পুলিশের নাকের ডগা দিয়ে অবৈধভাবে পাচার হচ্ছে বালি ও পাথর। শাসক দলের প্রত্যক্ষ মদতে মাফিয়াদের ভয়ে মুখ খুলতে সাহস পাচ্ছেন না গ্রামবাসীরা। অবৈধভাবে পাচারের ফলে দুর্ঘটনায় মানুষের মৃত্যু হলেও প্রতিবাদ করার সাহস পান না গ্রামবাসীরা। অবৈধভাবে বালি তোলার ফলে দুর্বল হয়ে পড়েছে দুই রাজ্যের যোগাযোগ রক্ষাকারী সংযোগকারী সেতু। অভিযোগ খতিয়ে দেখার আশ্বাস দিয়েছেন রামপুরহাট ১ নম্বর ব্লকের বিডিও অঙ্কুর মিত্র।
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, বীরভূমের রামপুরহাট থানার ঝাড়খণ্ড সীমান্তবর্তী গ্রাম শালবুনি। রামপুরহাট ১ নম্বর ব্লকের নারায়ণপুর অঞ্চলের ওই গ্রামের পাশ দিয়ে বয়ে গিয়েছে ব্রাহ্মণী নদী। ঝাড়খণ্ডের পাকুরিয়া থানার সঙ্গে বীরভূমের রামপুরহাট থানার যোগসূত্র গড়তে একটি সেতু নির্মাণ করা হয়েছে নদীর উপর। অবৈধভাবে বালি তোলার ফলে সেই সেতু এখন দুর্বল হয়ে পড়েছে। সেই দুর্বল সেতুর উপর দিয়েই ঝাড়খণ্ডের পাথর বোঝাই লরি ঢুকছে বীরভূমের রামপুরহাটে।
জানা গিয়েছে, শালবুনি নদী থেকে যথেচ্ছ বালি তোলার ফলে নদী সংলগ্ন এলাকায় বন্যার আশঙ্কাও দেখা দিয়েছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক শালবুনি গ্রামের বাসিন্দারা জানিয়েছেন, প্রতিদিন প্রায় ৪০০ ট্রাক্টর বালি বোঝাই করে রনিগ্রাম হয়ে জয়পুর গ্রামের ধারে মজুত করছে। এরপর সেখান থেকে বড় লরিতে বালি বোঝাই করে চলে যাচ্ছে জেলা ছাড়িয়ে ভিন জেলায়। এছাড়া ঝাড়খণ্ডের পাকুরিয়া থানার খাকসা খাদান এলাকা থেকে পাথর বোঝাই লরি দুর্বল সেতুর উপর দিয়ে রামপুরহাট থানা হয়ে চলে যাচ্ছে ভিন জেলায়। এই পাচার চক্রের সঙ্গে শালবুনি গ্রামের কয়েকজন যুবকের সাহায্যে চলছে মাফিয়া রাজ। যোগ রয়েছে শাসক দলেরও। স্কুল, স্বাস্থ্যকেন্দ্র এমনকি পঞ্চায়েতের পাশ দিয়ে বালি বোঝাই ট্রাক্টর বেপরোয়া ভাবে যাতায়াত করলেও সকলেই থাকেন ধৃতরাষ্ট্র হয়ে। বেপরোয়া ট্রাক্টর চলাচলের ফলে দুর্ঘটনায় মৃত্যু হচ্ছে মানুষের। কিন্তু একদিকে মানুষের দারিদ্রতা অন্যদিকে মাফিয়াদের হুমকিতে অর্থের বিনিময়ে স্বজনদের মৃতদেহ বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছেন গ্রামবাসীরা।
ঝাড়খণ্ডের পাকুরিয়া থানা এলাকার বাসিন্দা কামদেব যাদব বলেন, “অবৈধভাবে বালি তোলার ফলে আমাদের সমস্যা হচ্ছে ঠিকই। কিন্তু মুখ খোলার উপায় নেই। বালি তোলার ফলে সেতু দুর্বল হয়ে যাচ্ছে। যে কোন দিন সেতু ভেঙ্গে পরতে পারে”।
স্থানীয় বাসিন্দা, রামপুরহাট ১ নম্বর পঞ্চায়েত সমিতির সদস্যা তৃণমূলের জ্যোস্না মাহাতর ছেলে সুমন্ত মাহাত বালি, পাথর পাচারের কথা স্বীকার করে নিয়েছেন। তিনি বলেন, “ঝাড়খণ্ড এলাকার নদী থেকে বালি পাথর বীরভূমে ঢুকছে অবৈধভাবে। নির্দিষ্ট ভাবে কেউ বালি তোলে না। যারা পারছে বালি তুলে নিয়ে চলে যাচ্ছে। প্রতিদিন বালি তোলা হচ্ছে ট্রাক্টরে”।
রামপুরহাট ১ নম্বর ব্লকের বিডিও অঙ্কুর মিত্র বলেন, “আমি নতুন যোগদান করেছি। ফলে বিষয়টি জানা নেই। খোঁজ নিয়ে দেখছি”। খোঁজ নিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন মহকুমা পুলিশ আধিকারিক ধীমান মিত্রও।