সেনাকর্মী স্বামীর অবৈধ সম্পর্ক। প্রতিবাদে ধর্ণায় বসলো স্ত্রী। শনিবার সকাল থেকে এই ঘটনাকে ঘিরে তুমুল উত্তেজনা ছড়ায় বালুরঘাট ব্লকের চিঙ্গিশপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের দক্ষিণ চকআলম গ্রামে। স্ত্রীকে নির্যাতনের অভিযোগ তুলে এদিন সেনাকর্মী সোম মুর্মুর বিরুদ্ধে সরব হতেও দেখা যায় গ্রামবাসীদের। যাকে কেন্দ্র করেই এদিন দুপুরে উত্তপ্ত হয়ে ওঠে এলাকা। মারমুখী হয়ে ওঠেন ক্ষিপ্ত গ্রামবাসীরা। যদিও পরবর্তীতে পুলিশি হস্তক্ষেপে স্বাভাবিক হয়েছে পরিস্থিতি।
জানা যায়, ২০১৮ সালে কুমারগঞ্জের বটুন গ্রাম পঞ্চায়েতের বংশীপুর গ্রামের বাসিন্দা সোনমণি টুডুর মেজো মেয়ে মাম্পি টুডুর সাথে রেজেস্ট্রি করে বিয়ে হয় বালুরঘাট থানার চিঙ্গিশপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের চক আলম গ্রামের বাসিন্দা তথা সেনা বিভাগে কর্মরত সোম মুর্মুর সাথে। একবছর পরে আনুষ্ঠানিকভাবে তাদের বিয়েও হয়। অভিযোগ, এরপর থেকেই তার স্বামী অপর এক মহিলার সাথে সোশ্যাল মিডিয়ার দৌলতে প্রেমে জড়িয়ে পড়েন। বিষয়টি স্ত্রীর নজরে আসতেই শুরু হয় তার উপর অত্যাচার। গৃহবধূর অভিযোগ, প্রতিবাদ করলেই স্বামী তাকে মারধর করতো। যা নিয়ে ঐ নির্যাতিতা গৃহবধূ গ্রাম্য সালিশি সভায় অভিযোগ জানালে তাকে বাড়ি থেকে বের করে দেয় স্বামী সহ শ্বশুড় বাড়ির লোকেরা। এরপরই ওই গৃহবধূ সুবিচারের আশায় আইনের দ্বারস্থ হন।
নির্যাতনের লিখিত অভিযোগ জানানো হয় বালুরঘাট থানাতেও। এরপর আদালতে মামলা চলাকালীন সময়ে সেনাকর্মী স্বামী তাকে নিয়ে সংসার করার প্রতিশ্রুতি দেন পুলিশ ও আর্মি কমান্ডারের সামনে। সরকারি আধিকারিকদের সামনে স্বামীর দেওয়া প্রতিশ্রুতি হিসাবে মামলাটি তুলে নেন মাম্পি টুডু নামে ওই গৃহবধূ। এরপরেই ফের রণংদেহী মেজাজে ফেরেন ভারতীয় সেনাবাহিনীতে কর্মরত ওই যুবক তথা মহিলার স্বামী সোম মুর্মু। শুরু হয় আবারও মাম্পির উপর অত্যাচার। শুধু তাই নয় বাড়িতে ঢুকতেও বাধা দেয় ওই সেনাকর্মী ও তার বাড়ির লোকেরা। যার প্রতিবাদেই এদিন সকাল থেকে স্বামীর বাড়ির সামনে ধর্নায় বসেন ওই গৃহবধূ। বেলা বাড়তেই ওই গৃহবধূর উপর তার স্বামী ও শ্বশুড় বাড়ির লোকজনের নির্যাতনের অভিযোগ তুলে সরব হতে থাকেন প্রতিবেশীরাও। যে পরিস্থিতি ক্রমশঃ উত্তেজিত হতেই মারমুখী হয়ে ওঠেন গ্রামের বাসিন্দারা। যদিও পরবর্তীতে বালুরঘাট থানার পুলিশ পৌঁছে ওই গৃহবধূ কে তার স্বামীর হাতে তুলে দিয়ে পরিস্থিতি স্বাভাবিক করেন।
মাম্পি টুডু বলেন, রেজেস্ট্রি ও আনুষ্ঠানিক দুভাবেই তার সাথে বিয়ে হয়েছে সোম মুর্মুর। কিন্তু এরপরেও অপর এক মেয়ের সাথে অবৈধ সম্পর্ক তৈরি করে তার স্বামী। তাকে দেখিয়ে দেখিয়ে ভিডিও কলও করেন। যার প্রতিবাদ করাতেই তাকে বাড়ি থেকে বের করে দেয় শ্বশুর বাড়ির লোকেরা। মামলা করলেও স্বামীর ক্ষতি না হবার জন্য সকলের অনুরোধে মামলা তুলে নিয়েছেন। কিন্তু তারপরেও তাকে বাড়িতে ঢুকতে না দেওয়ায় ধর্নায় বসেছেন তিনি।
প্রতিবেশী স্বপ্না মুর্মু ও শ্যামলী মার্ডিরা বলেন, মেয়েটির উপর অকথ্য অত্যাচার করত তার স্বামী ও শ্বশুর বাড়ির লোকেরা। অন্য মেয়ের সাথে অবৈধ সম্পর্ক জড়িয়েছে তার স্বামী। প্রতিবাদ করায় তাকে বাড়িতে ঢুকতে বাধা দেয়। যদিও পুলিশ এসে পরিস্থিতি স্বাভাবিক করেছে। তারা চান মেয়েটি সুস্থভাবে তার স্বামীর সাথে সংসার করুক।
সেনাকর্মী স্বামী সোম মুর্মু বলেন, বাড়িতে তুলে নিয়েছেন স্ত্রীকে। সংসার করে দেখবেন আপাতত কিছুদিন।
গৃহবধূর মা সোনমণি মার্ডি বলেন, স্বামী হারা অবস্থায় মেজো মেয়েকে খুব কষ্টে বিয়ে দিয়েছেন। তিনি চান মেয়ে সুখে সংসার করুক। কিন্তু তাকে নানাভাবে অত্যাচার ও নির্যাতন চালাচ্ছে তার শ্বশুর বাড়ির লোকেরা।
ছেলের বাবা রবি মুর্মু বলেন, তারাও চান বউমাকে নিয়ে সুখে সংসার করুক ছেলে। কিন্তু উভয়েই নানা ঝামেলায় জড়িয়ে পড়ছে।