জগন্নাথধাম বিতর্কে এ বার বিবৃতি এল শঙ্করাচার্যের তরফ থেকে। রবিবার পুরী গোবর্ধন মঠের এক্স হ্যান্ডলে (সাবেক টুইটার) শঙ্করাচার্য স্বামী নিশ্চলানন্দ সরস্বতীর একটি সংক্ষিপ্ত বিবৃতি পোস্ট আকারে প্রকাশ করা হয়েছে। ‘জগন্নাথধাম’ হিসেবে শুধু পুরীরই মান্যতা রয়েছে বলে তিনি বার্তা দিয়েছেন।
প্রসঙ্গত, পোস্টটিতে কোথাও দিঘায় জগন্নাথ মন্দির স্থাপনের কথা উল্লেখ করা হয়নি। কিন্তু পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রীকে পোস্টটিতে ‘ট্যাগ’ করা হয়েছে।
পুরীর গোবর্ধন মঠ হল হিন্দু ধর্মের চারটি প্রধান পীঠের অন্যতম। উত্তর ভারতের জন্য জ্যোতির্মঠ (বদ্রীনাথ ক্ষেত্র), পশ্চিম ভারতের জন্য শারদা মঠ (দ্বারকা ক্ষেত্র), দক্ষিণ ভারতের জন্য শৃঙ্গেরী মঠ (রামেশ্বরম ক্ষেত্র) যেমন নির্দিষ্ট, তেমনই পূর্ব ভারতের প্রধান পীঠ হিসেবে গোবর্ধন মঠ (পুরী ক্ষেত্র) নির্দিষ্ট। এই চার পীঠের চার শঙ্করাচার্যের মধ্যে পুরীর নিশ্চলানন্দ সরস্বতীই সবচেয়ে প্রবীণ। তাঁরই নামাঙ্কিত যে পোস্ট রবিবার বিকেলে প্রকাশ করা হয়েছে, তাতে দু’টি বাক্য রয়েছে। লেখা হয়েছে, ‘উৎকল প্রান্তে (ওড়িশা) সন্নিহিত শ্রীজগন্নাথপুরী হল শ্রীজগন্নাথ ধাম। এই ঐতিহাসিক তথ্যের অন্যত্র কল্পনা সর্বৈব অনুচিত।’
গত অক্ষয় তৃতীয়ায় দিঘায় জগন্নাথধামের উদ্বোধন করেছেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। পুরীর মন্দিরের সেবায়েৎ এবং ইসকনের সন্ন্যাসীদের তত্ত্বাবধানে দিঘার মন্দিরে জগন্নাথ, বলরাম, সুভদ্রার মূর্তিতে প্রাণ প্রতিষ্ঠা হয়েছে। পশ্চিমবঙ্গের বিজেপি নেতৃত্ব দিঘার মন্দিরের ‘জগন্নাথধাম’ নামকরণের বিরোধিতা করছিলেন। বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী সেখানে আমন্ত্রণ পেয়েও যাননি। রাজ্য বিজেপির সভাপতি সুকান্ত মজুমদার জানিয়ে দিয়েছিলেন, দল সিদ্ধান্ত নিয়েছে উদ্বোধনী অনুষ্ঠান বয়কট করার। যদিও রাজ্য বিজেপির প্রাক্তন সভাপতি দিলীপ ঘোষ সেখানে গিয়েছিলেন। এবং তা নিয়ে বিজেপির অন্দরে তোলপাড়ও শুরু হয়।
বিতর্ক শুরু হয় পুরীর মন্দির থেকে নিমকাঠ এনে দিঘায় বিগ্রহ বানানোর অভিয়োগ নিয়ে। পুরীতে জগন্নাথ, বলরাম, সুভদ্রার নবকলেবরের পরে যে কাঠ উদ্বৃত্ত ছিল, তা এনে দিঘায় বিগ্রহ বানানো হয়েছে বলে বিতর্ক তৈরি হয়েছিল। কেউ কেউ দাবি করেছিলেন। যার প্রেক্ষিতে রাজ্যের বিজেপি নেতারা মুখ্যমন্ত্রীকে আক্রমণ শুরু করেন। সক্রিয় হয় ওড়িশার বিজেপি সরকারও। পুরীর মন্দিরের যে সেবায়েত দিঘার মন্দির প্রতিষ্ঠায় ভূমিকা নিয়েছিলেন, তিনি পুরী থেকে দিঘায় কাঠ পাঠানোর বন্দোবস্ত করেছেন কি না, তা খতিয়ে দেখতে বলে পুরীর মন্দির প্রশাসনকে চিঠি দেন ওড়িশার আইনমন্ত্রী পৃথ্বীরাজ হরিচন্দ্রন। মন্দির প্রশাসন অবশ্য তদন্ত করে মন্ত্রীকে জানিয়ে দেয় যে, পুরী থেকে উদ্বৃত্ত নিমকাঠ কোথাও পাঠানো হয়নি।
মন্দির প্রশাসনের রিপোর্ট পাওয়ার পর ওড়িশার ওই মন্ত্রী নিমকাঠ বিতর্কে ইতি টানেন। তবে তিনি মন্তব্য করেছিলেন, দিঘার জগন্নাথ মন্দিরকে ‘ধাম’ বলে উল্লেখ করায় অজস্র জগন্নাথভক্ত তথা ওড়িশার সাড়ে চার কোটি মানুষের ভাবাবেগ আহত হয়েছে। এ বার বিষয়টিতে হস্তক্ষেপ করলেন শঙ্করচার্যও।