পশ্চিমবঙ্গের রেশন গণবণ্টন ব্যবস্থা স্ক্যাম-এর পর্যায়ে পৌঁছেছে : মুখ্যমন্ত্রীকে রাজ্যপালের সতর্কবার্তা

মুখ্যমন্ত্রীকে ১৪ পাতার চিঠি রাজ্যপালের

করোনা আবহেও পত্রযুদ্ধ অব্যাহত নবান্ন-রাজভবনের। এই পরিস্থিতিতেও রাজ্যের সাংবিধানিক প্রধানের ভূমিকাকে মোটেই ভাল চোখে দেখতে পারছে না রাজ্য প্রশাসন। ধৈর্যের বাঁধ ভেঙে যাওয়ায় বৃহস্পতিবার সন্ধেবেলা মুখ্যমন্ত্রী কড়া ভাষায় ৫ পাতার চিঠি লিখেছিলেন রাজ্যপাল জগদীপ ধনকড়কে। তা পাওয়ার কিছুক্ষণ পর রাজ্যপাল পালটা প্রতিক্রিয়ায় জানিয়েছিলেন, তাঁর যা বলার, তা বিস্তারিত আজ জানাবেন। আজ, পালটা আরও কড়া চিঠি লিখলেন রাজ্যপালকে। যার মূল কথা, একজন প্রশাসনিক প্রধান হয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মুসলিম তোষণ নির্লজ্জের পর্যায়ে পৌঁছে গিয়েছে।

রাজ্যপাল ১৪ পাতার দীর্ঘ চিঠিতে একাধিক বিষয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন। তার মধ্যে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য মুখ্যমন্ত্রীর বিরুদ্ধে সংখ্যলঘু তোষণের অভিযোগ। তাঁর মতে, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের এই পক্ষপাতিত্ব এতটাই বেশি যে নিজামুদ্দিন-মারকাজের ঘটনা নিয়ে জনৈক সাংবাদিকের প্রশ্নের উত্তরেও মেজাজ হারাচ্ছেন তিনি। সাংবাদিককে থামিয়ে বলছেন, ‘সাম্প্রদায়িক প্রশ্ন করবেন না।’ একজন প্রশাসনিক প্রধানের মুখে এসব অত্যন্ত দৃষ্টিকটূ বলে মনে করছেন জগদীপ ধনকড়। আর সেই ইস্যুতেই বারবার মু্খ্যমন্ত্রীর দিকে আঙুল তুলেছেন তাঁর চিঠিতে। তিনি এও লেখেন, ‘আপনি নিজের বিবেকের কথা শুনুন এবং রাষ্ট্রীয় বিধি মেনে চলুন। বাইরের জগতের দ্বারা প্রভাবিত না হয়ে নিজেকে আয়নার সামনে দাঁড় করান।’ নিঃসন্দেহে একজন মুখ্যমন্ত্রীর উদ্দেশে এ ধরনের বার্তা বেশ অবমাননাকর এবং তীব্র আক্রমণও বটে।

করোনা মোকাবিলায় রাজ্য সরকারের ভূমিকা নিয়ে মুখ্যমন্ত্রীকে এই চিঠিতে সরাসরি আক্রমণ করেছেন রাজ্যপাল। তিনি লিখেছেন, রাজ্যের স্বাস্থ্য ব্যবস্থা ক্রমাগত অবহেলিত হচ্ছে। হাসপাতালে COVID-19 পজিটিভ ধরা পড়ছে, অথচ সেসব ক্রমাগত চাপা দেওয়ার চেষ্টা চলছে। কখনও তা অস্বীকার করা হচ্ছে। যথাযথ সংখ্যায় নাগরিকদের করোনা পরীক্ষা হচ্ছে না, স্বাস্থ্যকর্মীদের পর্যাপ্ত পিপিই নেই, তাঁদের উপর হামলা চলছে। রাজ্যে সব ঠিক আছে, এই ভান পরবর্তী সময়ে আরও বড় বিপদের দিকে ঠেলে দিতে পারে। দীর্ঘ চিঠিতে তাঁর নিজের বক্তব্য ৩৭টি পয়েন্টে ভেঙে ভেঙে লিখেছেন জগদীপ ধনকড়। শুধু চিঠির বিষয়বস্তুই নয়, তাঁর শব্দচয়ন নিয়েও শুরু হয়েছে চর্চা। পেশায় আইনজীবী হিসেবে নিজের সেই বাকপটুত্ব, শব্দ প্রয়োগ সবটাই এই চিঠিতে তুলে ধরেছেন রাজ্যের সাংবিধানিক প্রধান। সবমিলিয়ে, ৫ পাতা চিঠির সঙ্গে ১৪ পাতার জবাবি চিঠির লড়াই একেবারে তুঙ্গে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.