রাতে মহিলাদের কর্মস্থল সংক্রান্ত ‘বিতর্কিত’ বিজ্ঞপ্তি মুছে ফেলতে হচ্ছে রাজ্য সরকারকে। আরজি করের ঘটনার পর মহিলাদের রাতের শিফ্টে কাজ যতটা সম্ভব কমাতে একটি বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেছিল রাজ্য। তা নিয়ে বিতর্কও কম হয়নি। বিভিন্ন মহলে সমালোচিত হয়েছে ওই বিজ্ঞপ্তি। ‘বিতর্কিত’ ওই বিজ্ঞপ্তির গ্রহণযোগ্যতা নিয়েই এ বার প্রশ্ন তুলে দিলেন সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি ডিওয়াই চন্দ্রচূড়। কড়া প্রশ্নের মুখে পড়তে হল রাজ্যকে। কী ভাবে এই বিজ্ঞপ্তি জারি করল রাজ্য, জানতে চাইলেন প্রধান বিচারপতি। শেষ পর্যন্ত সুপ্রিম কোর্টের প্রশ্নের মুখে বিজ্ঞপ্তির ওই ‘বিতর্কিত’ অংশ মুছে ফেলতে হচ্ছে রাজ্য সরকারকে।
রাজ্যকে ওই বিজ্ঞপ্তি সংশোধন করার জন্য নির্দেশ দিয়েছে শীর্ষ আদালত। প্রধান বিচারপতি ডিওয়াই চন্দ্রচূড়ের নির্দেশ, রাজ্যকে ওই বিজ্ঞপ্তি সংশোধন করতে হবে। তাঁর মন্তব্য, “নিরাপত্তা দেওয়ার দায়িত্ব আপনাদের। মহিলারা রাতে কাজ করতে পারবেন না, এ কথা বলতে পারেন না।” রাজ্য সরকারের জারি করা ওই বিজ্ঞপ্তির যৌক্তিকতা নিয়েও প্রশ্ন প্রধান বিচারপতির। তিনি বলেন, “বিমান পরিষেবা, সেনায় অনেক মহিলা রাতে কাজ করেন। ফলে এই বিজ্ঞপ্তি কেন?”
মঙ্গলবার শুনানির সময় এক আইনজীবীই এই বিষয়টি নিয়ে আদালতের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। সঙ্গে সঙ্গে প্রধান বিচারপতির প্রশ্ন, “এটি কী ভাবে হতে পারে? মহিলারা এই ধরনের কোনও ছাড় চান না। তাঁরা চান সমান সুযোগ। মহিলা ডাক্তারেরা সব পরিস্থিতিতে কাজ করতে চান। তাঁদের সব পরিস্থিতিতে কাজ করা উচিত। রাজ্যকে এটি সুনিশ্চিত করতে হবে।” প্রধান বিচারপতির এই নির্দেশের পর রাজ্যের তরফেও আইনজীবী কপিল সিব্বল আশ্বস্ত করেন, বিজ্ঞপ্তির ওই অংশটুকু মুছে দেওয়া হবে। ওই সরকারি বিজ্ঞপ্তির পাঁচ ও ছয় নম্বর অংশ নিয়েই মূলত আপত্তি ওঠে এজলাসে। সেই অংশটুকু মুছে ফেলা হবে বলে জানান সিব্বল।
সুপ্রিম কোর্টের এই নির্দেশকে স্বাগত জানিয়েছেন আন্দোলনরত মহিলা ডাক্তারেরা। আরজি করের জুনিয়র রেসিডেন্ট ডাক্তার রিয়া বেরা বলেন, “আমার সঙ্গে যে ছেলেরা পড়াশোনা করছেন, তাঁরা সমান পড়াশোনা করে এসেছেন। তা হলে কাজের ক্ষেত্রে কেন আমরা সমান সুযোগ পাব না? আমরা তো খাঁচার পাখি নই।”
উল্লেখ্য, আরজি কর-কাণ্ডের পর গত অগস্টে রাজ্য সরকারের তরফে মহিলাদের নিরাপত্তা সংক্রান্ত বেশ কিছু পদক্ষেপ করা হয়েছিল। মুখ্যমন্ত্রীর মুখ্য উপদেষ্টা আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায় সাংবাদিক বৈঠক করে জানিয়েছিলেন, কর্মস্থলে মহিলাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্যই তাঁরা এ বিষয়ে এই উদ্য়োগী হয়েছেন। মহিলা নিরাপত্তার জন্য রাজ্যের দেওয়া ওই ১৭ দফা নির্দেশিকার একটিতে বলা হয়েছিল, যেখানে এবং যত দূর সম্ভব মহিলাদের রাতের শিফ্ট থেকে অব্যাহতি দেওয়ার চেষ্টা করা হবে।
রাজ্যের ওই পদক্ষেপগুলির মধ্যে একটি ছিল, সমস্ত হাসপাতালে মহিলাদের জন্য পৃথক বিশ্রামকক্ষ, শৌচালয় এবং প্রতিটি তলায় জলের বন্দোবস্ত করা। মঙ্গলবার শুনানির সময় প্রধান বিচারপতি চন্দ্রচূড় রাজ্যের আইনজীবীকে জানিয়েছেন, মহিলা ডাক্তারদের বিশ্রামকক্ষে বায়োমেট্রিক ব্যবস্থা রাখতে হবে।