বেপরোয়া ভাবে গাড়ি চালানোয় রাশ টানতে এ বার একাধিক পদক্ষেপের ভাবনা রাজ্য সরকারের। রেষারেষি বন্ধের নির্দেশ দিল পরিবহণ দফতর। শুধু তা-ই নয়, বেপরোয়া ভাবে গাড়ি চালালে খুনের মামলা রুজু হবে। একই সঙ্গে বাসচালকদের কমিশন বন্ধের কথাও বললেন পরিবহণমন্ত্রী স্নেহাশিস চক্রবর্তী।
মঙ্গলবার সল্টলেকে দুই বাসের রেষারেষিতে মৃত্যু হয় চতুর্থ শ্রেণির পড়ুয়ার। সেই রেশ কাটতে না কাটতেই বৃহস্পতিবার কলকাতায় আরও দু’টি দুর্ঘটনা ঘটে। স্কুলপড়ুয়াদের নিয়ে জোড়া দুর্ঘটনা স্কুল বাস এবং পুলকারের। যা নিয়ে এ বার নড়েচড়ে বসল প্রশাসন। বৃহস্পতিবার বাস সংগঠন এবং ক্যাব সংগঠনগুলির সঙ্গে বৈঠক করেন পরিবহণমন্ত্রী। সেই বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন রাজ্যের পুরমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম, রাজ্য পুলিশের উচ্চআধিকারিকেরা।
বৈঠক শেষে স্নেহাশিস বলেন, ‘‘রেষারেষি বন্ধ করতেই হবে। জনবহুল জায়গায় রেষারেষি করলে চালকের বিরুদ্ধে আইনানুগ পদক্ষেপ করা হবে। যিনি বেপরোয়া ভাবে গাড়ি চালাবেন তাঁর বিরুদ্ধে খুনের মামলা রুজু হবে। এ বার চালক ঠিক করবেন, তিনি কী ভাবে গাড়ি চালাবেন।’’ একই সঙ্গে বাস চালকদের কমিশন বন্ধের কথাও বৃহস্পতিবারের বৈঠকে উঠেছে বলে জানান পরিবহণমন্ত্রী। তাঁর কথায়, ‘‘বাস সংগঠনগুলিকে কমিশন প্রথা তোলার কথা বলা হয়েছে। এই ভাবে বাস চালাতে দেওয়া হবে না। সংগঠনগুলিকে বদলাতে বলেছি।’’ একই কথা শোনা গেল রাজ্যের পুরমন্ত্রী তথা কলকাতর মেয়র ফিরহাদের গলাতেও। তিনি বলেন, ‘‘কমিশন প্রথার জন্যই বাস রেষারেষি করে। আমি বলেছি একটা এসওপি করতে, যেখানে কমিশন প্রথা থাকবে না।’’ তবে কমিশন প্রথা সংক্রান্ত সরকারের নির্দেশ নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে বাস সংগঠনগুলি। জয়েন্ট কাউন্সিল অফ বাস সিন্ডিকেটের সাধারণ সম্পাদক তপন বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘কমিশন শুধু কলকাতা এবং দুই ২৪ পরগনায় আছে। তা হলে অন্য জায়গায় এক্সিডেন্ট কেন হবে?’’ তিনি মনে করেন, যৌনশিক্ষা যদি বাধ্যতামূলক হয়, তবে ট্র্যাফিক শিক্ষাও হওয়া উচিত।
দুর্ঘটনা এড়াতে ট্র্যাফিক আইন কঠোর ভাবে মানার কথা বলেছেন পরিবহণমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘‘আইন অমান্য করলে এ বার কড়া পদক্ষেপ নেওয়া হবে। অনেক প্রস্তাব পেয়েছি। সেগুলো নিয়ে নির্দেশিকা দেবে সরকার, সেটা না মানলে কড়া পদক্ষেপ। আয় করার জন্য বেপরোয়া ভাবে বাস চালানো যাবে না। মালিককেও নজর রাখতে হবে বিষয়টির উপর। এই জায়গায় সরকার কড়া হবে। ট্র্যাফিক আইন ভাঙলেই দুর্ঘটনা হয়।’’ হেলমেট ছাড়া বাইক চালানো, চালকের বদলে খালাসির উপর গাড়ি চালোনোর দায়িত্ব দেওয়া, মদ্যপান করে গাড়ি চালানোর মতো ঘটনা আটকাতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ করা হবে বলেও জানান পরিবহণমন্ত্রী।
পর পর স্কুলপড়ুয়া বহনকারী যানগুলির দুর্ঘটনা এড়াতে কিছু পদক্ষেপের ভাবনা রয়েছে সরকারের। ফিরহাদের কথায়, ‘‘সমস্ত স্কুলের সামনে রেলিং বসবে। পুলিশ এখন গার্ডরেল দেবে।’’ শুধু তা-ই নয়, একসঙ্গে সব স্কুলের বাচ্চাকে যাতে ছাড়া না হয়, সে দিকেও নজর দেওয়ার কথা বলেছেন পুরমন্ত্রী। এ ছাড়াও ‘সেভ ড্রাইভ সেফ লাইভ’ কর্মসূচির উপর জোর দেওয়া থেকে সচেতনতা বৃদ্ধি করার নির্দেশও দিয়েছেন পরিবহণ দফতরকে।