কলকাতা,১০ই মে। গতকাল কলকাতার ‘ইন্ডিয়ান কাউন্সিল অফ কালচারারাল রিলেশনস'(ICCR) -এর সত্যজিৎ রায় সভাগৃহে, ‘সংস্কার ভারতী পশ্চিমবঙ্গ’-এর পক্ষ থেকে ‘কবি প্রণাম, ঐ মহামানব আসে’ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। বর্তমানে ভারত-পাকিস্থান যুদ্ধ চলছে। সেই যুদ্ধের আবহে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের স্বদেশ চিন্তা আপামর বাঙালি তথা ভারতবাসীর কাছে পৌঁছে দিতেই সংস্কার ভারতীর এই আয়োজন।
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর শুধু বিংশ শতাব্দী নয়, এযাবতকাল ভারতে যতজন মনীষী জন্মগ্রহণ করেছেন তাদের মধ্যে অন্যতম শ্রেষ্ঠ ব্যক্তিত্ব। গান, গল্প, কবিতা, উপন্যাস, প্রবন্ধ, নাটক, চিত্রাঙ্কন প্রভৃতি অর্থাৎ সাহিত্যের প্রায় সব অঙ্গনেই তাঁর সহজ বিচরণ ক্ষেত্র ছিল। তিনি ছিলেন অন্যতম শ্রেষ্ঠ একজন দার্শনিক।
এই মহামানবের ১৬৫ তম জন্মদিন পালনের উদ্দেশ্য নিয়েই ‘সংস্কার ভারতী পশ্চিমবঙ্গ’ ও ‘ICCR’ যৌথ উদ্যোগে আয়োজন করেছিল ‘কবি প্রণাম’ অনুষ্ঠানের। অনুষ্ঠানের শুরুতেই সংস্কার ভারতীর ভাব সঙ্গীতের (‘সাধয়তী সংস্কার ভারতী’)
নৃত্য পরিবেশনের মাধ্যম দিয়ে অনুষ্ঠানের শুভ সূচনা হয়। তারপর কবি গুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের প্রতিকৃতিতে উপস্থিত অতিথিরা সবাই মিলে পুষ্পার্ঘ্য নিবেদন করেন।
এ দিনের অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন নৃত্য সাধিকা পদ্মশ্রী মমতা শঙ্কর। সংস্কার ভারতীর পক্ষ থেকে তাকে সম্মান জ্ঞাপন করা হয়।অনুষ্ঠান প্রসঙ্গে তিনি বলেন, তিনি ঈশ্বরে বিশ্বাস করেন। ঈশ্বরই যেন তাকে দিয়ে সব কাজ করিয়ে নেন। এই যে যুদ্ধ লেগেছে, এর পেছনেও ভালো কিছু আছে নিশ্চয়ই। ঈশ্বর কি খেলা খেলছেন তা আমরা জানি না। এই যুদ্ধের আবহে সব রাজনৈতিক দল এক হয়ে গেছে। আমাদের এই দেশকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে সবাই মিলে। সংস্কার ভারতীর সাথে যৌথ উদ্যোগে কর্মশালার আয়োজন করবেন বলেও জানান তিনি।
ICCR-এর জোনাল ডিরেক্টর রোহিণী নন্দন গোস্বামী এদিনের অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন, তাকেও সংস্কার ভারতীর পক্ষ থেকে সম্মান জ্ঞাপন করা হয়। যুবকদের তিনি রবীন্দ্র চিন্তা ও দর্শনে উদ্বুদ্ধ হবার জন্য আহ্বান করেন। তিনি বলেন, বিশ্বের এমন কোনো দেশ নেই যেখানে রবীন্দ্র চর্চা হয় না। আমাদের উচিত রবীন্দ্রনাথের চিন্তা ভাবনা দ্বারা নতুন যৌবনের দূতদের জাড়িত করা। পাড়ায় পাড়ায় হোক রবীন্দ্র চর্চা, গড়ে উঠুক সাংস্কৃতিক পরিবেশ।
এছাড়াও মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন সংস্কার ভারতীর অখিল ভারতীয় কেন্দ্রীয় সম্পাদিকা নীলাঞ্জনা রায়, সংস্কার ভারতী পশ্চিমবঙ্গের – সভাপতি স্বরূপ প্রসাদ ঘোষ ও কার্যকরী সভাপতি সুভাষ ভট্টাচার্য।
নীলাঞ্জনা রায় বলেন, আমি ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা করি – যে সমস্ত সৈনিকরা অতন্দ্র প্রহরীর মতো জেগে দেশকে রক্ষা করছেন, শত্রুর আক্রমণে সামনে বুক পেতে দিচ্ছেন তাদেরকে ঈশ্বর রক্ষা করুন। আমাদের দেশের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে ঈশ্বর শক্তি দিন, তিনি ভারতকে যাতে সুরক্ষিত রাখতে পারেন।
অধ্যাপক স্বরূপ প্রসাদ ঘোষ বলেন, আমরা একটা সংকটপূর্ণ পরিস্থিতিতে রবীন্দ্র জয়ন্তী পালন করছি, যেখানে আমাদের দেশ যুদ্ধে জড়িত হয়েছে একটি বর্বর দেশের সঙ্গে। আমাদের সৈনিকরা দেশের পশ্চিমপ্রান্তে যুদ্ধ করছে। আমি ভগবানের কাছে প্রার্থনা করি, যাতে আমাদের দেশ জয়ী হয় এবং এই সংকটময় পরিস্থিতি থেকে বেরিয়ে আসতে পারে ভগবান শিবের আশীর্বাদে।
সুভাষ ভট্টাচার্য বলেন, আজ সংস্কার ভারতী পশ্চিমবঙ্গের ৮ টি সাংগঠনিক জেলা এই অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করেছে। পাঁচটি জেলার শিল্পীরা রবীন্দ্র সঙ্গীত পরিবেশন করেছে ও তিনটি জেলার শিল্পীরা রবীন্দ্র নৃত্য পরিবেশন করেছে। আমাদের সংস্কার ভারতী পশ্চিমবঙ্গের সব জেলায় কাজ করে চলেছে। আমি আশাকরি সংস্কার ভারতীর মাধ্যমে ভারতীয় সংস্কৃতির প্রচার ও প্রসার আগামী দিনে আরও বৃদ্ধি ঘটাতে পারব।
এই দিনের অনুষ্ঠানের সঞ্চালনা ছিলেন সংস্কার ভারতী পশ্চিমবঙ্গের সাধারণ সম্পাদক তিলক সেনগুপ্ত ও সুমনা পাল ভট্টাচার্য।
অনুষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনায় ছিলেন মেহেন্দি চক্রবর্তী, মহাশ্বেতা চক্রবর্তী, গোপাল কুন্ডু, রীণা ব্যানার্জি. গৌরী সেনগুপ্ত, অমিতাভ মুখোপাধ্যায়, মিলন খামারিয়া প্রমুখ প্রদেশ কার্যকর্তা বৃন্দ।
পারুল খামারিয়া