আজকে আমেরিকার বুকে ক্ষমতা হস্তান্তর ঘটা নিয়ে যেটা হয়েছে সেটা একটা অদ্ভুত ঘটনা। এ জিনিস পৃথিবীতে আগে কেউ দেখেনি বা আমেরিকার বুকেও কেউ দেখেনি। যেটা বলছিলাম, রাজনৈতিকভাবে আমেরিকা একটা খুব পোলারাইজড জায়গায় এসে দাঁড়িয়েছে। মানে, ডেমোক্র্যাটস রিপাবলিকান এর মধ্যে। ট্রাম্প নিজেও একজন ভীষণ রকমের পোলারাইজড ক্যারেক্টার। এরকম একটা ‘কাল্ট’ ফিগার বলে যেমন প্রচুর লোক ওঁর ফলোয়ার আছে, তেমন প্রচুর লোক ওর বিরোধী ও। তো এই ইলেকশন রেজাল্ট বেরোনোর পর প্রথম থেকেই ট্রাম্প এবং তার সমর্থকদের একটা বড় অংশ বলেছিল প্রচুর রিগিং হয়েছে ভোটে। ব্যালট ভোটিং প্রচুর হয়েছে এবারে, কারণ কোভিড ছিল।ওদের বক্তব্য হল সেখানে কারচুপি হয়েছে। যেখানে রিপাবলিকানদের ভোট ছিল সেগুলো কেটে দেওয়া হয়েছে। মানে, রাতারাতি ভোটের রেজাল্ট চেঞ্জ হয়ে গেছিল। একই সাথে ওদের বক্তব্য ডোমিনোজ এর যে মেশিন ভোটের জন্য ব্যবহার করা হয়েছিল সেটাতেও প্রচুর কারচুপি হয়েছে। তো এই রাগ তো জমে ছিল। গত পরশুদিন , সেনেটের ভোট ছিল জর্জিয়া স্টেট এ। দুটো সিট। হিসেব অনুযায়ী দুটোতেই যদি জিতে যায়, তাহলে ডেমোক্র্যাটরা সেনেটের কন্ট্রোল পেয়ে যেত। আর একটাতেও জিতলে রিপাবলিকানরা সেনেট ধরে রাখতে পারতো। শেষ অব্দি, রেজাল্ট বেরোনোর পর দেখা গেছে, খুব ক্লোজ ফাইট হলেও দুটো আসনেই ডেমোক্রেটরা জিতে গেছে। ‘দেন অল হেল ব্রোক লুজ’। ট্রাম্প ও ‘এই করা উচিত ওই করা উচিত’ জাতীয় উস্কানিমূলক কথাবার্তা টুইট করছিলেন। তো সেসব নিয়ে আলটিমেটলি ট্রাম্পের সমর্থকরা পুরো ক্যাপিটাল হিল বা হোয়াইট হাউসে (ওয়াশিংটন ডিসিতে) পিস্তল নিয়ে (এখানে তো সকলেরই বন্দুক আছে), ঢুকে, ভাঙচুর করেন আগুন লাগিয়ে দেন। দাঙ্গা-হাঙ্গামার পরিস্থিতি তৈরি করেন। তো এটা হাস্যকর রকমের অসভ্যতা। আমেরিকার ইতিহাসে কেউ এ জিনিস দেখেনি। ট্রাম্পও ডেমোক্রেটদের উইনিং সার্টিফিকেট দিতে নিষেধ করেছিলেন বলে শোনা যাচ্ছে। সব মিলিয়ে খুব অনভিপ্রেত ঘটনা।
এই পরিস্থিতিতে দাঁড়িয়ে মনে হচ্ছে মোদীজি সত্যিই একজন বিশ্বনেতা। ওনার থেকে অনেক কিছু শেখার আছে। ভারতের মতো চ্যালেঞ্জিং একটা দেশ। বিভিন্ন ধরনের মানুষ বিভিন্ন ভাষাভাষী বিভিন্ন খাদ্যাভ্যাস এর মানুষ রয়েছেন ভারতে। অজস্র মানুষ রয়েছেন যারা নিয়মিত মোদি বিরোধিতা করে চলেছেন। তাঁর নামে কুৎসা এবং প্ররোচনামূলক কথাবার্তা বলে চলেছেন, তাঁর এমন সমালোচনা করছেন যা কোনভাবেই গঠনমূলক নয়। কিন্তু মোদীজি তার ‘সবকা সাথ সবকা বিকাশ’ থেকে কোন ভাবেই সরে আসেননি। যারা তাকে খারাপ মানুষ ভেবেছে, খারাপ কথা বলেছে তারাও ক্রমশ নিজেদের ভুল বুঝতে পারছে। মোদি জি প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পরে অজস্র ভোটে জিতেছেন, কিছু পরাজয় ও তিনি দেখেছেন। কিন্তু কখনই এমন কিছু করেননি, বা বলেননি, যাতে গণতান্ত্রিক কাঠামোর অসম্মান হয়। তথাকথিত শ্রেষ্ঠ গণতান্ত্রিক দেশের বিদায়ী প্রেসিডেন্ট এর এ থেকে অনেক কিছু শেখার ছিল।
প্রত্যক্ষদর্শী ও বক্তা –
©যুধাজিৎ সেনমজুমদার, টেকনোলজি এন্টারপ্রনার, সিলিকন ভ্যালি, ফাউন্ডার এনারআইস ফর বেঙ্গল
অনুলিপি -আদিত্য