শুরু হয়েছিল গত বুধবার (১২ এপ্রিল)। তার পর থেকে টানা ৭ দিন ধারাবাহিক তাপপ্রবাহ চলছে কলকাতায়। তাপমাত্রা ৪০ ডিগ্রির আশপাশে। আবহাওয়া দফতরের পূর্বাঞ্চলীয় প্রধান সঞ্জীব বন্দ্যোপাধ্যায় জানিয়েছেন, ২০১৬ সালে এমনই পরিস্থিতির শিকার হয়েছিল শহর। সে বার এমন ভাবেই টানা ৮ দিন ৪০ ডিগ্রির আশপাশে ছিল তাপমাত্রা। ফলে প্রবল গরমের জ্বালা সইতে হয়েছিল কলকাতাবাসীকে।
অর্থাৎ, আগামী বৃহস্পতিবার পর্যন্ত এমন পরিস্থিতি চললেই ভেঙে যাবে ৭ বছর আগেকার সেই নজির। হাওয়া অফিসের রিপোর্ট বলছে, আগামিকাল এবং পরশুও এমনই তাপপ্রবাহ চলতে পারে কলকাতায়। ফলে টানা গরমের নতুন নজির সৃষ্টি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। বস্তুত, মঙ্গলবারও শহরের তাপমাত্রা ছিল ৪০ ডিগ্রির কাছাকাছি। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বেড়েছে রোদের তেজ।
সাধারণ ভাবে গ্রীষ্মকালে কলকাতা-সহ গাঙ্গেয় পশ্চিমবঙ্গের বাতাসে আর্দ্রতা থাকে যথেষ্ট পরিমাণে। ফলে অস্বস্তি এবং ঘাম থাকলেও, তাপপ্রবাহের শিকার হয় না কলকাতা এবং আশপাশের জেলাগুলি। কিন্তু ২০১৬ সালের মতোই এ বারও দেখা যাচ্ছে শুকনো গরম। কারণ বিশ্লেষণ করতে গিয়ে আবহবিদদের একাংশ জানাচ্ছেন, সাধারণত বছরের এই সময়টায় বঙ্গোপসাগরের তৈরি হওয়া ঘূর্ণাবর্তের প্রভাবে আকাশে মেঘ থাকে। বঙ্গোপসাগরের উপর যে উচ্চচাপ বলয় তৈরি হয়, তার জেরে দক্ষিণ দিক থেকে আর্দ্র হাওয়া ঢোকে দক্ষিণবঙ্গে। এই দখিনা বাতাস তাপমাত্রা কিছুটা কমিয়ে দেয়। কিন্তু এ বার দখিনা বাতাসের প্রভাব গাঙ্গেয় পশ্চিমবঙ্গে বেশ কম। কারণ উত্তর-পশ্চিম থেকে শুকনো এবং গরম হাওয়া এ বার বেশি পরিমাণ ঢুকছে বাংলায়।
অন্যান্য বছরও উত্তর-পশ্চিমের শুকনো হাওয়া বাংলায় ঢোকে। কিন্তু সাধারণ ভাবে তার প্রভাব বাঁকুড়া, পুরুলিয়া, পশ্চিম মেদিনীপুর, ঝাড়গ্রাম, বীরভূম এবং পশ্চিম বর্ধমানের মতো জেলায় সীমাবদ্ধ থাকে। কলকাতা এবং লাগোয়া জেলাগুলিতে শুকনো বাতাস ঢুকলেও তার পরিমাণ কম হয়। ফলে প্রভাব দীর্ঘস্থায়ী হয় না।
কিন্তু এ বছর সেই শুকনো গরম হাওয়ার পরিমাণ এত বেশি যে তা কলকাতা, হাওড়া, হুগলি, পূর্ব মেদিনীপুর এবং দুই ২৪ পরগনায় ‘জাঁকিয়ে বসেছে’। আর এই শুকনো হাওয়ার দাপটে বঙ্গোপসাগর থেকে আসা দখিনা বাতাস ঢুকতে পারছে না গাঙ্গেয় পশ্চিমবঙ্গে। ফলে কলকাতা-সহ দক্ষিণবঙ্গের আবহাওয়া আর্দ্রতা হারিয়েছে।
প্রবল গরমের মধ্যেও অবশ্য মঙ্গলবার আশার কথা শুনিয়েছে আলিপুর আবহাওয়া দফতর। পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে, আগামী শনিবার দুই ২৪ পরগনা, দুই মেদিনীপুর, পুরুলিয়া, ঝাড়গ্রাম, বাঁকুড়া, নদিয়ায় বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে। কিন্তু সেই তালিকায় নাম নেই কলকাতার। ফলে দহনজ্বালার অবসান কবে ঘটবে, তা নিয়ে সংশয় রয়ে গিয়েছে।