সাইকেল চেপে অফিস যেতে পেরোতে হয় প্রায় ১০ কিলোমিটার রাস্তা। সে কষ্ট লাঘব করতে নিজের উদ্যোগেই সৌরচালিত সাইকেল তৈরি করে ফেললেন নদিয়া জেলার করিমপুরের এক বাসিন্দা। তাঁর এই প্রচেষ্টাকে কুর্নিশ জানাচ্ছেন পরিবারের সদস্য থেকে পাড়াপড়শি-সহ স্থানীয় প্রশাসনের কর্তারা।
বাজারে ব্যাটারি বা সৌরচালিত সাইকেলের অভাব নেই। তবে তাতে দামের খোঁচাও কম নয়। মূলত খরচ বাঁচাতেই সৌরশক্তিচালিত সাইকেল তৈরির চিন্তা-ভাবনা শুরু হয়েছিল করিমপুরের কেচুয়াডাঙ্গার বাসিন্দা চন্দন বিশ্বাসের। পেশায় দলিল লেখক চন্দনকে প্রায় প্রতি দিনই রেজিস্ট্রি অফিসে যেতে হয়। নিজের সাইকেলে চেপে অফিসে যেতে পার করতে হত দীর্ঘ পথ। তবে ‘নতুন’ সাইকেলের দৌলতে তাঁর কায়িক শ্রম কিছুটা লাঘব হয়েছে। এ বার বাণিজ্যিক ভাবে এর উৎপাদন করতে চান তিনি। চন্দন বলেন, ‘‘এই সাইকেল তৈরিতে সব মিলিয়ে মোট ১ লক্ষ ১০ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। উপযুক্ত স্পনসর পেলে এ বার সোলার সাইকেল তৈরির কাজে হাত দিতে পারব। এমন সাইকেল তৈরির অনেক বরাত পেলে এর খরচও কমে যাবে। সাইকেলপিছু তা ৩০ হাজার টাকায় নেমে আসবে।’’
নিজের সাইকেলের সঙ্গে চন্দন বিশ্বাস।
—নিজস্ব চিত্র।
কেচুয়াডাঙ্গায় পথে এই সাইকেলে চেপে বার হলে তা দেখতে ভিড় করছেন পথচলতি মানুষজন থেকে আশপাশের দোকানদারেরা। চন্দন জানিয়েছেন, প্রথমে ব্যাটারির মাধ্যমে সাইকেল চালানোর ব্যবস্থা ছিল। তবে চার্জ দেওয়ার ঝক্কি এড়াতে নিজের পুরনো সাইকেলের মাথায় আস্ত একটা সোলার প্যানেল লাগিয়েছেন তিনি। যাতায়াতের পথেই সে সৌর প্যানেলের মাধ্যমে ব্যাটারি চার্জ হয়ে যায়। আলাদা করে চার্জ দেওয়ার প্রয়োজন হয় না। এ সাইকেলের গড় গতিবেগ প্রতি ঘণ্টায় ৩৫ কিলোমিটার। পুরোপুরি চার্জে টানা ৬০ কিলোমিটার পর্যন্ত চলতে পারে এ সাইকেল।
চন্দনের প্রচেষ্টায় খুশি স্ত্রী প্রণতি বিশ্বাস। তিনি বলেন, ‘‘এর আগে ব্যাটারি লাগানো সাইকেল ছিল। তবে তেমন সাইকেল তো অনেকেরই থাকে। মাথায় সোলার প্যানেল দেওয়া সাইকেল অন্য কারও নেই।’’ চন্দনের অফিসের সহকর্মী দুষ্মন্ত মণ্ডল বলেন, ‘‘পরিবেশবান্ধব তো বটেই, সেই সঙ্গে পেট্রোপণ্যের দাম যে ভাবে বেড়েছে, তাতে সোলার সাইকেল পকেট ফ্রেন্ডলিও বটে।’’ এই প্রচেষ্টা প্রশাসনেরও প্রশংসা কুড়িয়েছে। করিমপুর ১ নম্বর ব্লকের বিডিও অনুপম চক্রবর্তী বলেন, ‘‘এ ধরনের পরিবেশবান্ধব ব্যতিক্রমী উদ্যোগ প্রশংসার দাবি রাখে।’’