ভর্ৎসনা অবশ্যই করা উচিত একান্তে : গৌতম ভট্টাচার্য

মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ভর্ৎসনার জের মিটতে না মিটতে বদলি হতে হল পুরুলিয়ার জেলাশাসক রাহুল মজুমদারকে। তাঁকে পাঠানো হল আসানসোল-দুর্গাপুর উন্নয়ন পর্ষদের অতিরিক্ত সচিব পদে। বিষয়টি নিয়ে চর্চা হচ্ছে বিভিন্ন মহলে। সর্বভারতীয় ক্যাডারের প্রাক্তন আমলা গৌতম ভট্টাচার্য মনে করেন, এটি ‘অকুপেশনাল হ্যাজার্ড‘। তবে, “ভর্ৎসনা অবশ্যই করা উচিত একান্তে“।

প্রাক্তন চিফ পোস্ট মাস্টার জেনারেল গৌতম ভট্টাচার্যের মতে, “গণতন্ত্রে প্রশাসকের সঙ্গে মন্ত্রীর যদি কোনও দ্বন্দ্ব হয়, সে ক্ষেত্রে মন্ত্রীর ইচ্ছেই প্রাধান্য পাবে – উচ্চতর সিভিল সার্ভিসে যারা আসেন বা আসতে চান তাদের এই ব্যাপারটা অবশ্যই মনে রাখতে হবে। ১৯৯২ সালের একটা ঘটনা মনে আসছে। নরসিংহ রাওর মন্ত্রিসভায় রাজেশ পাইলট তখন যোগাযোগ মন্ত্রী। যোগাযোগ মন্ত্রকের অন্তর্গত ডাক বিভাগের সচিব তখন কৈলাশ প্রকাশ। কোন কারণে দুজনের মতানৈক্য হলে যোগাযোগ মন্ত্রী সরাসরি নালিশ জানান প্রধানমন্ত্রীকে— এহেন সচিবের সঙ্গে তিনি কাজ করতে পারছেন না। ঠিক সেই সময়ে সচিব বিদেশে একটি মিটিংয়ে ভারত সরকারের প্রতিনিধি হিসেবে যেতে দিল্লী এয়ারপোর্টে। শোনা যায় সেই অবস্থাতেই তাঁকে ফিরে আসতে বাধ্য করা হয় এবং সচিবের পদ থেকে সরিয়ে দিয়ে ক্যাবিনেট সেক্রেটারিয়েটে ও.এস.ডি হিসেবে কর্মজীবনের শেষ মাস ছয় কাজ করতে বাধ্য করা হয়। সেই যুগে ঘটনাটা ভারত সরকারের হায়ার ব্যুরোক্রেসির মধ্যে আলোড়ন সৃষ্টি করে। বিখ্যাত সাংবাদিক কুলদীপ নায়ার এর তীব্র প্রতিবাদ করেন।

রাজীব গান্ধীর জমানায় বিদেশ সচিব এ.পি.ভেঙ্কটেশ্বরণের মতো অফিসারকে প্রধানমন্ত্রী সর্বসমক্ষে অপমান করে সচিবের দায়িত্ব থেকে সরিয়ে দেন। এই নিয়ে হায়ার ব্যুরোক্রেসিতে সে যুগে তোলপাড় হলেও মেনে নিতে হয়েছিল। যদিও সকলেই মনে করেন রাজনৈতিক নেতার মন্ত্রীত্বের দায়িত্বে থাকলে আরেকটু সংযমী হওয়া উচিত। কিন্তু কোনও রকম দ্বন্দ্বে যে মন্ত্রীর ইচ্ছেই শেষ কথা সেটা প্রায় স্বতঃসিদ্ধ।

আমার মনে হয় মন্ত্রী, তিনি যত বড়োই জননেতা হন না কেন, কারুকে তিরস্কার করতে গেলে একান্তেই করা উচিত, সর্বসমক্ষে নয়। রাজীব গান্ধী বা নরসিংহ রাওয়ের সময়ে অপছন্দের অফিসারটিকে সচিবের পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছিল, আজ হলে হয়তো তাঁদের পেনশন নিয়েই টানাটানি হতো।পশ্চিমবঙ্গে বিধান রায়ের জমানাকে রাজ্য-রাজনীতির স্বর্ণযুগ ধরা হয়। সেই সময়েও আই.সি.এস. অফিসার নবগোপাল দাশ মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে মতান্তরের পরিণামস্বরূপ চাকরী থেকে ইস্তফা দেন।

সব পেশাতেই তো কিছু অকুপেশনাল হ্যাজার্ড থাকে, হায়ার সিভিল সার্ভিসে যিনি আসছেন তাকেও মন্ত্রী বা পলিটিক্যাল এক্সিকিউটিভের সঙ্গে কাজ করতে কী কী সমস্যা হতে পারে সেটা ভাবনায় রাখতে হবে। যে কোন চাকরিতেই তো আমরা বসের থেকে নির্দেশ নেই এবং তিনি যেন আমার কাজে সম্তুষ্ট থাকেন সেই চেষ্টাই করি। সরকারী ব্যবস্থাতেও তার ব্যতিক্রম কেনো হবে, যদি না মন্ত্রী কোন অন্যায় আব্দার করছেন বা অসাংবিধানিক নির্দেশ দিচ্ছেন। এই পরিপ্রেক্ষিতে পুরুলিয়ার ঘটনাটি আমার খুব সামান্য ঘটনা বলেই মনে হয়। তবে হ্যাঁ যে কোনও পেশাতেই অধস্তন ব্যক্তিটিকে প্রশংসা করতে গেলে সম্ভব হলে জনসমক্ষে করলে ভালো কিন্তু ভর্ৎসনা অবশ্যই করা উচিত একান্তে।“

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.