৪৩-এ ভেল্কি, বোপান্নার হাত ধরে শনি সন্ধ্যা একসঙ্গে দেখল ধোনি, সুনীল, লিয়েন্ডারকে

৪৩ বছর ১১ মাস। টেনিসের দুনিয়ায় সব থেকে বয়স্ক খেলোয়াড় হিসাবে পুরুষদের ডাবলসে গ্র্যান্ড স্ল্যাম জিতেছেন রোহন বোপান্না। অস্ট্রেলিয়ান ওপেনে ডাবলসের ফাইনালে ম্যাথু এবডেনকে সঙ্গে নিয়ে ইটালির অবাছাই প্রতিপক্ষদের হারিয়েছেন ভারতীয় টেনিস তারকা। ইতিহাস গড়েছেন বোপান্না। শনিবার সন্ধ্যায় আরও তিন ভারতীয়কে মনে করালেন বোপান্না। কেরিয়ারের শেষ দিকে বুড়ো হাড়ে ভেল্কি দেখিয়েছেন তাঁরাও। মহেন্দ্র সিংহ ধোনি, সুনীল ছেত্রী ও লিয়েন্ডার পেজ়। নিজের নিজের ক্ষেত্রে তাঁরা প্রমাণ করে দিয়েছেন যে বয়স কেবলই একটি সংখ্যা।

মহেন্দ্র সিংহ ধোনি: ভারতের অধিনায়ক হওয়ার পরে অল্প বয়সেই টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ, এক দিনের বিশ্বকাপ, চ্যাম্পিয়নস ট্রফি, টেস্টে শীর্ষস্থান, সব কীর্তি ছিল তাঁর ঝুলিতে। কিন্তু সেখানেই থেমে থাকেননি ধোনি। যত সময় গড়িয়েছে, তত অভিজ্ঞতা বেড়েছে। আর সেই অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে একের পর এক মাইলফলক স্পর্শ করেছেন।

৩৮ বছর বয়সে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটকে বিদায় জানিয়েছিলেন ধোনি। কিন্তু ক্রিকেট থেকে পুরোপুরি সরে যাননি। আইপিএলে খেলে গিয়েছেন। প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত (মাঝে দল নির্বাসিত হওয়ায় দু’বছর রাইজিং পুণে সুপারজায়ান্টস) চেন্নাই সুপার কিংসের হয়ে খেলেছেন। শুধু তাই নয়, দলতে পাঁচ বার চ্যাম্পিয়ন করেছেন। যে শহরের বাসিন্দা নন, সেই চেন্নাইয়ের ঘরের ছেলে হয়ে উঠেছেন। তাঁর নামেই হলুদ জার্সিধারী সমর্থকেরা মাঠ ভরিয়েছেন। ধোনি থেকে কবে তিনি চেন্নাইয়ের কাছে ‘থালা’ হয়ে উঠেছেন তার সাক্ষী সময়।

আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে অবসরের পর ২০২১ ও ২০২৩ সালে আইপিএল জিতেছেন ধোনি। এমন একটা সময়ে যখন সারা বছরের মধ্যে মাত্র দু’মাস তিনি ক্রিকেট খেলেন। তার মধ্যে তাঁকে ভুগিয়েছে হাঁটুর চোট। ঠিক মতো দৌড়তে পারছিলেন না। তার মধ্যেই দলকে নেতৃত্ব দিয়েছেন। বুঝিয়ে দিয়েছেন, বয়স শুধুমাত্র একটা সংখ্যা মাত্র।

সুনীল ছেত্রী: ক্রিকেটে যদি ধোনি কিংবদন্তি হন, তা হলে ফুটবলে সেই জায়গাটি সুনীলের। ২০০২ সালে সিনিয়র স্তরে ফুটবল শুরু করেছিলেন। তার পর থেকে দীর্ঘ ২২ বছর ধরে ছুটছেন তিনি। একই রকম উদ্যম। একই রকম জেতার নেশা। একই রকম গোলের খিদে।

আন্তর্জাতিক ফুটবলে ৯০টি গোল করেছেন সুনীল। বর্তমান ফুটবলারদের মধ্যে একমাত্র লিয়োনেল মেসি ও ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডো তাঁর উপরে রয়েছেন। হতে পারে এশিয়ার দেশগুলির বিরুদ্ধেই তিনি খেলেন, তার পরেও তাঁর কৃতিত্ব কম নয়। ভারতীয় দলের নেতা তিনি। ৩৯ বছর বয়সেও তরুণদের সঙ্গে কাঁধ মিলিয়ে লড়েন। বুঝিয়ে দেন, দেশের হয়ে জেতা সব থেকে বড় কৃতিত্ব। এখনও ছুটে চলেছেন সুনীল। প্রজন্মের পর প্রজন্মকে উদ্বুদ্ধ করছেন।

লিয়েন্ডার পেজ়: রড লেভারের পরে একমাত্র টেনিস তারকা যিনি তিনটি আলাদা আলাদা দশকে গ্র্যান্ড স্ল্যাম জিতেছেন। পুরুষ ও মহিলাদের ডাবলসে মোট ৩৪টি গ্র্যান্ড স্ল্যামের ফাইনাল খেলেছেন। জিতেছেন ১৮টি। তার মধ্যে পুরুষদের ডাবলস আট বার। মিক্সড ডাবলস ১০ বার।

২০১৫ সালে উইম্বলডনে মিক্সড ডাবলস জিতেছিলেন লিয়েন্ডার। তখন তাঁর বয়স ছিল ৪১। পরের বছর জিতেছিলেন ফরাসি ওপেন। তখন তাঁর বয়স ৪২। তার থেকেই বোঝা যায়, সেই বয়সেও শারীরিক ভাবে কতটা সবল ছিলেন লিয়েন্ডার। মূলত নেটের কাছে খেলতেন তিনি। সেখানে শরীরের রিফ্লেক্স আরও বেশি প্রয়োজন হয়। সেটা দেখিয়েছেন লিয়েন্ডার। এখনও ভারতের তরুণ টেনিস খেলোয়াড়দের কাছে তিনিই আদর্শ। লিয়েন্ডারও বুঝিয়ে দিয়েছেন, খেলার নেশা, জেতার নেশা এক জন ক্রীড়াবিদকে কত দূর নিয়ে যেতে পারে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.