দলাই লামার জন্মদিনে মোদীর শুভেচ্ছাবার্তায় চিনের গোসা! সরকারি ভাবে প্রতিবাদও জানাল বেজিং

প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী রবিবার দলাই লামাকে জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানানোয় অসন্তুষ্ট চিন! সোমবার এ বিষয়ে নিজেদের অবস্থান স্পষ্ট করে দিয়েছে বেজিং। বৌদ্ধ ধর্মগুরু দলাই লামার উত্তরসূরি বাছাই ঘিরে সম্প্রতি বিতর্ক ছড়িয়েছে। চিন জানিয়ে দিয়েছে, তাদের অনুমোদন ছাড়া পঞ্চদশ দলাই লামার মনোনয়ন হবে না। এ অবস্থায় মোদী বর্তমান দলাই লামা তেনজ়িং গ্যাৎসোকে জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানানোয় আপত্তি জানিয়েছে বেজিং।

শুধু মোদীর শুভেচ্ছাবার্তাই নয়, চতুর্দশ দলাই লামা গ্যাৎসোর জন্মদিনের অনুষ্ঠানে সশরীরে হাজির ছিলেন দুই কেন্দ্রীয় মন্ত্রী কিরেন রিজিজু এবং রাজীবরঞ্জন সিংহ। এ ছাড়া অরুণাচল প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী পেমা খান্ডু, সিকিমের মন্ত্রী সোনম লামা এবং হলিউড অভিনেতা রিচার্ড গেরেও উপস্থিত ছিলেন হিমাচল প্রদেশের ধর্মশালায় দলাই লামার জন্মদিনের অনুষ্ঠানে। বর্তমান দলাই লামার জন্মদিনে ভারতের এই ভূমিকা যে পছন্দ করছে না বেজিং, তা সোমবার স্পষ্ট করে দিয়েছে চিনা বিদেশ মন্ত্রক। এই ঘটনাগুলিতে চিনের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপের চেষ্টা বলেই ব্যাখ্যা করছে বেজিং।

সোমবার এ বিষয়ে এক প্রশ্নের উত্তরে চিনা বিদেশ মন্ত্রকের মুখপাত্র মাও নিং বলেন, “চতুর্দশ দলাই লামা রাজনৈতিক ভাবে নির্বাসিত। তিনি দীর্ঘদিন ধরে চিন-বিরোধী বিচ্ছন্নতাবাদী কার্যকলাপে যুক্ত। ধর্মের আড়ালে তিনি জিজ়াং (তিব্বতকে এই নামে ডাকে চিন)-কে চিন থেকে আলাদা করতে চান। এ কথা সকলেই জানেন।” চিনা বিদেশ মন্ত্রকের মুখপাত্রের দাবি, তিব্বত সম্পর্কিত বিষয়গুলির সংবেদনশীলতা নিয়ে ভারতের সম্পূর্ণ সচেতন থাকা উচিত। তিনি বলেন, “চতুর্দশ দলাই লামার চিন-বিরোধী এবং বিচ্ছিন্নতাবাদী স্বভাবকে স্পষ্ট ভাবে দেখা উচিত (ভারতের)। জিজ়াং সংক্রান্ত বিষয়গুলি নিয়ে ভারত চিনকে যে কথা দিয়েছে, তা তাদের সম্মান করা উচিত। এ বিষয়ে বিচক্ষণতার সঙ্গে কাজ করা উচিত এবং চিনের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ করার জন্য এই বিষয়গুলির ব্যবহার বন্ধ করা উচিত। ভারতের এই কাজের প্রতিবাদ জানাচ্ছে চিন।”

বস্তুত, রবিবার দলাই লামাকে জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানিয়ে রবিবার সমাজমাধ্যমে পোস্ট করেন মোদী। সেখানে দলাই লামার সুস্বাস্থ্য এবং দীর্ঘায়ু কামনা করে তিনি লেখেন, দলাই লামা ভালবাসা, দয়া, ধৈর্য এবং নৈতিক শৃঙ্খলার প্রতীক। মোদীর এই পোস্ট এবং তার পরে ধর্মশালায় দলাই লামার জন্মদিনের অনুষ্ঠানে মন্ত্রীদের উপস্থিতি নিয়ে আপত্তি জানাল চিন।

প্রায় ছ’দশক আগে চিন অধিকৃত তিব্বত থেকে গোপনে ভারতে এসে আশ্রয় নিয়েছিলেন চতুর্দশ দলাই লামা গ্যাৎসো। তখন তাঁর বয়স মাত্র ২৪! তাঁর সঙ্গেই চিন-অধিকৃত তিব্বত ছেড়ে পালিয়ে এসেছিলেন তাঁর পরিজন ও অনুগামীরা। হিমাচল প্রদেশের ধর্মশালা-সহ ভারতের বিভিন্ন এলাকায় ঠাঁই পেয়েছিলেন কয়েক হাজার তিব্বতি বৌদ্ধ। ২০১৯ সালে সংবাদ সংস্থা রয়টার্সকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বর্তমান দলাই লামা গ্যাৎসো জানিয়েছিলেন, চিন বা চিন-অধিকৃত তিব্বত নয়, তাঁর উত্তরসূরি মনোনীত হবেন ভারত থেকেই।

তার পরেই বৌদ্ধধর্মের সর্বোচ্চ গুরুর কুর্সি ঘিরে তৎপরতা বাড়িয়েছে একদলীয় চিনের কমিউনিস্ট শাসকবর্গ। সম্প্রতি চিনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং তিব্বতি বৌদ্ধদের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ধর্মগুরু পাঞ্চেন লামার সঙ্গে বৈঠক করেছেন। দলাই লামাপন্থীদের কোণঠাসা করতেই এই কৌশল বলে মনে করছেন অনেকে। সম্প্রতি জিনপিং প্রশাসন জানিয়েছে, চিনের অনুমোদন ছাড়া পঞ্চদশ দলাই লামার মনোনয়ন হবে না। যদিও ভারতে স্বেচ্ছানির্বাসিত সর্বোচ্চ বৌদ্ধ ধর্মগুরু জানিয়েছেন, ‘‘পরবর্তী দলাই লামার মনোননের দায়িত্ব গাহদেন ফোড্রাং ট্রাস্টের। এই প্রক্রিয়ায় বাইরের কাউকেই হস্তক্ষেপ করতে দেওয়া হবে না।’’ এই বিতর্কের আবহে গত সপ্তাহে ভারতীয় বিদেশ মন্ত্রকের মুখপাত্র রণধীর জয়সওয়াল জানিয়ে দেন, কারও ধর্মীয় বিশ্বাস বা আচরণের বিষয়ে কথা বলে না ভারত। শুধু তা-ই নয়, এই বিষয়ে ভারত কোনও অবস্থানও নেয় না বলে জানান রণধীর। তিনি বলেন, বলেন, ‘‘আমরা দলাই লামার প্রতিষ্ঠানের ধারাবাহিকতা সম্পর্কে তাঁর দেওয়া বিবৃতি দেখেছি। সকলের ধর্মীয় স্বাধীনতা অক্ষুণ্ণ রাখার ব্যাপারে ভারত সরকার অঙ্গীকারবদ্ধ।”

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.