ছেলেধরা গুজবে গণপিটুনির ঘটনা চলছেই। বারাসতের ঘটনার ছায়া এ বার বারাসত পুলিশ জেলারই অশোকনগরে। ছেলেধরা সন্দেহে এক তরুণীকে গণপিটুনি দেওয়ার ঘটনা ঘটল শ্রীকৃষ্ণপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের পুমলিয়ায়। খবর পেয়ে তরুণীকে উন্মত্ত জনতার হাত থেকে উদ্ধার করতে যায় পুলিশ। ছাড় পায়নি তারাও।
স্থানীয় সূত্রে খবর, আহতের নাম রজনী খাতুন। ২৮ বছরের রজনীর বাড়ি ডায়মন্ড হারবার এলাকায়। সাইকেল নিয়ে বিভিন্ন স্থানে ঘুরে বেড়ান তিনি। পুলিশ সূত্রে খবর, বিকেলে উদ্দেশ্যহীন ভাবে ঘুরে বেড়াচ্ছিলেন কিছুটা মানসিক ভাবে ভারসাম্যহীন ওই তরুণী। তাঁকে দেখে সন্দেহ কয়েক জন স্থানীয়ের। অভিযোগ, বিনা প্ররোচনায় শুরু হয় ওই তরুণীকে মার। কয়েক’শো মানুষ ঘিরে ধরেন একা ওই তরুণীকে।
খবর পেয়েই ঘটনাস্থলে গিয়েছিল অশোকনগর থানার পুলিশ। কিন্তু উন্মত্ত জনতার হাত থেকে আক্রান্তকে উদ্ধার করতে গিয়ে বেগ পেতে হয় তাদের। মানিক মুখোপাধ্যায় নামে এক সাব ইনস্পেক্টর জনতার হাতে আক্রান্ত হন। পরে ওই থানার ওসি চিন্তামণি নস্কর-সহ বিশাল পুলিশ বাহিনী গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন। ওই ঘটনায় ইতিমধ্যে পাঁচ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। বাকি অভিযুক্তদের খোঁজে তল্লাশি চলছে। পুলিশের তৎপরতার প্রশংসা করেছেন অশোকনগর কল্যাণগড় পুরসভার চেয়ারম্যান প্রবোধ সরকার। পাশাপাশি, জনতার উদ্দেশে তিনি আবেদন জানিয়েছেন, গুজবে কান না-দিতে এবং আইন নিজেদের হাতে তাঁরা যেন না তুলে নেন। কিন্তু সচেতনতামূলক প্রচারের পরেও একই রকম ঘটনা বার বার কেন ঘটছে, তা নিয়েও প্রশ্ন উঠছে। বারাসত পুলিশ জেলার সুপার প্রতীক্ষা ঝারখারিয়া জানিয়েছেন, শুক্রবার সন্ধ্যা সাড়ে ৬টা নাগাদ ছেলেধরা সন্দেহে জনৈক রজনী খাতুনকে মারধর করার খবর পায় পুলিশ। সঙ্গে সঙ্গে উদ্ধারকাজে যায় পুলিশ। পাঁচ জনকে এখনও পর্যন্ত গ্রেফতার করেছে। ইতিমধ্যে মামলা রুজু করে তদন্ত শুরু হয়েছে।
ছেলেধরা সন্দেহে এই গণপিটুনির প্রবণতার শুরু বারাসতের কাজিপাড়ায় এক বালককে খুনের ঘটনা দিয়ে। কেউ বা কারা ওই বালককে হত্যা করা পর গুজব রটে যায় যে, ছেলেধরার খপ্পরে পড়েছিল ছেলেটি। ছেলেধরা তাকে ধরে নিয়ে গিয়ে চোখ উপড়ে, কিডনি বার করে খুন করেছে। ঝুলন্ত অবস্থায় বালকের দেহ মেলে। যদিও পুলিশ জানায়, ময়নাতদন্তে এমন কোনও ঘটনার প্রমাণ মেলেনি। কিন্তু ওই খুনের ঘটনার পর থেকেই সমাজমাধ্যমে ঘুরতে শুরু করে বারাসতের ছেলেধরার কাহিনি। বলা হয়, বারাসতে ছেলেধরার দৌরাত্ম্য বেড়ে গিয়েছে। বারাসতের বলে অন্য বিভিন্ন জায়গার ভিডিয়োও সমাজমাধ্যমে ছড়িয়ে দেওয়া হয়। ওই ভিডিয়োগুলির সত্যতা যাচাই করেনি আনন্দবাজার অনলাইন। এই গুজব এবং সমাজমাধ্যমে ‘অপপ্রচারের’ কারণে বুধবারই তিন জন সন্দেহের বশে গণধোলাই খান। তদন্তে নেমে পুলিশ প্রথমেই ছেলেধরা-তত্ত্ব খারিজ করে দিয়েছিল। দুই এলাকার সিসিটিভি ফুটেজ খতিয়ে দেখেছে পুলিশ। গণপিটুনি যাঁরা দিয়েছেন, তাঁদের বেশ কয়েক জনকে চিহ্নিত করা গিয়েছে। অন্তত ১৭ জনকে গ্রেফতারের খবর মিলেছে।