পঞ্চম থেকে অষ্টম শ্রেণীতে ১৪৭০০ শূন্যপদের জন্য ২০১৬ সালে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে রাজ্যের স্কুল সার্ভিস কমিশন। এসএলএসটি আপার প্রাইমারির নিয়োগ প্রক্রিয়া জন্য পরীক্ষা হয় ওই বছরই। ২০১৭ সালে প্রথম মেধা তালিকা প্রকাশ করে স্কুল সার্ভিস কমিশন।
পঞ্চম থেকে অষ্টম শ্রেণীর শিক্ষক নিয়োগের জন্য একাধিক জটিলতা তৈরি হয়। বিচারপতি মৌসুমী ভট্টাচার্য সম্পূর্ণ প্যানেল বাতিল করার নির্দেশ দিয়েছিলেন। মামলা চলে যায় বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের এজেলাসে । মামলাকারীদের পক্ষ থেকে লিস্ট বাতিলের আবেদন জানানো হয়। প্রাক্তন বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায় সেই আবেদন খারিজ করে দেন পাশাপাশি তিনি নির্দেশ দেন মামলাকারীরা ব্যক্তিগতভাবে অভিযোগ জানাতে পারবেন স্কুল সার্ভিস কমিশনের কাছে। এরপরে মামলা চলে আসে, প্রাক্তন বিচারপতি সুব্রত তালুকদারের এজলাসে তিনি নির্দেশ দিয়েছিলেন কলকাতা হাইকোর্টের নজরদারিতেই হবে নিয়োগ প্রক্রিয়া। পাশে আদালতের নির্দেশ ছাড়া কোন নিয়োগ প্রক্রিয়া করতে পারবেনা স্কুল সার্ভিস কমিশন। তারপরে মামলা চলে যায় বিচারপতি সৌমেন সেনের এজলাস। বিচারপতি সেন চূড়ান্ত প্যানেল প্রকাশ করার নির্দেশ দিয়েছিলেন। কিন্তু ব্যক্তিগত কারণে পরবর্তী সময়ে তিনি মামলা থেকে সরে দাঁড়ালেন।
কলকাতা হাইকোর্টের একাধিক বিচারপতির এজ্লাস ঘুরে মামলা যায় বিচারপতি তপব্রত চক্রবর্তী ও বিচারপতি পার্থসারথি চট্টোপাধ্যায়ের এজলাসে। মামলার শুনানিতে যে বিষয়গুলি উঠে এসেছে তাহলো স্কুল সার্ভিস কমিশন যে মেধা তালিকা প্রকাশ করেছে তাতে একাধিক অসংগতি প্রকাশ পেয়েছে। সেখানে বিভিন্ন অসংগতির বিষয়টি যেমন একাডেমিক মার্কস বাড়ানো, ও এম আর কারচুপি, প্রশিক্ষণহীন প্রার্থীদের মেধাতালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা। সর্বোপরি টেট পরীক্ষার প্রাপ্ত নম্বরের মূল্যায়ন এবং পুনর্মূল্যায়ন করা। ওএমআর শিট প্রকাশ না করার বিষয়গুলিও মামলার শুনানিতে উঠে আসে।
বিচারপতি তপব্রত চক্রবর্তী ডিভিশন বেঞ্চে মামলাকারীর পক্ষের আইনজীবী আশীষ কুমার চৌধুরী আদালতে আগেই জানিয়েছেন, বহু চাকরি প্রার্থী তারা স্কুল সার্ভিস কমিশনের যে প্রথম প্যানেল প্রকাশিত হয়েছিল তাতে তারা অন্তর্ভুক্ত ছিলেন। অথচ চূড়ান্ত প্যানেল প্রকাশের পর দেখা যায় প্রথম প্যানেলে যাদের নাম ছিল তারা অধিকাংশই বাদ পড়ে গিয়েছেন বলে অভিযোগ। প্রার্থীদের অন্ধকারে রেখে টেট (TET) এর প্রাপ্ত নম্বর বার বার মূল্যায়ন করে যা নিয়োগ সংক্রান্ত আইন বিরোধী । অথচ এই পুনর্মূল্যায়নের তথ্য স্কুল সার্ভিস কমিশন আজও প্রকাশ করতে পারেনি তাহলে কিসের ভিত্তিতে একজন যোগ্য প্রার্থীকে বাদ দেওয়া হল এবং ২০১৫ সালের টেট সার্টিফিকেটের মূল্যায়ন করা হলো। তাদের প্রাপ্ত নম্বর জানানো হলো না। তাহলে পরবর্তী নিয়োগ পরীক্ষায় কোন টেট সার্টিফিকেটের ভিত্তিতে অংশগ্রহণ করবে সেই বিষয়টি বিবেচনা করতে হবে।
আইনজীবী বিকাশ রঞ্জন ভট্টাচার্য শুনানির শেষ দিনে একটি হলফনামা জমা দিয়ে এই নিয়োগে চূড়ান্ত দুর্নীতি হয়েছে বলে অভিযোগ করেন। তিনি সেই হলফ নামায় দাবি করেছেন এই মামলার তদন্ত সিবিআইকে দিয়ে করাটাই বাঞ্ছনীয়। আইনজীবী বিকাশ রঞ্জন ভট্টাচার্যের এই আবেদনে র তীব্র বিরোধিতা করেন আইনজীবী কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি এই মামলায় বর্তমান মেধা তালিকা ভুক্তদের হয়ে আদালতে সওয়াল করছেন। বিকাশের হলফনামা তীব্র বিরোধিতা করতে দেখা যায় স্কুল সার্ভিস কমিশনের আইনজীবী ডক্টর সুতনু পাত্রকে।
বিচারপতি তপব্রত চক্রবর্তী ডিভিশন বেঞ্চ সমস্ত পক্ষের বক্তব্য শোনার পর তিনি মন্তব্য করেন”এইভাবে দীর্ঘদিন ধরে মামলার শুনানি চলতে পারে না তাই মামলার শুনানি আজই শেষ করা হলো এবং দ্রুত এই মামলার চূড়ান্ত রায় ঘোষণা করা হবে।