গ্রুপ ই-র চারটি দলেরই সুযোগ ছিল ইউরোর নক আউটে যাওয়ার। দু’ম্যাচ পরে চার দলই ছিল ৩ পয়েন্টে। সেই কারণে, শেষ ম্যাচে পরিকল্পনা করে খেলল তারা। আক্রমণ করলেও রক্ষণ জমাট রাখল সবাই। খুব বেশি ওপেন ফুটবল হল না। ইউক্রেন বাদি বাকি তিনটি দলেরই লক্ষ্য ছিল ড্র। ইউক্রেন আক্রমণ করলেও বেলজিয়ামের রক্ষণ ভাঙতে পারল না। তার খেসারত দিতে হল তাদের।
দু’টি ম্যাচই ড্র হল। বেলজিয়াম ও ইউক্রেন ম্যাচ গোলশূন্য শেষ হল। স্লোভাকিয়া বনাম রোমানিয়া ম্যাচ শেষ হল ১-১ গোলে। তার ফলে চার দলই শেষ করল ৪ পয়েন্ট। গোল পার্থক্যে গ্রুপ শীর্ষে থেকে প্রি কোয়ার্টার ফাইনালে গেল রোমানিয়া। দ্বিতীয় স্থানে শেষ করল বেলজিয়াম। তিন নম্বরে স্লোভাকিয়া। ৪ পয়েন্ট পেয়েও বিদায় নিল ইউক্রেন।
রোমানিয়ার বিরুদ্ধে আক্রমণাত্মক ফুটবল খেলেছিল বেলজিয়াম। কিন্তু গ্রুপের শেষ ম্যাচে ইউক্রেনের বিরুদ্ধে আবার সেই সুযোগ নষ্টের ফুটবলে ফিরে গেল তারা। একের পর এক সুযোগ তৈরি করলেন কেভিন দ্য ব্রুইন, টিয়েলেমেন্সরা। আর একের পর এক সুযোগ নষ্ট করলেন একাই রোমেলু লুকাকু। এ বারের ইউরোয় হয়তো তাঁর নামে গোল লেখা নেই। নইলে যে সব সুযোগ তিনি নষ্ট করলেন, তা ময়দানের ফুটবলে করলে মাঠ থেকে বেরাতে সমস্যায় পড়তেন ফুটবলার।
ম্যাচ শুরুর আগে গ্রুপের শীর্ষে ছিল বেলজিয়াম। তাই হয়তো খুব বেশি আক্রমণাত্মক ফুটবল খেলল না তারা। কিছুটা রক্ষণ জমাট রেখে এগোনোর চেষ্টা করল। অন্য দিকে ৩ পয়েন্ট নিয়েও গ্রুপে সবার নীচে ছিল ইউক্রেন। পরের রাউন্ডে যেতে হলে এই ম্যাচে জিততেই হত তাদের। ইউক্রেনের তাগিদই বেশি দেখা গেল। তাদের ওপেন ফুটবলের ফলে সুযোগ পেল বেলজিয়াম। কিন্তু প্রথমার্থে কোনও দলই গোল করতে পারেনি। প্রতিপক্ষ বক্সেই শেষ হয়ে যায় তাদের যাবতীয় চেষ্টা। দু’বার সরাসরি গোলরক্ষকের গায়ে মারেন লুকাকু।
দ্বিতীয়ার্ধে আরও খানিকটা ওপেন খেলা হয়। বেলজিয়ামের হয়ে নজর কাড়েন জেরেমি ডোকু। প্রান্ত ধরে বার বার উঠছিলেন তিনি। সুযোগ তৈরি করছিলেন। পরিবর্ত হিসাবে নেমে ক্যারাসকোও ভাল খেলছিলেন। ৭৪ মিনিটে বক্সের বাইরে থেকে ক্যারাসকোর শট ভাল বাঁচান ইউক্রেনের গোলরক্ষক ট্রুবিন। পরের আক্রমণেই সুযোগ তৈরি করে ইউক্রেন। কিন্তু বক্সে ঢুকে কাজের কাজ করতে পারেননি ডোভবিক।
সময় যত গড়াচ্ছিল তত চাপ বাড়ছিল ইউক্রেনের। তারা জানত জিততে না পারলে ৪ পয়েন্ট নিয়েও বিদায় নিতে হবে। ৮৩ মিনিটের মাথায় কর্নার থেকে সরাসরি গোলে মারেন মালিনোস্কি। ভাল বাঁচান বেলজিয়ামের গোলরক্ষক কাসটিলস। আর একটু হলেই বল গোলে ঢুকে যাচ্ছিল। ৮৬ মিনিটে প্রতি আক্রমণ থেকে সুযোগ পায় বেলজিয়ান। চার জন ফুটবল বক্সে ঢুকেও গোল করতে পারেননি।
সংযুক্তি সময়ে আরও একটি সুযোগ পায় ইউক্রেন। বক্সে ঢুকে গোলরক্ষককে একা পেয়েও গোল করতে পারেননি ডোভবিক। গোলরক্ষকের হাতে মারেন তিনি। শেষ পর্যন্ত খেলা ড্র হলেও শেষ ১৫ মিনিটে বেলজিয়ামের রক্ষণ যা চাপে পড়ল তা চিন্তায় রাখবে ফিফা র্যাঙ্কিংয়ে তিন নম্বরে থাকা দলকে।
তুলনায় অনেক বেশি আক্রমণাত্মক খেলা হল স্লোভাকিয়া বনাম রোমানিয়া ম্যাচে। শুরু থেকেই বক্স থেকে বক্সে আক্রমণ। ২৩ মিনিটে গোল করে এগিয়ে যায় স্লোভাকিয়া। বাঁ প্রান্ত থেকে বক্সে বল ভাসান জুরাজ কুকা। হেডে গোল করেন ওন্দ্রেজ ডুডা। পিছিয়ে পড়লেও হাল ছাড়েনি রোমানিয়া। পাল্টা আক্রমণের পথে যায় তারা। প্রথমার্ধেই সুযোগ তৈরি করে তারা। ৩৩ মিনিটের মাথায় ইয়ানিস হাজিকে ফাউল করায় পেনাল্টি পায় রোমানিয়া। ভার প্রযুক্তি ব্যবহার করে পেনাল্টি দেন রেফারি। জোরালো শটে গোল করে সমতা ফেরান ডেনিস ড্রাগুস। ১-১ গোলে বিরতিতে যায় দু’দল।
দ্বিতীয়ার্ধে অবশ্য দু’দলের আক্রমণ কিছুটা কমে। মাঝে বেশ কিছু ক্ষণ জোরে বৃষ্টি হচ্ছিল। তার ফলে খেলার গতিও কিছুটা কমে। বেলজিয়াম-ইউক্রেন ম্যাচ ০-০ থাকায় এই দুই দলও কিছুটা পরিকল্পনা করে খেলছিল। ফলে মাঝমাঠেই খেলা হচ্ছিল। খুব বেশি সুযোগ তৈরি হয়নি। শেষ পর্যন্ত ১-১ গোলে শেষ হয় খেলা। দু’দলই জায়গা করে নেয় প্রি-কোয়ার্টার ফাইনালে।