বিধানসভা নির্বাচনে আশানুরূপ ফল না-হওয়ার পরে বাংলায় বিজেপির কোর কমিটি গঠন করা হয়েছিল বড় আকারে। কিন্তু সেই কমিটি কতটা কার্যকর, কতটা পরিপক্ক তা নিয়ে প্রশ্ন উঠল দলের অন্দরেই। প্রশ্ন তুললেন স্বয়ং সর্বভারতীয় সভাপতি জেপি নড্ডা। শনিবার নিউ টাউনের একটি হোটেলে রাজ্য বিজেপির ওই শীর্ষ কমিটির বৈঠক বসে। হাজির ছিলেন নড্ডা। সেখানেই তিনি কোর কমিটির সদস্যদের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। বিজেপি সূত্রে জানা গিয়েছে, কারও নাম না-করলেও এই সদস্যরা যাতে শুধুই প্রস্তাব না-দিয়ে কাজও করেন, সেই নির্দেশ দিয়েছেন নড্ডা।
গত বছর পুজোর পরে পরেই রাজ্য দলের কোর কমিটি তৈরি করে দিয়েছিলেন নড্ডা। রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার, বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী ছাড়াও রাজ্য কমিটির অনেক পদাধিকারী তাতে জায়গা পান। ২০ জনের সেই কমিটিতে রয়েছে অভিনেতা মিঠুন চক্রবর্তী থেকে প্রাক্তন রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষও। কেন্দ্রীয় মন্ত্রী সুভাষ সরকার আগে থেকেই এই কমিটিতে ছিলেন। ২০২১ সালের ১৭ অক্টোবর ঘোষিত নতুন কমিটিতে জায়গা পান বাংলা থেকে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী হওয়া নিশীথ প্রামাণিক, শান্তনু ঠাকুর এবং জন বার্লা। বিজেপি সূত্রে জানা গিয়েছে, শনিবারের বৈঠক গরহাজির ছিলেন শুভেন্দু। ছিলেন না দুই মন্ত্রী নিশীথ এবং বার্লাও।
উত্তরবঙ্গের দুই মন্ত্রী আসতে না পারা নিয়ে ততটা আলোচনা না-হলেও শুভেন্দুর অনুপস্থিতি নিয়ে বিস্তর জল্পনা তৈরি হয়েছে গেরুয়া শিবিরে। কারণ, ওই বৈঠকের আগেই নড্ডার সায়েন্স সিটি প্রেক্ষাগৃহের কর্মসূচিতে ছিলেন শুভেন্দু। বক্তৃতাও করেন। তাঁর বিধানসভা এলাকা নন্দীগ্রামে অধিকাংশ পঞ্চায়েত বিজেপির দখলে যাওয়ার প্রসঙ্গে টেনে শুভেন্দু সকলকেই জিতে দেখাতে হবে বলে মন্তব্য করেন বলেও জানা গিয়েছে। কিন্তু অন্য কর্মসূচি থাকায় কোর কমিটির বৈঠকে থাকবেন না বলে আগেই নড্ডা এবং সুকান্তকে তিনি জানিয়েছিলেন বলে বিজেপি সূত্রে জানা গিয়েছে। যদিও দলের অনেকেই প্রশ্ন তুলছেন, এমন গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক থাকা সত্ত্বেও অন্য কর্মসূচি কেন রাখলেন শুভেন্দু? তাঁর অনুগামীরা বলছেন, অনেক আগে থাকতেই একটি গুরুত্বপূর্ণ কাজ ঠিক ছিল শুভেন্দুর। সেটা নড্ডার সফর ঠিক হওয়ার আগেই। সেই কারণেই তিনি বৈঠকে থাকতে পারেননি। তবে রাজ্য বিজেপির অন্য একটি মহলের দাবি, বেশির ভাগ বৈঠকেই থাকেন না বিরোধী দলনেতা। অতীতেও বারংবার এটা দেখা গিয়েছে। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের উপস্থিতিতে কোনও বৈঠক থাকলে তাতে কামাই না-করলেও রাজ্য স্তরের অনেক বৈঠকেই অন্য কর্মসূচির কথা বলে গরহাজির থাকেন শুভেন্দু।
শনিবারের বৈঠকে হাজির না থাকলেও রবিবার ওই হোটেলেই দলের সব সাংসদ ও বিধায়কদের নিয়ে নড্ডার বৈঠকে ছিলেন শুভেন্দু। তবে সেখানেও হাজিরা একশো শতাংশ ছিল না। বিজেপি সূত্রে জানা গিয়েছে, রবিবারের বৈঠকেও নড্ডার বক্তব্যে সমালোচনার সুর ছিল। রবিবার শুভেন্দু বিধায়কদের লড়াইয়ের প্রশংসা করার পাশাপাশি রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে কিছু অভিযোগ তোলেন নড্ডার সামনে। রাজ্যে বিভিন্ন প্রশাসনিক কাজে বিজেপি বিধায়কদের গুরুত্ব দেওয়া হয় না বলেও অভিযোগ তোলেন। পঞ্চায়েত নির্বাচনকে কেন্দ্র করে তৃণমূলের সন্ত্রাসের অভিযোগও তোলেন।
বৈঠকের একেবারে শেষে বক্তৃতা করেন নড্ডা। তিনি সেখানে শাসকের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসের অভিযোগ নিয়েও কথা বলেন। সাংসদ, বিধায়কদের মাথা ঠান্ডা রেখে কাজের পরামর্শ দেওয়ার পাশাপাশি সাংগঠনিক ক্ষেত্রে আরও বেশি করে অংশগ্রহণ করতে হবে বলে জানান। সেই সঙ্গে এটাও বলেন যে, সন্ত্রাস হবে, আক্রমণ হবে, অনেকের প্রাণ যাবে এ সব জেনেই কাজ করতে হবে। আগামী লোকসভা নির্বাচনের আগে দলকে পূর্ণ শক্তি নিয়ে ময়দানে নামতে হবে জানিয়ে তিনি সব জনপ্রতিনিধিদের আরও বেশি করে সক্রিয় হওয়ার নির্দেশ দেন।
শনি ও রবিবার দু’টি বৈঠকেই মূল বক্তা ছিলেন নড্ডা। রবিবার নড্ডা, শুভেন্দু ছাড়াও বক্তৃতা করেন সুকান্ত। তবে দু’দিনের বৈঠকেই উল্লেখযোগ্য ভাবে নীরব ছিলেন দিলীপ। দলীয় সব পদ চলে গেলেও মেদিনীপুরের সাংসদ দিলীপ এখনও রাজ্যের কোর কমিটির সদস্য। কিন্তু শনিবারের বৈঠকে তিনি একটিও শব্দ উচ্চারণ করেননি বলে বিজেপি সূত্রে জানা গিয়েছে। একই ভাবে পদ হারানোর পরে সর্বভারতীয় সভাপতির সঙ্গে সাংসদ হিসাবে প্রথম বৈঠকে রবিবারও চুপই ছিলেন দিলীপ।