আরজি কর হাসপাতালে তরুণী চিকিত্সকের ধর্ষণ ও মৃত্যুর প্রতিবাদে তোলপাড় রাজ্য। গতকাল রাত দখল কর্মসূচিতে অংশ নিয়েছিলেন হাজার হাজার মানুষ। আজ ওই মামলা উঠছে সুপ্রিম কোর্টে। স্বাভাবিকভাবেই সুপ্রিম কোর্টের দিকে তাকিয়ে রয়েছে বাংলার প্রতিবাদী মানুষজন।
কী হবে আজ সুপ্রিম কোর্টে? সুপ্রিম কোর্টে আজ সিবিআই আরজি কর তদন্তের স্টেটাস রিপোর্ট জমা দেবে। ফলে এখনওপর্যন্ত তদন্তে কী উঠে এসেছে তা স্পষ্ট হবে আদালতের কাছে। এরপর শীর্ষ আদালত কী নির্দেশ দেবে তাও জানা যাবে। মামলাটির শুনানি হবে প্রধান বিচারপতি ডি ওয়াই চন্দ্রচূড়ের বেঞ্চে।
আরজি করে ওই ঘটনার পর প্রতিবাদে নেমেছিলেন জুনিয়র ডাক্তাররা। গত ১৪ অগাস্ট সেই আন্দোলন মঞ্চে হামলা চালায় একদল দুষ্কৃতী। তারা হাসপাতালে ঢুকে ইমার্জেন্সি ভাঙচুর করে। হাসপাতালের বিপুল টাকার সম্পত্তি ভেঙে চুরমার করে দেয়। হাসপাতালের বহু উন্নত যন্ত্রপাতি ভেঙে ফেলা হয়। পুলিস কোনও বাধা দিতে পারেনি। আজ কলকাতা পুলিসের তরফে কোনও আধিকারিককে সুপ্রিম কোর্টে হাজির হয়ে জানাতে হবে আন্দোলনকারীদের উপরে হামলা ও হাসপাতালে ভাঙচুরের তদন্তে কী উঠে এল।
একমাস পর শুনানি হচ্ছে সুপ্রিম কোর্ট। আন্দোলনরত চিকিৎসকদের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ না করার নির্দেশ দিয়েছিল সুপ্রিমকোর্ট। পাশাপাশি চিকিৎসকদের কাজে যোগ দেওয়ার পরামর্শ দিয়েছিল শীর্ষ। আজ সেই বিষয়টি আবারও উঠে আসতে পারে। আরজি করে হামলার পর সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে সেখানে মোতায়েন হয়েছে কেন্দ্রীয় বাহিনী। সেই বাহিনীর সঙ্গে অসহযোগিতা করা হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক সুপ্রিম কোর্টে ৩৭ পাতার লিখিত আবেদনে রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে কেন্দ্রীয় বাহিনীর সঙ্গে অসহযোগিতার অভিযোগ তুলেছে। সেখানে বলা হয়েছে আরজি করে মোতায়েন সিআইএসএফকে থাকতে হচ্ছে শহরের বাইরে। আরজি করে তাদের খাওয়া থাকার কোনও ব্যবস্থা করা হয়নি। কোনও ঘটনা ঘটে গেলে শহরের বাইরে থেকে হাসপাতালে আসতে তাদের অনেকটাই সময় লেগে যাবে। এই বিষয়টিও আজ শুনানিতে উঠতে পারে।
উল্লেখ্য, গতকাল প্রতিবাদ মিছিলে সামিল হয়েছিলেন নির্যাতিতার বাবা-মা। রাসবিহারীতে এক প্রতিবাদসভায় নির্যাতিতার বাবা বলেন, ‘ গত ৮ অগাস্ট রাতে ওর সঙ্গে আমাদের কথা হয়। বলে বাইরে থেকে খাবার আনা হয়েছে। টানা ডিউটি করতে হচ্ছিল ওকে। পরদিন সকাল ১১টায় জানতে পারি আমার মেয়ে আত্মহত্যা করেছে। যেখানে ও মানুষকে বাঁচাতে গিয়েছিল সেখানেই তার জীবন চলে যায়। পরে আমরা জানতে পারি বিষয়টি তা নয়। ধর্ষণ ও খুনের ঘটনা ঘটে আরজি কর হাসপাতালে। যে ১৫-২০ মিনিট বিশ্রাম পায় না তাকে ৭-৮ ঘণ্টা কোনও জুনিয়র, হাসপাতালের কোনও স্টাফ বা গ্রুপ ডি কর্মচারী কারও প্রয়োজন হল না? এই প্রশ্নের উত্তর চেয়ে গত ১ মাস ধরে ঘুরছি। কেউ আমাকে এই প্রশ্নের উত্তর দিতে পারছে না। আজ এত লোকের জমায়েত দেখে বুঝতে পারছি বিচার আমরা পাবই। এত লোকের চাওয়া কখনও মিথ্যে হবে না। যারা এই বিচারের জন্য রাস্তায় নেমেছেন তাদের আমি আমার পরিবারের সদস্য হিসবে মনে করছি। আশা করছি যতদিন আমার মেয়ে বিচার না পাবে ততদিন তারা তাদের এই উদ্যোগ চালিয়ে যাবেন। আমি আমার মেয়ের বিচার পাব।’ ফলে সবেমিলিয়ে আজকে সুপ্রিম কোর্টের শুনানি নিয়ে সবার আগ্রহ রয়েছে। শুনানিতে গুরুত্বপূর্ণ কিছু বলা হয় কিনা তার দিকে তাকিয়ে নির্যাতিতার পরিবার।