিস হালদার। তিনি বলেন, ‘‘আমরা কোনও দলীয় জ্ঞান শুনতে রাজি নই। আমরা বৈঠক করেছি আন্দোলনের স্বার্থে। আন্দোলনের চাপেই বৈঠকে বসতে মুখ্যমন্ত্রী বাধ্য হয়েছেন।’’