মোদীর ৪৮ ঘণ্টা পরে শাহও আসতে পারেন বঙ্গসফরে, নীলবাড়ির লড়াইয়ের প্রস্তুতি শুরু করিয়ে দিতেই আগমন?

রাজ্য বিজেপির ‘সংগঠন পর্বে’র সমাপ্তি ঘটিয়ে ভোট প্রস্তুতি শুরু করে দিতে পশ্চিমবঙ্গে আসছেন অমিত শাহ। জেলা স্তরে কিছু সাংগঠনিক রদবদল এখনও বাকি থাকলেও মূল নজর এ বার ঘুরছে ২০২৬ সালের নীলবাড়ির লড়াইয়ের দিকেই। সাংগঠনিক ঝাড়াই-বাছাইয়ের কাজে আপাতত ইতি টেনে গোটা দলকে বিধানসভা নির্বাচনের প্রস্তুতিতে নামিয়ে দিতে চান বিজেপি নেতৃত্ব। জুন মাসের প্রথম দিনে শাহের মুখ থেকেই সেই বার্তা পেতে পারেন বঙ্গের বিজেপি নেতাকর্মীরা।

৩১ মে রাতে শাহ কলকাতায় চলে আসতে পারেন বলে পশ্চিমবঙ্গ বিজেপি সূত্রের খবর। ১ জুন জোড়া কর্মসূচিতে অংশ নিতে পারেন তিনি। যদিও ঠিক কী কী কর্মসূচি থাকছে, তা সোমবার সন্ধ্যা পর্যন্ত চূড়ান্ত হয়নি। বিজেপি সূত্রে জানা গিয়েছে, সোমবার রাতে রাজ্য নেতৃত্ব একটি অনলাইন বৈঠকে বসছেন। সেখানেই শাহের কর্মসূচির রূপরেখা চূড়ান্ত হবে। সাংসদ, বিধায়ক এবং রাজ্য বিজেপির শীর্ষ নেতৃত্বকে নিয়ে একটি বৈঠক করতে পারেন শাহ। যেহেতু ১০ মাসের মধ্যে নির্বাচনের মুখোমুখি হতে চলেছেন বিধায়কেরা, সেহেতু তাঁদের সঙ্গে শাহের আলোচনা ‘বিশেষ গুরুত্ব’ পেতে পারে বলে বিজেপি সূত্রের দাবি। আর একটি কর্মসূচি রাখা হতে পারে কর্মিসভার ধাঁচে। সেখানে রাজ্য এবং জেলা নেতৃত্ব তো বটেই, মণ্ডল সভাপতিদেরও ডাকা হবে। রাজ্য বিজেপির একটি সূত্রের দাবি, একটি ধর্মীয় অনুষ্ঠানেও যোগ দেবেন শাহ।

শাহের নেতৃত্বে কর্মিসভা হলে তা কোথায় হবে, এখনও স্থির হয়নি। পশ্চিমবঙ্গে বিজেপির মণ্ডল কমিটির সংখ্যা প্রায় ১৩০০। রাজ্য নেতৃত্ব, জেলা নেতৃত্ব এবং মণ্ডল সভাপতিদের ডাকলেই কর্মিসভায় উপস্থিতির সংখ্যা হাজার দেড়েক ছাড়িয়ে যাবে। আর যদি মণ্ডল স্তর থেকে সভাপতিদের পাশাপাশি আরও কয়েক জন করে প্রতিনিধিকে ডাকার সিদ্ধান্ত হয়, তা হলে চার-পাঁচ হাজার প্রতিনিধির বসার ব্যবস্থা রয়েছে এমন প্রেক্ষাগৃহের ব্যবস্থা করতে হবে।

৩১ মে শাহের প্রস্তাবিত আগমন যদি পিছিয়ে না-যায়, তা হলে পয়লা জুনই বঙ্গ বিজেপির ‘সংগঠন পর্ব’ কার্যত শেষ হয়ে যাবে বলে বিজেপির একটি অংশের দাবি। যে ক’টি জেলায় সভাপতি নির্বাচন এখনও বাকি, সেগুলির বিষয়ে রাজ্য নেতৃত্বই তখন সিদ্ধান্ত নেবেন। সাংগঠনিক নির্বাচনে যাওয়ার বাধ্যবাধকতা থাকবে না।

এমনিতেই বিজেপির সাংগঠনিক নির্বাচন ঘিরে বুথ থেকে জেলা স্তর পর্যন্ত নানা ধরনের ক্ষোভ প্রকাশ্যে এসেছে। বিধানসভা ভোট আসতে যেহেতু আর এক বছরও বাকি নেই, সেহেতু এই সব ক্ষোভ-অভিমান পেরিয়ে দলকে পুরোদমে ভোটের প্রস্তুতিতে নামানোই দিল্লির লক্ষ্য।

২০২৪ সালের অক্টোবর মাসে শাহের হাত দিয়েই পশ্চিমবঙ্গ বিজেপির ‘সদস্যতা অভিযানে’র সূচনা হয়েছিল। ওই ‘অভিযান’ ছিল ‘সংগঠন পর্বে’র প্রথম ধাপ। পরবর্তী ছ’মাসে রাজ্যে প্রাথমিক এবং সক্রিয় সদস্যপদ দেওয়া ছাড়াও বুথ, মণ্ডল এবং জেলা স্তরের নির্বাচন সেরেছে বিজেপি। ৪৩টি জেলা কমিটির মধ্যে ৩৯টির নির্বাচন পর্ব শেষ। দলের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী পরবর্তী মেয়াদের সভাপতিত্ব তথা রাজ্য কমিটি ঘোষণা করতেও এখন আর কোনও বাধা নেই। কিন্তু ‘সংগঠন পর্ব’কে আর বাড়াতে চাইছেন না নেতৃত্ব। নবনির্বাচিত মণ্ডল ও জেলানেতাদের কর্মিসভায় ডেকে শাহ ভোট প্রস্তুতি শুরুর নির্দেশ দিয়ে দিলে ‘সংগঠন পর্ব’ এমনিতেই শেষ হয়ে যাবে। শুরুও হয়েছিল শাহের হাত দিয়ে। সমাপ্তিও ঘটবে তাঁর উপস্থিতিতেই।

শাহের প্রস্তাবিত সফরের দু’দিন আগেই রাজ্যে আসছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। তবে দক্ষিণে নয়, তিনি আসছেন উত্তরবঙ্গে। ২৯ মে আলিপুরদুয়ারে জোড়া কর্মসূচি মোদীর। প্রথমে প্রশাসনিক সভা। তার পরে রাজনৈতিক সভা। ‘অপারেশন সিঁদুর’ সম্পর্কে গোটা দেশকে বার্তা দিতে নানা প্রান্তে মোদী সভা করছেন। আলিপুরদুয়ারের কর্মসূচিও তারই অঙ্গ। রাজস্থান এবং গুজরাতে ইতিমধ্যেই এই জনসংযোগ কর্মসূচিতে মোদী ভাষণ দিয়েছেন। সে সব ভাষণে তাঁর সুর ছিল যথেষ্ট চড়া। বাংলাদেশ সীমান্তবর্তী উত্তরবঙ্গে এসে মোদীর বার্তা শুধু পশ্চিম সীমান্তের বিষয়ে সীমাবদ্ধ থাকে, না কি পূর্ব সীমান্তের পরিস্থিতি নিয়েও তিনি কিছু বলেন, সে দিকে সকলের নজর থাকছে। পশ্চিমবঙ্গের জন্য মোদীর বার্তা স্পষ্ট হয়ে যাওয়ার পরে শাহ কী ভাবে কৌশল সাজানো শুরু করেন, রাজনৈতিক শিবির তা-ও দেখার অপেক্ষায়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.