প্রাথমিকের শিক্ষক নিয়োগে ‘অকল্পনীয় দুর্নীতি’ হয়েছে বলে আদালতকে জানাল সিবিআই। বুধবার তারা কলকাতা হাই কোর্টে টেট সংক্রান্ত তদন্ত রিপোর্ট জমা দেয়। বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের বেঞ্চে মুখবন্ধ জোড়া খামে ওই রিপোর্ট জমা দিয়ে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা বলে, ‘‘টেটের শিক্ষক নিয়োগে যে দুর্নীতি হয়েছে, তা জানলে মানুষ শিউরে উঠবেন।’’
রিপোর্টে কী কী রয়েছে, তা সুস্পষ্ট না করলেও, সিবিআই তাদের তদন্তে পাওয়া কিছু কিছু তথ্য শুনানি চলাকালীন বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়কে জানিয়েছে। যা শুনে চমকে গিয়েছেন স্বয়ং বিচারপতিও। আদালত কক্ষে সিবিআইয়ের বর্ণনা শুনতে শুনতেই তিনি বলে ফেলেছেন, ‘বিস্ময়কর!’
ঠিক কী বলেছে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা সিবিআই? আদালতকে তারা জানিয়েছে, টেট-এ যে সমস্ত চাকরিপ্রার্থীকে প্রাথমিকের শিক্ষক হিসেবে নিয়োগপত্র দেওয়া হয়েছে, তাঁরা আদপে পরীক্ষাতে বসেনইনি। টেটে চাকরি পাওয়া অনেকেরই আবেদন পত্র পাওয়া যাচ্ছে না বলে এর আগে অভিযোগ উঠেছিল। এ বার সিবিআই সেই বিষয়টি আরও স্পষ্ট করে জানিয়েছে। অনুমান রিপোর্টেও এ ব্যাপারে বিশদ উল্লেখ থাকতে পারে।
সিবিআই আদালতকে জানিয়েছে, তারা তদন্তের একেবারে শেষ পর্যায়ে পৌঁছে গিয়েছে এবং তদন্ত সুনির্দিষ্ট পথেই এগোচ্ছে। আর সেই তদন্তেই পাওয়া একের পর এক তথ্য থেকে তারা জানতে পেরেছে টেট-এর নিয়োগে ‘‘ব্যাপক দুর্নীতি হয়েছে।’’ আদালত কক্ষে সিবিআইয়ের এই বক্তব্য শুনে এবং রিপোর্ট দেখেই বিস্ময় প্রকাশ করেন বিচারপতি। যদিও এর বেশি তাঁকে আর কিছু বলতে শোনা যায়নি। আগামী ৪ নভেম্বর এ ব্যাপারে পরবর্তী শুনানি হবে বলে জানান তিনি।
প্রসঙ্গত, বুধবার টেট দুর্নীতি মামলার শুনানি ছিল বিচারপতি গঙ্গেপাধ্যায়ের বেঞ্চে। সেখানে সিবিআইয়ের রিপোর্ট পেশ ছাড়াও আরও বেশ কয়েকটি বিষয় উঠে আসে। যেমন, রাজ্য়ের প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের দেহরক্ষী বিশ্বম্ভর মণ্ডলের ঘনিষ্ঠদের চাকরি পাইয়ে দেওয়ার প্রসঙ্গ। যে ১০ জনকে বেআইনি ভাবে চাকরি দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে, তাদের নথি পর্ষদের অফিসে গিয়ে মামলাকারীদের আইনজীবীদের খতিয়ে দেখতে বলা হয়েছে। অন্য দিকে, প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদের যে সমস্ত নথি দিল্লি ফরেন্সিক ল্যাবে পরীক্ষার জন্য পাঠানো হয়েছিল, তারও রিপোর্ট পেশ হয়েছে আদালতে। ওই সব নথি যথাযথ কি না জানতে, কাগজের বয়স পরীক্ষা করতে পাঠানো হয়েছিল দিল্লিতে। আদালতে বিচারপতি প্রশ্ন তুলেছিলেন পাঁচ বছর আগের কাগজ এখনও নতুন কী ভাবে? কিন্তু ফরেন্সিক ল্যাব তাদের রিপোর্টে জানিয়েছে নথিগুলির বয়স সম্পর্কে তারা কোনও সিদ্ধান্তে পৌঁছতে পারেনি।