প্রতি ঘণ্টায় ছুটবে ২৪০ কিমি বেগে! পৃথক লাইনের খরচ কমিয়ে ‘হাইস্পিড’ বন্দে ভারত চায় রেল

বন্দে ভারত এক্সপ্রেস যে-প্রজাতি বা যে-প্রযুক্তির ট্রেন, তাতে গতিবেগের নিরিখে নিজেকে নিয়ত অতিক্রম করে চলার সামর্থ্য তার আছে বলে রেল শিবিরের অভিমত। এ-পর্যন্ত চালু সব বন্দে ভারতই ‘সেমিহাইস্পিড’ ট্রেন। এ বার ‘হাইস্পিড’ বন্দে ভারত চালু করার জন্য তার উপযোগী রেললাইন তৈরির উদ্যোগ শুরু হয়েছে। সারা দেশে সব লাইনেই যাতে সব ট্রেন ছুটতে পারে, সেই জন্য চালু করা হয়েছিল ব্রডগেজ লাইন। বন্দে ভারত আসার পরে এখন আবার নতুন করে চিন্তাভাবনা শুরু করছে কেন্দ্র, কারণ, ব্রডগেজ লাইন দ্রুততর বন্দে ভারতের গতিবেগ ধারণ করতে পারবে না।

রেল মন্ত্রকের খবর, দেশে চালু ব্রডগেজ রেললাইনে ঘণ্টায় সর্বাধিক ১৮০ কিলোমিটার গতির বন্দে ভারত ছুটতে পারে। সেগুলো বন্দে ভারত এক্সপ্রেসের ‘সেমিহাইস্পিড’ সংস্করণ। এক ধাপ এগিয়ে এ বার বন্দে ভারতের ‘হাইস্পিড’ সংস্করণ চালু করতে চাইছে রেল। ঘণ্টায় ২৪০ কিলোমিটার গতিবেগের ওই হাইস্পিড বন্দে ভারতের জন্য পৃথক ট্র্যাকের প্রয়োজন হবে বলে রেল মন্ত্রক সূত্রে জানা গিয়েছে।

ভারতে এখন মুম্বই-আমদাবাদ রুটে এক লক্ষ কোটি টাকা ব্যয়ে ৫০০ কিলোমিটার দীর্ঘ হাইস্পিড ব্রডগেজ রেল প্রকল্প নির্মাণের কাজ চলছে। যার অর্থ, প্রতি কিলোমিটারে ২০০ কোটি টাকা ব্যয় করলেও সেখানে হাইস্পিড বন্দে ভারত চলতে পারবে না। হাইস্পিড চালাতে লাগবে স্ট্যান্ডার্ড-গেজ। সেই রেললাইন নির্মাণের খরচ কিলোমিটার-প্রতি ১০০ কোটি টাকায় নামিয়ে আনতে চাইছে রেল। তাতে এক ঢিলে দুই পাখিই মরবে। হাইস্পিড ট্রেন ছুটবে আবার রেল প্রকল্পের খরচও কমবে।

রেলকর্তারা জানান, এই মুহূর্তে স্ট্যান্ডার্ড-গেজ তৈরি হচ্ছে উত্তরপ্রদেশের গাজিয়াবাদ ও মেরঠের মধ্যে। ‘র‌্যাপিড রেল ট্রানজ়িট সিস্টেম’-এর মাধ্যমে সেই নির্মাণে প্রতি কিলোমিটারে খরচ হচ্ছে প্রায় ৪০০ কোটি টাকা। অথচ সেখানে ঘণ্টায় সর্বাধিক ১৮০ কিলোমিটারের বেশি গতিতে ট্রেন ছুটতে পারবে না।

বছর দুয়েকের মধ্যে নতুন হাইস্পিড ট্রেনের নকশা চূড়ান্ত করে প্রথম ‘প্রোটোটাইপ’ বা নমুনা ট্রেন প্রকাশ্যে আনা হতে পারে বলে রেল সূত্রের খবর। সেই জন্য বিভিন্ন শহরের মধ্যে বন্দে ভারত এক্সপ্রেসের হাইস্পিড সংস্করণ চালু করার পরিকল্পনা বাস্তবায়িত করার লক্ষ্যে প্রকল্প রূপায়ণের খরচ উল্লেখযোগ্য হারে কমিয়ে আনতে চাইছেন রেল-কর্তপক্ষ। ভবিষ্যতের কথা মাথায় রেখে দিল্লি-অমৃতসর, মুম্বই-হায়দরাবাদ, চেন্নাই-মহীশূর এবং বারাণসী-কলকাতা রুটে হাইস্পিড রেল প্রকল্প রূপায়ণের জন্য প্রয়োজনীয় সমীক্ষা শুরু করার কথা জানিয়েছে রেল। সব ঠিকঠাক থাকলে ২০২৬ সাল নাগাদ মুম্বই-আমেদাবাদ রুটে হাইস্পিড ট্রেন ছোটার কথা।

রেল মন্ত্রক সূত্রে জানা গিয়েছে, দেশে জাতীয় সড়ক নির্মাণের খরচের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে প্রতি কিলোমিটার হাইস্পিড রেলের ট্র্যাক নির্মাণের খরচ ১০০ কোটি টাকায় নামিয়ে আনার লক্ষ্যমাত্রা ধার্য হয়েছে। সেই জন্য ট্রেনের নির্ধারিত গতিবেগ বজায় রেখে পরিকল্পনায় কী ধরনের পরিবর্তন আনা যেতে পারে, সেই বিষয়ে জোর ভাবনাচিন্তা চলছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.