মনোনয়ন থেকে নিরাপত্তা, সোমবারেই হাই কোর্টের রায়ে স্পষ্ট হয়ে যেতে পারে পঞ্চায়েত ভোটের ভবিষ্যৎ

পঞ্চায়েত ভোট নিয়ে জোড়া জনস্বার্থ মামলা দায়ের হয়েছে কলকাতা হাই কোর্টে। মামলা ২টি করেছেন প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীররঞ্জন চৌধুরী এবং রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। রাজ্য নির্বাচন কমিশনের বিজ্ঞপ্তির নানা অংশকে চ্যালেঞ্জ জানানো হয়েছে মামলায়। মনোনয়ন পেশের দিন থেকে ভোট গণনা পর্যন্ত নির্বাচন প্রক্রিয়ার বিভিন্ন অংশ হাই কোর্টে তুলে ধরেছেন মামলাকারীরা। উচ্চ আদালত কিছু বিষয়ে কমিশনের বক্তব্য জানতে চেয়েছে। সোমবার প্রধান বিচারপতি টিএস শিবজ্ঞানম এবং বিচারপতি হিরণ্ময় ভট্টাচার্যের ডিভিশন বেঞ্চে নিজেদের বক্তব্য জানাবে কমিশন। ভোটের নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়ে অবস্থান জানাবে রাজ্য। কেন্দ্রীয় বাহিনী না কি, রাজ্য পুলিশ দিয়েই ভোট হবে এ বিষয়ে নিজেদের মত দিতে পারবে কমিশনও। সব মিলিয়ে সোমবারই হাই কোর্টে স্পষ্ট হতে পারে পঞ্চায়েত ভোটের ভবিষ্যৎ।

মনোনয়ন পেশের সময়সীমা:

গত ৯ জুন থেকে শুরু হয়েছে পঞ্চায়েত ভোটের মনোনয়ন জমা দেওয়ার কাজ। চলবে ১৫ জুন পর্যন্ত। অর্থাৎ, রবিবার ছুটির দিন বাদ দিলে মনোনয়ন পেশের জন্য ৬ দিন সময় দিয়েছে কমিশন। রাজ্যের প্রায় ৭৫ হাজার আসনের জন্য এই সময় যথেষ্ট নয় বলে প্রাথমিক পর্যবেক্ষণে জানিয়েছে হাই কোর্ট। আদালত কমিশনকে বিষয়টি পুনর্বিবেচনার পরামর্শ দিয়েছে। উচ্চ আদালতের পর্যবেক্ষণের পর কমিশনও এ বিষয়ে ভাবনাচিন্তা করেছে। সোমবার তারা এ নিয়ে উচ্চ আদালতে নিজেদের সিদ্ধান্ত জানাবে। অন্য দিকে, মনোনয়নের জন্য বিজেপি ন্যূনতম ১২ দিন সময় দেওয়ার আর্জি জানিয়েছে। ফলে এই অবস্থায় মনোনয়ন পেশের শেষ দিন পিছনো নিয়ে কমিশন এবং আদালত কী জানাল তা দেখার।

নির্বিঘ্নে মনোনয়নের ব্যবস্থা:

ভোটের দিন ঘোষণার পর থেকেই প্রার্থিপদে মনোনয়ন ঘিরে অশান্তির অভিযোগ আসতে শুরু করেছে। এই অবস্থায় মনোনয়নে পর্যাপ্ত নিরাপত্তা এবং জেলাশাসক বা কমিশনের সদর দফতরে মনোনয়ন জমা দেওয়ার ব্যবস্থা করার আর্জি জানিয়েছে কংগ্রেস ও বিজেপি। আদালত জানিয়েছে, মনোনয়ন পেশে বাধা দেওয়া এবং নিরাপত্তার বিষয়টি কমিশনকে গুরুত্ব দিয়ে দেখতে হবে। এ নিয়ে কী কী পদক্ষেপ করা হয়েছে তা আদালতে জানাবে কমিশন।

ভোটের নিরাপত্তা:

পঞ্চায়েত ভোটের নিরাপত্তার দায়িত্ব রাজ্যের উপর রয়েছে। ভোটে বিজেপি এবং কংগ্রেস কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েনের আবেদন করেছে। তবে রাজ্য এখনও অবধি পুলিশ দিয়ে ভোট করানোর পক্ষে। প্রয়োজনে নবান্ন অন্য রাজ্য থেকে পুলিশ নিয়ে আসতে প্রস্তুত। সেই মতো পড়শি রাজ্যগুলিকে বার্তাও পাঠানো হয়েছে। ভোটের নিরাপত্তার বিষয়টি রাজ্যের কাছে জানতে চেয়েছে হাই কোর্ট। এ নিয়ে মতামত জানাবে কমিশনও। প্রধান বিচারপতি ডিভিশন বেঞ্চ বলেছে, কেন্দ্রীয় বাহিনী নিয়ে নিজেদের মতামত জানাতে পারে কমিশন। রাজ্য পুলিশের সঙ্গে কেন্দ্রীয় বাহিনী একত্রে কাজ করবে। বা আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণ করতে কেন্দ্রীয় বাহিনী মজুত রাখা প্রয়োজন কি না, এ বিষয়ে অভিমত দিতে পারে কমিশন।

অস্থায়ী কর্মীদের নিয়ে কমিশনের অবস্থান:

পঞ্চায়েত ভোটের কাজে সিভিক ভলান্টিয়ার বা অস্থায়ী কর্মীদের ব্যবহার করা চলবে না এই দাবি জানিয়েছে বিজেপি। অস্থায়ী কর্মীদের নিয়ে জাতীয় নির্বাচন কমিশন যে পদ্ধতি মেনে চলে রাজ্য নির্বাচন কমিশনকেও তা বিবেচনা করতে বলেছে হাই কোর্ট। এমনকি সিভিক ভলান্টিয়ার নিয়ে আদালতের পূর্ব নির্দেশ মাথায় রাখতে বলা হয়েছে। ফলে এই ভোটে অস্থায়ী কর্মীর ব্যবহার নিয়ে সোমবার আদালতে সিদ্ধান্ত জানাবে কমিশন। আদালতও এ নিয়ে নির্দেশ দিতে পারে।

সিসিটিভি ক্যামেরার ব্যবহার:

মনোনয়ন পেশ থেকে ভোট গণনা পর্যন্ত সিসিটিভি ক্যামেরা বা ভিডিয়োগ্রাফি করা যায় কি না তা ভেবে দেখতে বলেছে আদালত। হাই কোর্টের মতে, অবাধ এবং সুষ্ঠু ভোট নিশ্চিত করতে এবং নির্বাচনের উপর মানুষের আস্থা বাড়াতে কমিশন মনোনয়ন দাখিল থেকে ভোট গণনা পর্যন্ত পুরো প্রক্রিয়াটি ভিডিয়োগ্রাফি করা হবে এমন আশা থাকছে। জনস্বার্থ মামলাকারীরাও আদালতে এই আবেদন করেছেন। কমিশন ইতিমধ্যে মনোনয়ন পর্ব ভিডিয়োগ্রাফি করার নির্দেশ দিয়েছে। এখন ভোটগ্রহণ এবং গণনার ক্ষেত্রে সিসিটিভি নিয়ে তাদের পরিকল্পনা কী, তা আদালতে জানাতে পারে কমিশন।

ভোটের নজরদারিতে বিশেষ পর্যবেক্ষক:

অবাধ, স্বচ্ছ, শান্তিতে ভোট করার লক্ষ্যে নজরদারিতে কোনও অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি বা বিশেষ অফিসার বা বিশেষ পর্যবেক্ষক নিয়োগের আবেদন করেছে বিজেপি। তাদের আর্জি, বিশেষ অফিসারের তত্ত্বাবধানে গ্রাম পঞ্চায়েত, পঞ্চায়েত সমিতি এবং জেলা পরিষদের ভোট গণনা করার ব্যবস্থা করা হোক। গণনা কেন্দ্র থেকে ১ কিলোমিটার পর্যন্ত ১৪৪ ধারা জারি থাকুক। এ নিয়ে হাই কোর্ট কিছু জানায় কি না তা দেখার।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.