বাংলাদেশের অন্যতম সতীপীঠ চন্দ্রনাথ মন্দির বাঁচাতে সামাজিক মাধ্যমে শুরু হয়েছে প্রচার অভিযান। সম্প্রতি চন্দ্রনাথ মন্দিরের তীর্থযাত্রীদের ওপর ব্যাপক হামলা হয়। তাদের মারধর করা হয়।
চট্টগ্রামে সীতাকুন্ডের কাছে চন্দ্রনাথ পাহাড়ের উপরে অবস্থিত চন্দ্রনাথ মন্দির অন্যতম বিখ্যাত শক্তিপীঠ। সীতাকুণ্ড অপরূপ প্রাকৃতিক সৌর্ন্দয্যের লীলাভূমি। এখানকার সর্বোচ্চ পাহাড় চুড়ায় অবস্থিত চন্দ্রনাথ মন্দির। এখানে হিন্দু পবিত্র গ্রন্থ অনুসারে দেবী সতীর ডান হাতের ওপরের অংশ পড়েছিল।
এই মন্দিরে প্রতি বছর শিবরাত্রি তথা শিব চতুর্দশী তিথিতে বিশেষ পূজা হয়। এই পূজাকে কেন্দ্র করে সীতাকুণ্ডে বিশাল মেলা হয়। সীতাকুন্ড চন্দ্রনাথ পাহাড় এলাকায় বসবাসকারী হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা প্রতি বছর বাংলার ফাল্গুন মাসে (ইংরেজি ফেব্রুয়ারি, মার্চ) বড় ধরনের একটি মেলার আয়োজন করে। এই মেলায় বাংলাদেশ, ভারতসহ বিভিন্ন দেশ থেকে অসংখ্য সাধু-সন্ন্যাসী, নারী-পুরুষ যোগ দেন। মেলা দোল পূর্ণিমা পর্যন্ত থাকে। মেলা কমিটির হিসাব, প্রতি বছর পবিত্র এই তীর্থস্থানে ১৫ লক্ষ তীর্থযাত্রী আসেন।
এই মন্দির প্রাঙ্গণ ক্রমেই পর্যটনকেন্দ্র হয়ে ওঠায় হিন্দু ধর্মে বিশ্বাসীদের ভিড় দ্রুত বাড়ছে। নানাভাবে নষ্ট হচ্ছে সেখানকার পরিবেশ। এর জন্য তৈরি হয়েছে সতীপীঠ চন্দ্রনাথ মন্দির বাঁচাও (হোক কলরব) গ্রুপ। ফেসবুকের সেই গ্রুপে নয়ন চৌধুরী নামে এক ব্যক্তি লিখেছেন, “চন্দ্রনাথ তীর্থস্থান বাঁচান। এশিয়ার প্রাচীনতম এবং বাংলাদেশের সর্ববৃহৎ এই তীর্থক্ষেত্রে প্রতিনিয়ত ঘটে চলেছে যত অনিয়ম, দুর্নীতি। মন্দিরগুলোতে হচ্ছে যত অশ্রদ্ধা। বিরুপাক্ষ মন্দিরের দেওয়ালে স্পষ্ট ভাবে লেখা ‘জুতো নিয়ে উঠবেন না। পবিত্রতা বজায় রাখুন।’ অথচ বেশ কিছু টুরিস্ট মন্দিরে জুতো নিয়ে উঠে ছবি তোলে, মন্দিরের পিছনে জামা কাপড় বদলান, মন্দিরে সিগারেট খায়, খাওয়াদাওয়া করে, প্লাস্টিক, পলিথিন ছিটিয়ে পাহাড় নোংরা করে, পূজা চলাকালীন মন্দিরে গান-বাজনাসহ নানান অশ্লীল ও অনৈতিক কার্যকলাপ প্রতিদিন ঘটে চলেছে অথচ কর্তৃপক্ষ চুপ। মন্দিরের হাজর হাজার একর জায়গা সম্পূর্ণ বেদখল, অথচ কর্তৃপক্ষ চুপ। স্বয়ং ব্যাসদেবের ঐশ্বরিক শক্তিতে সৃষ্টি ব্যাসকুন্ড যেন এখন পার্কে পরিণত হয়েছে। এই প্রাচীন ও বৃহৎ তীর্থক্ষেত্র ধ্বংস হওয়া থেকে রক্ষা করা সকল সনাতনীর দায়িত্ব এবং কর্তব্য।
দায়িত্বরত কর্তৃপক্ষের আশা বাদ দিয়ে সীতাকুন্ডের স্থানীয় কিছু যুবক শেকড়ের টানে সম্পূর্ণ ব্যক্তিগত উদ্যোগে এই ধাম পরিচ্ছন্নতা ও রক্ষার উদ্যোগ নিয়েছে। স্থানীয় ৭/৮ জন যুবক বিরূপাক্ষ এবং চন্দ্রনাথ মন্দির পরিষ্কার ও মানুষদের সচেতন করতে প্রতি সপ্তাহে উঠে যায় চন্দ্রনাথে। কিন্তু এই স্বল্প লোকবলে চন্দ্রনাথ পাহাড় পরিষ্কার রাখার এই বিশাল কাজ করতে হিমশিম খেতে হচ্ছে তাঁদের। কিন্তু প্রচীন ও প্রসিদ্ধ এই তীর্থক্ষেত্র রক্ষায় স্থায়ী সমাধান করা উচিৎ। এই ধাম বাঁচাতে হলে সকল সনাতনীকে এগিয়ে আসতে হবে, দল মত নির্বিশেষে সবাইকে এক হয়ে রুখে দাঁড়াতে হবে। চন্দ্রনাথ তীর্থস্থান কোনওভাবে পর্যটনকেন্দ্র নয়।”
এই পোস্টে রাজীব দাস তাঁর মন্তব্যে লিখেছেন, “ঐতিহাসিক ও পবিত্র তীর্থস্থান সীতাকুণ্ড সাম্প্রতিক সময়ে সমস্যায় জর্জরিত। সমস্যা হচ্ছে তীর্থস্থানকে টুরিস্ট স্পষ্ট বানানোর চক্রান্তে। এই গ্রুপের সম্মানিত সদস্যদের প্রতি অনুরোধ, আপনারা জানাতে পারেন কিভাবে এই সমস্যা সমাধান করা যায় এবং আপনারা এই সমস্যা সমাধানে যে কোনও পদক্ষেপের সাথে থাকবেন কিনা। ভক্তরাই হলো তীর্থস্থানের প্রাণ। তাই আপনাদের নিয়ে এই তীর্থস্থান পবিত্র ও আশঙ্কামুক্ত করা হবে।”
এই পোস্টে ৫৭টি মন্তব্য এসেছে। সাধন দাস লিখেছেন, “আমাদের পবিত্র তীর্থস্থানকে রক্ষা করতে চট্রগ্রাম থেকে শুরু করে সারা বিশ্বে আন্দোলনের ডাক দিতে হবে।” রনি ধর লিখেছেন, “সীতাকুণ্ড স্প্রাইন কমিটির ব্যর্থতার উল্লেখ করে প্রধান ফটকের প্রবেশ মুখে ৩/৪জন সর্বক্ষণের রক্ষী বসানো, বিধর্মীদের প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা এবং এ সবে প্রশাসনের সহযোগিতার আবশ্যিকতার উল্লেখ করেছেন।”
শৈবা দাস লিখেছেন, “চন্দ্রনাথের অখণ্ড পবিত্রতা রক্ষার্থে যেকোনো পদক্ষেপের সাথে একাত্মতা প্রকাশ ও সাথে থাকার অঙ্গীকার করলাম। হর হর মহাদেব।” সজীব দাস কিছু পরিবর্তনের প্রয়োজনীয়তার উল্লেখ করে লিখেছেন, “চন্দ্রনাথ পাহাড় না বলে চন্দ্রনাথধাম বা চন্দ্রনাথমন্দির বলে সম্মোধন করতে হবে। আর চন্দ্রনাথ মন্দিরের এক অংশও যাতে খালি পড়ে না থাকে সেজন্য ছোট ছোট মন্দির তৈরি করে সব জায়গায় মহাদেবের মূর্তি বসিয়ে দিতে হবে।”
প্রভাস গুহ লিখেছেন, “হিন্দুদের পবিত্র তীর্থস্থান কোনও ব্যবসায়িক জায়গা নয় যে এখানে ব্যবসার জন্য পর্যটনকেন্দ্র হবে। এটা হিন্দুদের পবিত্র স্থান। এখানে শুধু হিন্দুদের যাওয়ার অনুমতি থাকবে। চক্রান্তকারীদের মানবন্ধন করে স্মরণ করিয়ে দেওয়া উচিৎ যে সীতাকুণ্ড তীর্থস্থান হিসেবে ছিল, আছে ও থাকবে। কোনও পার্ক হিসেবে নয়, একটা মানববন্ধনের ডাক দিন যাতে সব জাগ্রত হিন্দু প্রতিবাদ করতে পারে।”
প্রীতম তালুকদার লিখেছেন, “পাহাড়ে উঠার রাস্তার দু‘পাশে হনুমানজি এবং মহাদেবের মূর্তি গড়া উচিত।” ইমন দেবনাথ লিখেছেন, “যদি মনে করেন এই কমিটির উপর আপনি ভরসা করবেন তাহলে আপনি বোকার স্বর্গে আছেন। কারণ, প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী এই কমিটি চন্দ্রনাথের মতো একটা তীর্থস্থানকে অধর্মীয়, অনাচার ও ব্যাভিচারের দিকে ঠেলে দেওয়ার অন্যতম প্রধান মাথা হিসাবে কাজ করছে। শুধুমাত্র টাকার লোভে তারা নিজ ধর্মীয় স্থানকে অসুরের হাতে তুলে দিচ্ছে। সবথেকে বড় দোষ হলো এই স্রাইন কমিটির কার্যকর্তাদের।”
রায়হান রিয়াদের নামে বিফ বারবিকিউ পার্টি দেওয়ার উল্লেখ করে ছবি পোস্ট হয়েছে ইমন দেবনাথের এই পোস্টে। তার প্রেক্ষিতে ইমন বনিক লিখেছেন, “৩ বছর আগের কাহিনী দাদা এসব! কোনও লাভ হয়নি। অনেকে মনে করছে এসব ইতিমধ্যে হয়েছে। আগের চেয়েও অবস্থা বেশি খারাপ। ইতিমধ্যে একটি সংস্থা চন্দ্রনাথকে টুরিস্ট স্পট হিসেবে ঘোষণা করেছে।
পলাশ ধর লিখেছেন, “প্রবর্তক সংঘের মতো শ্রীচন্দ্রনাথ ধামের সম্পূর্ণ দায়িত্ব ইসকনকে দেওয়া হোক। ভবিষ্যতে কোনো বির্ধমী যাতে প্রবেশ করার সাহস না পায়। স্রাইন কমিটি এতো বছরে যখন এ বিষয়ে কোনও সাহসী ও সময়োপযোগী সিদ্ধান্ত নিতে পারেনি ভবিষ্যতে ও পারবে না।”