কিছু বিষয় চট করে লেখা যায় না। তিন সপ্তাহ হয়ে গেল বাবা, তুমি নেই। এই ‘নেই’-এর কথা বুঝে নিতে সময় লাগল। অনেক কথা বলতে চাইছি, কিন্তু মনে হচ্ছে কারা যেন আমার বুকের উপর জোর করে দাঁড়িয়ে আছে। আমায় কথা বলতে দিচ্ছে না। কী অসহ্য যন্ত্রণা!
আবার মনে হচ্ছে, ভাগ্যিস আমি কেকে-র ছেলে! না, শুধুই সুস্থ জীবন পাওয়া নয়, পাওয়ার চেয়েও দেখা। তোমায় দেখা। তোমার অনুরাগীরা তোমায় কয়েক মুহূর্ত দেখার জন্য পাগল। আর আমি তো তোমায় রোজ দেখেছি। মানুষের জন্য তোমার ভালবাসা, তোমার স্বভাব, গানের মধ্যে নিজেকে ডুবিয়ে রাখা— কোথাও নেতিবাচক কোনও কিছু ছিল না তোমার মধ্যে। তাই গানের রাস্তা ধরে এগিয়ে গেলে!
আসলে তোমার মধ্যে দিয়ে আমার জীবন শুরু হয়েছিল। আজ যখন সেখান থেকে সরে গিয়ে তুমি দূরে গেলে, তখন যেন তোমায় আরও বড় করে দেখতে পেলাম। ছোটবেলা থেকেই দেখেছি, তুমি আমায় তোমার সমকক্ষ ভাবতে। আমার সিদ্ধান্তে তোমার খোলামেলা সমর্থন যেমন ছিল, তেমনই আমি কোথায় যাচ্ছি, কী করছি— সব খেয়াল রাখতে তুমি। মতপার্থক্য হলে নিজেই জানাতে যুক্তি দিয়ে। আমার সিদ্ধান্ত যাই হোক, তার সঙ্গে যেন আমি যুঝতে পারি, সেই বিশ্বাস তুমি দিয়ে গেলে। আমার অন্য বন্ধুদের সঙ্গে তাঁদের বাবার সম্পর্ক দেখে অবাক হতাম। তোমার-আমার সম্পর্ক তো তেমন ছিল না। বাবা কম, বন্ধু বেশি ছিলে তুমি।
মনে হয়, তুমি প্রকৃতির এক ভীষণ শক্তি। বাড়িতে সে হাসছে, মজা করছে, গান গাইছে। তাঁর গলা আমাদের হৃদয় যেমন তৈরি করেছে, তেমনই বিশ্বের বহু মানুষের জীবনের বিভিন্ন আবেগকে ধরে রেখেছে। ভরিয়ে দিয়েছে। এই উজ্জ্বল জীবনীশক্তি খুব দ্রুত পুড়ে গেল। আলো হয়ে চলে গেল।
বাবা, আলোকরেখার ঢেউ আছড়ে পড়ে, আবার তো ঢেউ হয়েও ফিরে আসে। আমি আসব বাবা, যে জায়গায় আবার ঢেউ ফিরবে, সেখানেই ঠিক দেখা হবে আমাদের।
নকুল কৃষ্ণ।