Satyajit Ray 101st birthday: ওরা সেকেলে নয়, সত্যজিৎ রায়ের ছবির নারীদের আজও বাঙালি বাড়িতে খুঁজে পাওয়া যাবে

সোমবার, ২ মে সত্যজিৎ রায়ের জন্মবার্ষিকী। আজ আবার ফিরে দেখার পালা ওঁর কালজয়ী সব সৃষ্টিকে নতুন করে, নতুন আঙ্গিকে। ওঁর অগুনতি কাজ নিয়ে আজও চর্চা হয়, আলোচনা হয় আর সেই কাজগুলো অনুপ্রেরণা দেয় নবীন প্রতিভাদের। সত্যজিৎ রায়ের সিনেমা বললে কিছুতেই যেন অস্বীকার করা যায় না ওঁর সিনেমার নারী চরিত্রদের। কখনও মাধবী মুখোপাধ্যায়, শর্মিলা ঠাকুর, কখনও বা স্বাতীলেখা সেনগুপ্ত কিংবা অপর্ণা সেন… বর্তমান সামাজিক আয়নায় একই রকম উজ্জ্বল সেই চরিত্রগুলো। এ রকম সাতটি সিনেমার কথা আমরা আলোচনা করব যেখানে তথাকথিত নারী চরিত্র পার্শ্বচরিত্র না হয়ে সিনেমার কেন্দ্র হয়ে উঠেছে।

১৯৬৩ সালে মুক্তি পাওয়া ‘মহানগর’ সিনেমাটির কথা যদি মনে করা যায়, মাধবী মুখোপাধ্যায় অভিনীত আরতি অবাক করে দিয়েছিল মধ্যবিত্ত বাঙালিকে। বদলে যাওয়া আর্থ সামাজিক প্রেক্ষাপটে বাড়ির অন্দরমহল থেকে বেরিয়ে চাকরি করা পৃথিবীর সঙ্গে মধ্যবিত্তের অন্দরমহলকে আলাপ করায় আরতি। ষাটের দশকে বাঙালি পরিবারের চাকরি করার মেয়ে অভাবনীয় ছিল। 

মহানগর’ যদি শহুরে সাহসী মেয়েকে দেখিয়ে থাকে তাহলে ১৯৬০ সালে রিলিজ করা ‘দেবী’ দেখিয়েছিল কুসংস্কার আর সামাজিক অবক্ষয়ের বিরুদ্ধে ঘুরে দাঁড়ানো মেয়েকে। শর্মিলা ঠাকুর অভিনীত ১৭ বছরের দয়াময়ী আজও স্বকীয় হয়ে রয়েছে। প্রভাতকুমার মুখোপাধ্যায়ের ছোটগল্প প্রাণ পেয়েছিল সত্যজিৎ রায়ের ভাবনায় আর দয়াময়ী চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়েছিল অবক্ষয়।

১৯৬১ সালে রিলিজ করা ‘তিনকন্যা’-কে ভোলা যায় না কোনওভাবেই। ‘পোস্টমাস্টার’, ‘মণিহারা’ বা ‘সমাপ্তি’— তিনটে গল্পের প্রাণভোমরা রতন, মণিমালিকা এবং মৃন্ময়ী। চন্দনা বন্দ্যোপাধ্যায় অভিনীত রতন চরিত্র যখন পোস্টমাস্টারের কাছে পড়তে, লিখতে শেখে, তখন সিনেমা আর বাস্তব মিলেমিশে একাকার হয়ে যায়। কণিকা মজুমদারের মণিমালিকা চরিত্র পর্দায় দেখায় কীভাবে একটি বড় ম্যানসনে এক বিবাহিতা অথচ একাকী মহিলা নিজের অলঙ্কারের মধ্যে নিজের মুহূর্তকে খুঁজে পায়। আবার অপর্ণা সেন অভিনীত মৃন্ময়ীর জীবন কীভাবে দোলনা আর কাঠবেড়ালির পৃথিবী থেকে ভালোবাসায় রূপান্তরিত হয়, তার গল্প বলেন সত্যজিৎ রায়।

১৯৬৪ সালে রিলিজ করা ‘চারুলতা’, যা সত্যজিৎ রায়ের অন্যতম সেরা কাজ বলা যেতে পারে, সেখানে মাধবী মুখোপাধ্যায়ের অভিনীত চারু চরিত্র অনন্য সবার থেকে। চারুর মধ্যে যে দোটানা কাজ করেছে, স্বামীর প্রতি দায়িত্ব আবার ঝড়ো হাওয়ার মতো নিজের সমবয়সী দেওরের প্রতি অদ্ভুত আকর্ষণ— আপামর দর্শককুলকেও প্রশ্নের মুখে ঠেলে দিয়েছে। ‘ঘরে বাইরে’ বিমলাকে ভোলা কোনও ভাবেই সম্ভব নয়! স্বাতীলেখা চট্টোপাধ্যায় অভিনীত এই চরিত্র যেভাবে নিজের পারিবারিক জীবনের বাইরের পৃথিবীকে দেখতে আগ্রহী হয়, কোথাও না কোথাও যেন সাধারণ বাঙালি মেয়ে পর্দায় জলজ্যান্ত হয়ে দেখা দেয় সত্যজিৎ রায়ের নির্দেশনায়।

১৯৭০ সালে মুক্তি ‘অরণ্যের দিনরাত্রি’ সিনেমার ত্রয়ী নারী চরিত্র দুলি, জয়া ও অপর্ণা স্বকীয় ভূমিকায়। সিমি গারেওয়ালের মূলবাসী মহিলা দুলি নিজের স্বল্প পরিসরে দেখিয়েছিল নিজের সমাজের প্রতিচ্ছবি আর স্বাধীনতা। কাবেরী বসু অভিনীত জয়া চরিত্রের মধ্যে যে দ্যোতনা ছিল, তা গড়পড়তা সিনেমার দিক থেকেই বিরল বলা যেতে পারে। বুদ্ধিমতী, বাস্তববাদী শর্মিলা ঠাকুর অভিনীত অপর্ণা আবার বাকিদের থেকে আলাদা আর সহজেই দর্শকের কাছে পৌঁছে দেয় বদলে যাওয়া শহুরে জীবনধারণা নিয়ে।

এই আলোচনা অবশ্যই অসমাপ্ত থাকবে যদি না ‘পথের পাঁচালী’র দুর্গা আর সর্বজয়ার কথা বলা না হয়। অভাব-অনটন, গ্রাম্য জীবনের টানাপোড়েন আর গভীর বাস্তবতার মধ্যে মা-মেয়ের চরিত্রের মধ্যে যে মুন্সিয়ানা দেখিয়েছেন সত্যজিৎ রায়, তার সত্যি জুড়ি মেলা ভার। অপুর সংসারের শর্মিলা ঠাকুর অভিনীত অপর্ণা যখন স্বামীকে সিগারেটের প্যাকেটে লিখে দেয় সিগারেট কম খাওয়ার কথা, তখন অচিরেই যেন সেই চরিত্র মন ছুঁয়ে যায় সব বাঙালি দর্শকের।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.