দেশ জুড়ে এক দিনে বাতিল হল বিমানসংস্থা ইন্ডিগোর ২০০-রও বেশি উড়ান! বদলানো হল একের পর এক বিমানের সময়সূচি। যার জেরে দিল্লি, মুম্বই, বেঙ্গালুরুর মতো দেশের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ বিমানবন্দরে ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করতে হল যাত্রীদের। বুধবার সকাল থেকে এমনটাই ঘটেছে বলে সংশ্লিষ্ট বিমানসংস্থা জানিয়েছে। অনভিপ্রেত এই ঘটনার জন্য যাত্রীদের কাছে ক্ষমাও চেয়ে নিয়েছেন কর্তৃপক্ষ।
এখানেই শেষ নয়! গোটা নভেম্বর মাসের হিসাব ধরলে দেখা যাবে, ইন্ডিগোর বাতিল হওয়া উড়ানের সংখ্যা ১,২৩২। গত শনিবারই কলকাতা আসা-যাওয়ার ১০টি উড়ান বাতিল করেছে ইন্ডিগো। কেন এই চরম অব্যবস্থা— তা জানতে সংস্থার কাছে রিপোর্টও চেয়েছে ভারতের বিমান নিয়ন্ত্রক সংস্থা ডিজিসিএ। গোটা ঘটনার তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। পাশাপাশি, কী ভাবে যাত্রীদের ভোগান্তি কমানো যায়, সেই চেষ্টাও করা হচ্ছে।
প্রতি দিন ২,২০০-টিরও বেশি উড়ান পরিচালনা করে ইন্ডিগো। কিন্তু সরকারি তথ্য বলছে, মঙ্গলবার থেকে বিমানসংস্থাটির ঠিকমতো পরিষেবা প্রদানের হার মাত্র ৩৫ শতাংশে নেমে এসেছে, যা সাম্প্রতিক অতীতে কখনও হয়নি। মঙ্গলবার ১,৪০০-রও বেশি উড়ানের সময়সূচিতে রদবদল করতে হয়েছে ইন্ডিগো-কে। বুধবারও পরিস্থিতি বদলায়নি। বরং দিল্লি, মুম্বই, বেঙ্গালুরু এবং হায়দরাবাদের মতো দেশের নানা বিমানবন্দরে বিকেল পর্যন্ত প্রায় ২০০টি উড়ান বাতিল হওয়ার খবর পাওয়া গিয়েছে। যার জেরে ভোগান্তিতে পড়েছেন যাত্রীরা।
ইতিমধ্যেই বিবৃতি দিয়ে যাত্রীদের কাছে ক্ষমা চেয়ে নিয়েছে ইন্ডিগো। বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘‘আমরা স্বীকার করছি যে গত দু’দিন ধরে ইন্ডিগোর কার্যক্রম উল্লেখযোগ্য ভাবে ব্যাহত হয়েছে। আমরা আমাদের গ্রাহকদের কাছে এই অসুবিধার জন্য আন্তরিক ভাবে ক্ষমা চাইছি। প্রযুক্তিগত ত্রুটি, শীতকালীন সময়সূচি পরিবর্তন, প্রতিকূল আবহাওয়া, বিমান ব্যবস্থায় ক্রমবর্ধমান যানজট এবং বিমানকর্মীদের কাজের সংশোধিত সময়সূচির মতো নানা অপ্রত্যাশিত কারণে আমাদের পরিষেবার উপর এমন নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে।’’
উল্লেখ্য, গত মাসেই সংশোধন করা হয়েছে বিমানকর্মীদের কাজের সময়সূচি বা ফ্লাইট ডিউটি টাইম লিমিটেশন (এফডিটিএল)। নতুন নিয়ম অনুযায়ী, একজন বিমানকর্মী দিনে আট ঘণ্টা, সপ্তাহে ৩৫ ঘণ্টা, মাসে ১২৫ ঘণ্টা এবং বছরে সর্বোচ্চ ১,০০০ ঘণ্টা কাজ করবেন। সঙ্গে বিশ্রামের জন্যও বাধ্যতামূলক ভাবে নির্দিষ্ট সময় রাখতে হবে। দিনে কমপক্ষে ১০ ঘণ্টা বিশ্রামের সুযোগ থাকবে, যাতে পাইলট এবং কেবিন ক্রুরা সকলে পর্যাপ্ত বিশ্রাম পান। এতে কাজের সময় পাইলটদের ক্লান্তি কিংবা অসাবধানতায় বড়সড় বিপদ ঘটার ঝুঁকি কমবে। তবে ইন্ডিগো সূত্রে খবর, এর জেরেই আপাতত দিনের কোনও এক নির্দিষ্ট সময়ে সংস্থার কর্মীসংখ্যায় টান পড়ছে। তার উপর যাত্রীদের ভিড় বেড়ে গেলে সেই বাড়তি চাপও নিতে হচ্ছে কর্তব্যরত কর্মীদের। সূত্রের খবর, পাইলট এবং পর্যাপ্ত সংখ্যক কেবিন ক্রু না থাকায় অনেক উড়ান বাতিল করতে হচ্ছে। কখনও আবার বদলাতে হচ্ছে সময়সূচি।
ইন্ডিগো বিবৃতিতে আরও জানিয়েছে, গ্রাহকদের যাতে আর অসুবিধায় না পড়তে হয় এবং যাতে পরিস্থিতি দ্রুত স্বাভাবিক হয়, সে জন্য সংস্থার তরফে সব রকম চেষ্টা করা হচ্ছে। ভোগান্তিতে পড়া যাত্রীদের তাঁদের গন্তব্যে পৌঁছে দেওয়ার জন্য বিকল্প ব্যবস্থাও করা হচ্ছে বিমান সংস্থার তরফে।

