বিয়াল্লিশ বছর বয়স হল, কোনও দিন এমন অসহায় অবস্থায় পড়িনি। সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত ঠা ঠা রোদ আর গুমোট গরমে দাঁড়িয়ে রইলাম। তার পরে শুরু হল ঝড়বৃষ্টি। দু’টো ছোট ছোট ছেলে আর স্ত্রীকে নিয়ে ঘণ্টার পর ঘণ্টা ধরে এমন অসহায় অনিশ্চিত অপেক্ষা আগে কখনও করেছি বলে মনে পড়ে না। নিজেদের কথা বাদই দিলাম। ছেলে দু’টোর মুখে একটু বিস্কুট, এক ফোঁটা জলও তুলে দিতে পারিনি।
আমি একা নই। বৃহস্পতিবার এমনই দুরবস্থা হল হাজার হাজার মানুষের। কিন্তু আমাদের কী দোষ!
আমার বাড়ি দমদমে। মঙ্গলবার নিজেই গাড়ি চালিয়ে স্ত্রী-সন্তানকে নিয়ে দিঘা বেড়াতে গিয়েছিলাম। আজ ভোরে ওখান থেকে বেরিয়ে পড়ি। ভেবেছিলাম, সময়মতো বাড়ি ফিরে, অফিসে যাব। সকাল সাড়ে ১০টার মধ্যে ২০০ কিলোমিটার পথ চলে আসি। কিন্তু বাড়ির এত কাছে এমন দুর্ভোগ অপেক্ষা করছে, কে জানত!
শুনলাম, সামনে ডোমজুড়ের অঙ্কুরহাটি মোড়ে অবরোধ করেছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। গাড়িতে যেটুকু জল ছিল, বেলা ১২টার মধ্যে শেষ। তেষ্টায় ছাতি ফেটে যাচ্ছে। প্রবল গরমে ছেলে দু’টো জলের জন্য হাহাকার করেছে। খিদের জ্বালায় কান্নাকাটি করে একটা সময়ে মায়ের কোলে ঘুমিয়ে পড়েছে। আশপাশে কোনও দোকান নেই। দু’কিলোমিটার হেঁটে যদিও বা একটা দোকান পেলাম, সব খাবার শেষ। জল-বিস্কুট পর্যন্ত মেলেনি। আশপাশের গাড়িতেও জলের আকাল। কেউ একটু জল দিতে চাইছেন না। পুলিশ যেন নীরব দর্শক। তাদের সাহায্যও পেলাম না। গাড়ি ঘোরানোরও উপায় নেই। টানা সাত ঘণ্টা এ ভাবেই আছি। সন্ধ্যায় ঝড়বৃষ্টি। অসহায়ের মতো সময় কাটছে।
যাঁরা অবরোধ করছেন, তাঁরা মানুষের কথা এতটুকু ভাববেন না!
কী করব, কিছু বুঝতে পারছি না। শুনছি, ২০ কিলোমিটার রাস্তা জুড়ে গাড়ির লাইন। কলকাতাও অবরুদ্ধ। মাঝেমধ্যে মনে হচ্ছে, গাড়ি ফেলে রেখে হাঁটা লাগাই। বাড়িতে বয়স্ক বাবা-মা রয়েছেন। তাঁরা চিন্তা করছেন। ফোন করে জানতে চাইছেন, আর কতক্ষণ লাগবে বাড়ি ফিরতে? কী বলব তাঁদের? আমরাও কি জানি এর উত্তর?