লিপ্‌স অ্যান্ড বাউন্ডসে তল্লাশিতে গিয়ে কন্যার হস্টেলের খোঁজখবর! ১৬ ফাইলের ‘ব্যাখ্যা’ দিল ইডি

লিপ্‌স অ্যান্ড বাউন্ডসের অফিসে তল্লাশি চালাতে গিয়ে মেয়ের হস্টেল সম্বন্ধে খোঁজখবর নিচ্ছিলেন এক ইডি আধিকারিক। সংস্থার কম্পিউটার ঘেঁটেই চলছিল হস্টেলের অনুসন্ধান। সেই কারণেই কোনও ভাবে ১৬টি ফাইল ওই সংস্থার অফিসে ডাউনলোড হয়ে গিয়ে থাকবে, পুলিশকে এমনটাই ব্যাখ্যা দিল এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ইডি)। শনিবার কলকাতার পুলিশ কমিশনার বিনীত গোয়েলকে চিঠি লিখে ফাইল ডাউনলোডের এই কারণ জানিয়েছে কেন্দ্রীয় সংস্থা। কারণ ব্যাখ্যা করা হয়েছে লিপ্‌স অ্যান্ড বাউন্ডসকেও।

ইডি তল্লাশি চালিয়ে চলে যাওয়ার পর সংস্থার কম্পিউটারে ১৬টি অচেনা ফাইল ডাউনলোড হয়েছে, অভিযোগ নিয়ে গত শুক্রবার থানায় গিয়েছিলেন লিপ্‌স অ্যান্ড বাউন্ডসের কর্মী চন্দন বন্দ্যোপাধ্যায়। এর পর শুক্রবারই পুলিশ আলিপুরে সংস্থার অফিসে যায় এবং প্রাথমিক ভাবে তদন্তের পর সংস্থার দু’টি কম্পিউটার বাজেয়াপ্ত করে লালবাজারে নিয়ে আসে। চন্দনের অভিযোগ ছিল, ইডি আধিকারিকেরা ওই মাইক্রোসফ্‌ট এক্সেল ফাইলগুলি তাদের কম্পিউটারে ডাউনলোড করে দিয়ে গিয়েছেন। কারণ, সংস্থার অন্য কোনও কর্মী এই কাজ করেননি।

লালবাজারে অভিযোগ জমা পড়ার পর শনিবারই ইডির তরফে পুলিশের কাছে লিখিত ভাবে বিষয়টির ব্যাখ্যা দেওয়া হয়। তারা কমিশনারকে লেখা চিঠিতে এক আধিকারিকের কথা জানিয়েছেন। ইডির দাবি, লিপ্‌স অ্যান্ড বাউন্ডসের যে অফিসে গত সোমবার তল্লাশি চালাতে গিয়েছিল তাদের দল, সেখানকার একটি কম্পিউটারে ইডির এক আধিকারিক নিজের মেয়ের হস্টেল সম্পর্কে খোঁজখবর নিচ্ছিলেন। ওই আধিকারিকের মেয়ে সম্প্রতি শিবপুর ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজে ভর্তি হয়েছেন। সেখানকার হস্টেলের জন্য গত ১৪ অগস্ট আবেদনও জানিয়েছেন। ২৩ তারিখ থেকে তাঁর ক্লাস শুরু হওয়ার কথা। ইডি জানিয়েছে, যাদবপুরের হস্টেলে ছাত্রমৃত্যুর পর থেকে র‌্যাগিং নিয়ে উদ্বিগ্ন ছিলেন ওই আধিকারিক। তাই লিপ্‌স অ্যান্ড বাউন্ডসের অফিসের কম্পিউটারেও ওই কলেজের ওয়েবসাইট খুলে হস্টেল সম্পর্কে খোঁজ নিচ্ছিলেন। সংস্থার অন্য কর্মীদের সামনেই এই কাজ করা হয়েছিল বলে জানিয়েছে ইডি। ঘটনাস্থলে ছিল সিসি ক্যামেরার নজরদারিও।

ইডির বক্তব্য, হস্টেল নিয়ে ঘাঁটাঘাঁটি করতে গিয়েই কোনও ভাবে ওই ১৬টি এক্সেল ফাইল ডাউনলোড হয়ে গিয়ে থাকবে। ওই কম্পিউটার তল্লাশির সময় বাজেয়াপ্ত করা হয়নি। তাদের কোনও দুরভিসন্ধি ছিল না।

প্রসঙ্গত, গত সোমবার লিপ্‌স অ্যান্ড বাউন্ডস সংস্থায় প্রায় ১৮ ঘণ্টা তল্লাশি চালায় ইডি। ইডি সূত্রে খবর, এই সংস্থায় উচ্চ পদে কাজ করতেন নিয়োগ মামলায় ধৃত ‘কালীঘাটের কাকু’ ওরফে সুজয়কৃষ্ণ ভদ্র। তল্লাশির পর সংস্থার কর্মী চন্দনের মোবাইলও বাজেয়াপ্ত করা হয়। লালবাজারে চন্দন দাবি করেছেন, তল্লাশির সময় কম্পিউটারের নিয়ন্ত্রণ নিয়েছিলেন ইডির আধিকারিকেরা। সে সময়ই কিছু ফাইল তাঁরা ডাউনলোড করে নেন।

সোমবার সুজয়ের সঙ্গে সম্পর্ক আছে, এমন আরও দু’টি জায়গায় তল্লাশি চালিয়েছিল ইডি। দক্ষিণ ২৪ পরগনার বিষ্ণুপুরে একটি প্রকল্প এলাকা এবং লি রোডে সুজয়কৃষ্ণের মেয়ে এবং জামাইয়ের ফ্ল্যাটে গিয়েছিলেন ইডি আধিকারিকেরা। একযোগে তিন জায়গায় তল্লাশি শুরু হয়। বিষ্ণুপুর এবং লি রোডে তল্লাশির কাজ শেষ হলেও আলিপুরের অফিসে তল্লাশি গড়ায় ভোর পর্যন্ত। ইডি সূত্রে খবর, সুজয়ের সংস্থা এসডি এন্টারপ্রাইজ়ের সঙ্গে লিপ্‌স অ্যান্ড বাউন্ডসের লেনদেনের প্রমাণ মিলেছে। ইডির চার্জশিটে দাবি করা হয়েছে, ২০২০-২১ সালের মধ্যে সুজয়কৃষ্ণের এসডি এন্টারপ্রাইজ়ের সঙ্গে লিপ‌্স অ্যান্ড বাউন্ডসের ৯৫ লক্ষ টাকা লেনদেন হয়েছে।

তল্লাশি অভিযানের পর লিখিত বিবৃতিতে ইডির দাবি, ‘লিপ‌্স অ্যান্ড বাউন্ডস প্রাইভেট লিমিটেড’-এর চিফ এগ্‌জ়িকিউটিভ অফিসার (সিইও) তৃণমূলের সাংসদ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। সঙ্গে লেখা হয়েছে, ২০১২ থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত ওই সংস্থার ডিরেক্টর পদে ছিলেন অভিষেক। যদিও ডায়মন্ড হারবারের দু’বারের সাংসদ অভিষেকের ২০১৪ বা ২০১৯ সালের লোকসভা ভোটে প্রার্থী হওয়ার সময়ে নির্বাচন কমিশনে জমা-দেওয়া হলফনামা পরীক্ষা করে দেখা যাচ্ছে, তাঁর ওই সংস্থার সঙ্গে যুক্ত থাকার কোনও তথ্য নেই। ২০১৪ সালের হলফনামায় তিনি জানিয়েছিলেন, ‘লিপ‌্স অ্যান্ড বাউন্ডস প্রাইভেট লিমিটেড’ সংস্থার ১০ টাকা মূল্যের এক হাজারটি শেয়ার রয়েছে তাঁর। ২০১৯ সালে তার কথাও নেই।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.