গরু পাচার মামলায় ধৃত অনুব্রত মণ্ডলের মেয়ে সুকন্যা মণ্ডলের নামে এ বার পঞ্চম লটারির হদিস পাওয়া গিয়েছে বলে দাবি করল সিবিআই। কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থাটির দাবি, সুকন্যার নামে ৫০ লক্ষ টাকার একটি নতুন লটারির সন্ধান পাওয়া গিয়েছে। গরু পাচার মামলার তদন্তে নেমে ইতিমধ্যেই লটারি-যোগের দাবি করেছে সিবিআই। অনুব্রত এবং সুকন্যার নামে আগেই ৪টি লটারির হদিস পাওয়া গিয়েছে বলে দাবি করেছিল তারা।
সিবিআই আগেই দাবি করেছিল, চলতি বছরে লটারির পুরস্কারের অর্থমূল্য বাবদ বিপুল অঙ্কের টাকা তৃণমূলের বীরভূম জেলা সভাপতি অনুব্রত এবং তাঁর মেয়ে সুকন্যার ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে ঢুকেছে। ওই দু’জনের দু’টি ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে পুরস্কার বাবদ মোট ৫১ লক্ষ টাকা ঢুকেছে দাবি। এ ছাড়া, বছর তিনেক আগেও অনুব্রতের অ্যাকাউন্টে ১০ লক্ষ টাকা এসেছিল লটারি মারফতর। বার বার লটারি জেতার পিছনে কি বরাতজোর না অন্য কোনও কারণ রয়েছে, তা-ও খতিয়ে দেখছে সিবিআই। সিবিআইয়ের তদন্তকারীদের এ বার দাবি, ২০ জানুয়ারি লটারির থেকে ৫০ লক্ষ টাকা জিতেছিলেন সুকন্যা। এবং তাঁর ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টের তথ্য খতিয়ে দেখে তা জানা গিয়েছে।
প্রসঙ্গত, জানুয়ারিতে প্রথম বার অনুব্রতের লটারি জেতার বিষয়টি নজরে এসেছিল বলে দাবি। সে সময় রাজ্যের এক জনপ্রিয় লটারি সংস্থার ওয়েবসাইটে ১ কোটি টাকার লটারি বিজেতা হিসেবে অনুব্রতের নাম ও ছবি দেখা গিয়েছিল। অনুব্রত নিজে অবশ্য লটারি জেতার কথা কখনও স্বীকার করেননি। ওই ঘটনার তদন্তে নেমে গত বোলপুরের ‘রাহুল লটারি’ নামে একটি লটারির দোকানে হানা দিয়েছিল সিবিআই। এমনকি, ওই দোকানমালিক শেখ আইনুল-সহ আরও দু’জন লটারি ব্যবসায়ীকে শান্তিনিকেতনের রতনকুঠিতে এবং সিবিআই অস্থায়ী ক্যাম্পে জিজ্ঞাসাবাদও করা হয়। পাশাপাশি, এ নিয়ে আসানসোল সংশোধনাগারে গিয়েও অনুব্রতকে জেরা করেছেন তদন্তকারীরা।
সিবিআই সূত্রের খবর, অনুব্রত এবং সুকন্যার ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টের তথ্য খতিয়ে দেখে তাঁদের জেতা আরও ৩টি লটারির হদিস পাওয়া গিয়েছে বলে দাবি তদন্তকারীদের। সেই ৩টি লটারির টিকিটও বোলপুর এবং লাগোয়া এলাকা থেকে কেনা হয়েছিল।
সিবিআইয়ের দাবি, সেই লটারি বাবদ সুকন্যার অ্যাকাউন্টে দু’দফায় ২৫ লক্ষ ও ২৬ লক্ষ টাকা মিলিয়ে মোট ৫১ লক্ষ টাকা এসেছে। অন্য দিকে, ২০১৯ সালে লটারির মাধ্যমে অনুব্রতের অ্যাকাউন্টেও ১০ লক্ষ টাকা ঢোকে বলে সিবিআই সূত্রের খবর। তবে ওই লটারি অনুব্রত সরাসরি কিনেছিলেন, নাকি অন্য কারও জেতা টিকিট কিনে নিয়েছিলেন— তা স্পষ্ট নয়।
প্রসঙ্গত, গরুপাচার মামলায় ১১ আগস্ট গ্রেফতার হন অনুব্রত। তার পর থেকে আসানসোল সংশোধনাগারে রয়েছেন তিনি। ২৯ অক্টোবর আসানসোল বিশেষ সিবিআই আদালতে তাঁর শুনানি হয়েছিল। ওই দিন আবার অনুব্রতের জেল হেফাজতের নির্দেশ দিয়েছিলেন বিচারক। দু’পক্ষের সওয়াল- জবাবের পর ১১ নভেম্বর, শুক্রবার আবার আসানসোল বিশেষ সিবিআই আদালতে অনুব্রতকে নিয়ে আসা হবে।
এই মামলার তদন্ত কত দিন চলবে, ২৯ অক্টোবর সিবিআইয়ের কাছে তা জানতে চেয়েছিলেন বিশেষ আদালতের বিচারক রাজেশ চক্রবর্তী। এই মামলায় যদি কোনও বড়সড় অগ্রগতি না হয়, তবে দু’মাসের মধ্যে তাদের তদন্ত শেষ হয়ে যাবে বলে আদালতকে জানিয়েছিল সিবিআই। অন্য দিকে, গরু পাচার মামলায় আর এক অভিযু্ক্ত তথা অনুব্রত মণ্ডলের দেহরক্ষী সয়গল হোসেনকে দিল্লিতে নিয়ে গিয়েছে এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ইডি)। এই মুহূর্তে দিল্লির তিহাড় জেলে রয়েছেন সহগল। অনুব্রতের মেয়ে সুকন্যাকেও দফায় দফায় জিজ্ঞাসাবাদ করেছে ইডি। ইডি সূত্রে খবর, তাঁদের কাছ থেকে যে সমস্ত তথ্য পাওয়া গিয়েছে, তার ভিত্তিতে অনুব্রতকেও জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে।