অনেকের থেকে টাকা ধার নিয়ে ভাড়াটে খুনিদের হোটেলে রাখে বাগুইআটির জোড়া খুনে অভিযুক্ত সত্যেন্দ্র

মাত্র ৫০ হাজার টাকার জন্য সে বাগুইআটির দুই কিশোরকে খুন করেছে বলে জেরার মুখে জানিয়েছিল মূল অভিযুক্ত সত্যেন্দ্র চৌধুরী। অথচ তদন্তে নেমে সিআইডি-র গোয়েন্দারা জানতে পেরেছেন, অতনু দে ও অভিষেক নস্কর নামে ওই দুই স্কুলছাত্রকে খুনের জন্য ‘সুপারি কিলার’ বা ভাড়াটে খুনি জোগাড় করা, তাদের হোটেলে রেখে পানাহারের ব্যবস্থা, গাড়ি ভাড়া করতেই সত্যেন্দ্রের ৫০ হাজার টাকার বেশি খরচ হয়ে গিয়েছে। যদিও সেই টাকার অনেকটাই সে শোধ করেনি। তাই গোয়েন্দাদের দৃঢ় ধারণা, ৫০ হাজার টাকার জন্য খুন— এটা সত্যেন্দ্রের মিথ্যা কথা।

প্রশ্ন উঠছে, তা হলে সত্যটা কী? ঠিক কী কারণে দু’টি কিশোরকে তুলে নিয়ে গিয়ে মেরে ফেলা হল? সেই প্রশ্নের উত্তর মিলছে না। ভাড়াটে খুনিদের হোটেলে রাখার জন্য খুনের কিছু দিন আগে সত্যেন্দ্র একাধিক লোকের কাছ থেকে মোটা টাকা ধার নিয়েছিল বলে গোয়েন্দাদের দাবি। সিআইডি সূত্রের খবর, জেরার মুখে সত্যেন্দ্র দাবি করেছে, মাস চারেক আগে খুনের জন্য সে কিছু টাকা অগ্রিমও দিয়েছিল। যদিও ওই ঘটনায় অন্যেরা তা অস্বীকার করেছে।

গোয়েন্দা অফিসারদের অনুমান, সত্যেন্দ্র একা নয়, এই খুনের পিছনে আরও কেউ থাকতে পারে এবং তাকে বাঁচানোর জন্যই সে মিথ্যে কথা বলছে। ওই দুই কিশোরের পরিবারের সম্পত্তিগত কোনও বিরোধ রয়েছে কি না, খোঁজ নিচ্ছে সিআইডি। একই সঙ্গে সত্যেন্দ্র কাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেছিল, তা-ও জানার চেষ্টা চলছে বলে সিআইডি সূত্রের খবর।

খুনের কারণ নিয়ে ধোঁয়াশা থাকলেও কী ভাবে ওই দু’জনকে খুন করা হয়েছে, সেই চিত্র পরিষ্কার হয়ে গিয়েছে তদন্তকারীদের কাছে। রবি ও সোমবার সত্যেন্দ্র-সহ ধৃতদের অকুস্থলে নিয়ে গিয়ে ঘটনার পুনর্নির্মাণ করেছে সিআইডি। এক তদন্তকারী জানান, খুনের সময় কার কী ভূমিকা ছিল, তা-ও স্পষ্ট হয়েছে।

সিআইডি-র দাবি, গাড়ির পিছনের আসনে বসে থাকা অভিযুক্তেরা মারধর এবং শ্বাসরোধ করে দুই কিশোরকে খুন করে। তার আগে অবশ্য তারা অন্ধকার হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করেছে। রাত নেমে আসার পরেই বাসন্তী হাইওয়ের ফাঁকা জায়গায় নিয়ে গিয়ে চলন্ত গাড়িতে খুন করা হয় দু’জনকে। পরে বসিরহাটের হাড়োয়া থানার কুলটি ও ন্যাজাট থানার শিরীষতলা এলাকায় দেহ ফেলে দেওয়া হয়। গোয়েন্দারা জানিয়েছেন, সন্দেহ যাতে কম হয়, সেই জন্য দু’টি দেহ দু’টি আলাদা জায়গায় ফেলেছিল অভিযুক্তেরা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.