প্রথম পর্ব
‘সত্য’ আড়ালে থাকলো কেনো ?
বিংশ শতাব্দীর ইতিহাসে কমিউনিজমের একটা গুরুত্বপূর্ণ জায়গা আছে। কমিউনিজম ইউরোপের এক প্রান্তে প্রথম বিশ্বযুদ্ধের বিভীষিকার মধ্যে ইতিহাসের জমিতে পা রেখে , দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে সোভিয়েত রাশিয়ার সফলতাকে কাজে লাগিয়ে পশ্চিম দিকে জার্মানি ও চীন সাগরের পূর্বপ্রান্তে বিস্তার লাভ করতে শুরু করে। প্রায় সাত দশক বিশ্ব ইতিহাসের মূল ভূমিকায় ছিল কমিউনজম — এক পক্ষ একে সমাজবাদের আকাঙ্খিত পরিণতি আর অন্য পক্ষ একে ইতিহাসের সবচেয়ে বিভীষিকাময় অধ্যায় হিসেবে দেখেছে।
তবে ঐতিহাসিক দৃষ্টিকোণ থেকে এই ব্যাখ্যার প্রয়োজন আছে যে বিশ্বের এক তৃতীয়াংশ মানুষকে শাসন করা কমিউনিজম কেন তাসের ঘরের মতো ভেঙে গেল। তাছাড়া সাম্যবাদের নামে যে সুখস্বপ্ন লাল পতাকার নিচে থাকা দেশগুলোর মানুষকে দেখানো হয়েছিল সেই সমস্ত দেশে কমিউনিজমের পক্ষে ও বিপক্ষে থাকা মানুষ নির্বিশেষে স্বীকার করে , প্রায় সাড়ে ৮ কোটি থেকে ১০ কোটি মানুষ কমিউনিজমের বলি হয়েছে। কিন্তু এই তথ্যগুলো পঞ্জিকৃত থাকলেও ইতিহাসের পাতাতে কোনদিনই আসেনি তার কারণ কমিউনিস্ট দেশগুলোর সংবাদপত্র ও শিক্ষাবিদদের নিয়ন্ত্রণ করা। এমনকি একবিংশ শতাব্দীতেও যে সমস্ত দেশে জনপ্রতিনিধি হিসেবে কমিউনিস্টরা নগণ্য সেখানেও তাদের বিভিন্ন সংবাদপত্র , গণমাধ্যম,শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও শিক্ষাবিদদের নিয়ে তৈরি করা ইকোসিস্টেম এখনো কমিউনিজম এর সঠিক রূপ বা তথ্যকে সামনে রেখে আলোচনাকে সামনে আনার ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধক। স্তালিনের গুলাগ , ‘দ্য গ্রেট লিপ ফরওয়ার্ড’ ও ‘কালচারাল রিভলিউশন’ পলপটের ‘খমের রুজ’ সম্পর্কে ইতিহাস ও রাষ্ট্রবিজ্ঞানের ছাত্ররাই জানেনা সাধারণ মানুষ তো দূরের কথা। কিন্তু হিটলারের কন্সেন্ট্রেশন ক্যাম্প ও ইহুদি গণহত্যা বিষয়ে জানে, এমনকি একনায়কতন্ত্র বোঝাতে ‘হিটলার’ নামটি প্রবাদে পরিণত হয়েছে। কিন্তু যদি তুলনা করা হয় নৃশংসতার দিক থেকে নাৎসীবাদ ও কমিউনিজমের মধ্যে কোনটা বেশি ভয়াবহ তাহলে কমিউনিজনকেই শীর্ষে রাখতে হয় ; কারণ নাৎসীবাদের বলি হয়েছিল ২কোটি ৫০ লক্ষ মানুষ যা কমিউনিজমের তুলনায় অনেক কম। হিটলারের মতোই একনায়কতন্ত্রের পরিচালক হওয়া সত্ত্বেও স্তালিন , মাও , পল পট, ফিদেল কাস্ত্রোকে সামনে রেখে গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে অংশগ্রহণ করে কমিউনিস্ট পার্টিগুলো।
আর সর্বসমক্ষে এই দ্বিচারিতা করতে বাধা বা সমালোচনা থাকে না যখন এই নামগুলোর পিছনে থাকা মানবতার লজ্জাজনক অধ্যায় কমিউনিস্ট ইকোসিস্টেমের দ্বারা ঢাকা থাকে।
মানবতার দিক থেকে নাৎসীবাদের নামে ইহুদি জাতির গণহত্যা ( race genocide ) ও কমিউনিজমের নামে ‘শ্রেণী গণহত্যা’ (class genocide) দুটোই পাশবিক। সর্বগ্রাসী একনায়কতন্ত্র হিসেবে নাৎসীবাদ যতটা মানুষের মনে গেঁথে আছে কমিউনিজম তার ধারে কাছেও নেই , এমন কি দুটোর মধ্যে তুলনার কথাও সাধারণ মানুষের কাছে অস্বাভাবিক মনে হয়। কিন্তু বর্তমানে স্বীকৃত তথ্য অনুযায়ী কমিউনিজম ও নাৎসীবাদের মধ্যে তুলনা অবান্তর ঠেকে না।
মানবতার অপরাধী এই দুই মতবাদ বা শাসনযন্ত্র নিয়ে দুইরকমের দৃষ্টিকোণ বা বলা যায় একটির স্বরূপ বিশ্বের সামনে প্রকাশিত হল আর অন্যটি আড়ালে তার কারণ – দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ফলাফল।
নাৎসীবাদ তথা হিটলারের জার্মানির হারের ফলে তার নিষ্ঠুরতা প্রকাশ্যে এলো, তিরস্কৃত হল কিন্তু কমিউনিজমের কেন্দ্র তথা স্তালিনের সোভিয়েত রাশিয়া জয়ী দলের সদস্য ( মিত্র শক্তি) হওয়ায় কমিউনিজমের ভয়াবহতা বিশ্বের সামনে আসতে আরো অর্ধশতাব্দী সময় লেগে গেলো। ততদিনে এই বিষ আরো কিছু দেশে ছড়িয়ে গেছে। সোভিয়েত রাশিয়ার পতনের পর তার সংরক্ষিত তথ্যাদি ঘেঁটে এখনো যা জানা গেছে তা জেনে শিউরে উঠতে হয় !
নাৎসীবাদ বিকশিত ইউরোপকে তছনছ করায় তা বিশ্বের সামনে যতটা বিধ্বংসী মনে হয়েছে , কমিউনিজম অপেক্ষাকৃত অনুন্নত রাশিয়া ও এশিয়ায় ধ্বংসলীলা চালিয়েছে বলে ততটা বিধ্বংসী মনে হয় নি। বরং সোভিয়েত রাশিয়া একের পর এক যে পরিকাঠামোর উন্নতি করছিল তার পেছনে কত কোটি মানুষের রক্ত বয়ে গেছে তা রাশিয়ার লৌহ যবনিকা ভেদ করে বেরোতেই পারে নি। নাৎসীবাদের তুলনায় আরো একটা দিক থেকে কমিউনিজম ভাগ্যের সহায়তা পেয়েছে। ইহুদীদের গণহত্যা অর্থাৎ ‘হলোকাস্ট’ করে সম্পূর্ণ জাতিকে নিশ্চিহ্ন করে দেওয়ার জন্য নাৎসীবাদকে ইহুদীরা ইতিহাসে যেভাবে জীবন্ত রেখেছে তা কমিউনিজমের দ্বারা নিহতদের আত্মীয় ও আক্রান্তদের দ্বারা সম্ভব হয় নি। ইহুদীরা নিজেরা একটা ‘জাতি’ হিসেবে স্বঘোষিত ও স্বীকৃত কিন্তু কমিউনিজমকে সামনে রেখে যাদের গণহত্যা হয়েছে সেখানে ‘মার্ক্সবাদ’কে সামনে রেখে সমাজকে বিভিন্ন ‘শ্রেণী’তে ভাগ করে ‘শ্রেণী সংগ্ৰামে’র (class war) নামে গণহত্যা সংঘটিত হয়েছে আর সবথেকে আশ্চর্যজনক যারা ‘Enemy of the people’ অর্থাৎ ‘গণশত্রু’ হিসেবে অভিযুক্ত হয়ে নিহত হয়েছে তারা নিজেরাও জানে না তারা ঐ শ্রেণীর অন্তর্ভুক্ত ! মার্ক্সবাদের নামে একটি দেশের মধ্যে , একটি সমাজের প্রতিবেশীদের মধ্যে বিভিন্ন ‘শ্রেণী’ তৈরি করে দেওয়া হলো আর এই ‘শ্রেণী’গুলোকেও পরবর্তী কমিউনিস্টরা তথাকথিত সংশোধন ও পরিমার্জন করে বিবাদমান শ্রেণীতে ভাগ করেছে।
পরবর্তীকালে অতীতের নাৎসী হিসেবে পরিচয়কে সমাজ যতটা ঘৃণার চোখে দেখেছে, একসময়ের কমিউনিস্ট হওয়া ততটা লজ্জাজনক নয়।মিত্রশক্তির উদ্যোগে জার্মানির নুরেমবার্গে নাৎসী নেতাদের বিচার হয় , নাৎসীবাদের নামে অপরাধের তথ্যগুলি সংগ্ৰহ করা হয় ও ‘জার্মান জাতি’র পক্ষে হিটলারের দাবিগুলোকে অবৈধ প্রমাণ করা হয়। কিন্তু মিত্রশক্তির মধ্যে থাকা সোভিয়েত রাশিয়া তার নিজেরই দেশের মানুষের সঙ্গে এমনকি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ চলাকালীন অধিকৃত অঞ্চলগুলিতে মানবতার সীমা কিভাবে লঙ্ঘন করেছে তা সবার দৃষ্টি এড়িয়ে যায়। গণহত্যাকারী কোনো কমিউনিস্ট নেতা বা পদাধিকারীকে বিচারের সম্মুখীন হতে হয় নি যদিও প্রচুর কমিউনিস্ট হত্যাকারী তাদের উত্তরসূরীদের হাতে নিহত হয়েছে কিন্তু তা ছিল শুধুমাত্র ক্ষমতার লড়াইয়ের ফল। হিটলারের কনসেন্ট্রেশন ক্যাম্পে নিহত ইহুদীদের জন্য স্মৃতিসৌধ নির্মিত হলেও স্তালিনের পর রাশিয়ার ক্ষমতায় ক্রুশ্চেভ এলে গুলাগ ক্যাম্প গুলোতে কোনো স্মৃতিস্তম্ভ তৈরি
করে নি । দেশে দেশে কমিউনিজমের নামে গণহত্যা করার যন্ত্র হিসেবে বিভিন্ন নামে বিশেষভাবে বিভিন্ন সংস্থা তৈরি করা হয়েছে। যেমন সোভিয়েত রাশিয়ায় cheka-GPU-NKVD-KGB , চীনে ‘People’s Liberation Army আর কম্বোডিয়ায় বন্দুকধারী গ্ৰাম্য কিশোরদের ব্যবহার করা হয়েছে। রাশিয়া থেকে যত এশিয়ার গভীরে কমিউনিজম প্রবেশ করেছে তত মতাদর্শের নামে সমাজের বিভাজন সমাজের গভীরতম অংশে পৌঁছেছে আর এইসব হত্যালীলার জন্য কমিউনিজমের পতাকাধারীরা পাশের দেশের কমিউনিস্ট সেনানায়কদের পরম্পরাকে যেন আরো বেশি পাশবিক করার পণ নিয়েছিল।
কোনো রাজনৈতিক লক্ষ্য অর্জনের জন্য হত্যা যতটা নৃশংস তার থেকেও বেশি পাশবিক যদি ‘হত্যা’কেই লক্ষ্য করে দেওয়া হয় আর কমিউনিজমের নামে ‘গণশত্রু’ , ‘শ্রেণী শত্রু’ , বিশেষভাবে বাস্তুহারা মানুষ ‘ (specially displaced people) ইত্যাদি শ্রেণী সৃষ্টি করে কোটি কোটি মানুষের হত্যা করা হয়েছে, অনাহারে থাকতে বাধ্য করা হয়েছে।নাৎসীদের গণহত্যার সঙ্গে কমিউনিস্টদের ( বা বলশেভিকদের) হত্যার পার্থক্য এই যে নাৎসীরা কোনো মহৎ উদ্দেশ্যের আড়ালে বা কোনো মানবিকতার মুখোশের আড়ালে হত্যা করে নি, তারা ক্ষমতায় উন্মত্ত হয়ে কোনো আত্মপক্ষ সমর্থনের চেষ্টা না করেই হত্যালীলা চালিয়েছে। অন্যদিকে কমিউনিস্ট একনায়ক সাম্যবাদের আড়ালে, মানবতার মুখোশের আড়ালে গণহত্যা সংঘটিত করেছে ; এমনকি জোরপূর্বক কল্পিত অপরাধ স্বীকার করিয়ে বিচারের নাটক দেখিয়েছে। সাম্য প্রতিষ্ঠার ডাক দিয়ে কমিউনিস্টরা দেশে দেশে যা করেছে তার একটা আন্তর্জাতিক লক্ষ্য ও আকর্ষণ ছিল যা কেবলমাত্র একটি দেশের ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য ছিল এমন নয় , অন্যদিকে নাৎসীদের উগ্ৰ রাষ্ট্রবাদকে কমিউনিজমের সাম্যবাদের তুলনায় স্বার্থপর মনে হওয়া স্বাভাবিক কারণ তারা যে ‘জার্মান’ জাতির ক্ষমতায়নের ডাক দিয়েছিল তার সঙ্গে বাকি বিশ্বের অন্যান্য দেশের মানুষ একাত্ম হতে পারে নি। অন্যদিকে সারা বিশ্বের ‘শ্রমজীবি’দের এক হওয়ার বিশ্বজনীন ডাক প্রথম দৃষ্টিতেই খুব যুক্তিসঙ্গত মনে হলেও সাম্য প্রতিষ্ঠার নামে মানবাধিকারের যে হনন কমিউনিস্ট শাসনযন্ত্র বিভিন্ন দেশে দেখিয়েছে তাকে অনেকক্ষেত্রেই নৃশংসতার চরম মনে হয়।
সোভিয়েত রাশিয়ায় ১৯৩২-৩৩ সালে যৌথ খামার ব্যবস্থার কুফলে তৈরি হওয়া দুর্ভিক্ষের জন্য ৬০ লক্ষ মানুষের প্রাণহানি ; ১৯৩৪-৪১ সালের মধ্যে রাজনৈতিক শুদ্ধিকরণের নামে প্রায় ৭ লক্ষ মানুষের হত্যা , প্রায় ৭ লক্ষ মানুষকে ‘গুলাগ’ শ্রমশিবিরে বন্দী করা —- এসবই হয়েছে এক আদর্শ সমাজব্যবস্থা নির্মাণের জন্য !
চীনে ‘রাতে দীর্ঘ যাত্রা’ (Long march into night) ২০ লক্ষ মানুষের মৃত্যু , ১৯৫৯-৬১ সালে ‘সামনের দিকে দীর্ঘ লাফ’ (The great Leap forward) এর ফলে ঘটিত পৃথিবীর ইতিহাসে বৃহত্তম দুর্ভিক্ষের জন্য ২ কোটি মানুষের মৃত্যু হয়েছে। মাও এর থেকে প্রেরণা নিয়ে কম্বোডিয়ায় কমিউনিস্ট শাসক পল পট কম্বোডিয়ার এক-সপ্তমাংশ জনসংখ্যাকে নিশ্চিহ্ন করে দেয় যা আনুপাতিক দৃষ্টিতে পৃথিবীর যে কোনো দেশে সংঘটিত হত্যার মধ্যে বৃহত্তম।
শাসকের পর শাসক পরিবর্তন হয়েছে , দেশের পর দেশ কিন্তু কমিউনিজমের আদর্শে সমাজ গঠন করতে যে গণহত্যা আবশ্যিক ‘শর্ত’ তার ব্যতিক্রম হতে দেখা যায় নি। আর এই রক্তাক্ত শ্রেণী সংগ্রাম মার্ক্সবাদকে ‘বৈজ্ঞানিক সমাজতন্ত্র’ করেছে!
মার্ক্স এর ভবিষ্যৎ বাণী ছিল শিল্পভিত্তিক সমাজে সর্বহারাদের বিপ্লব হবে কিন্তু সোভিয়েত রাশিয়ায় যে বলশেভিক ক্ষমতাদখল ( ‘বিপ্লব’ বলা যুক্তিসঙ্গত কি না সেই নিয়ে প্রশ্ন আছে) হয়েছিল সেই সমাজে শিল্পঘটিত বৈষম্য দূরের কথা, কৃষিই সেই সমাজের ভিত্তি ছিল। মার্ক্স ‘প্রয়োজনীয়তার রাজত্ব ‘ (Kingdom of necessity)থেকে ‘স্বাধীনতার রাজত্বে'(Kingdom of freedom) উত্তরণের কথা বলেছিলেন কিন্তু ক্ষমতাসীন সেনানায়কদের লক্ষ্য পূরণের জন্য বিভিন্ন কমিউনিস্ট শাসনাধীন দেশে মানুষের স্বাধীনতা তো হারিয়েইছিল সাথে জীবনের নিরাপত্তা পর্যন্ত ছিল না।
কোনো দেশের বিভিন্ন অপরাধের আইনী শ্রেণীবিন্যাস প্রথম করা হয় ১৯৪৫ সালে নাৎসীদের দ্বারা কৃত অপরাধের বিচারে তৈরি হওয়া নিউরেমবার্গ ট্রাইব্যুনালে।
‘Crime against Humanity’ কথাটি প্রথম শোনা যায় ১৯১৫ সালের ১৯ শে মে’র ফরাসি-ইংরেজ-রাশিয়ার যৌথ বিবৃতিতে যেখানে তুর্কীর আর্মেনিয়দের হত্যার নিন্দা করা হয়।’মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ’ এর সংজ্ঞাকে নিউরেমবার্গ ট্রাইব্যুনাল আরো স্পষ্ট করে বলে “যুদ্ধের আগে বা চলাকালীন যে কোনো বেসামরিক জনগণের বিরুদ্ধে সংঘটিত হত্যাকাণ্ড, নিশ্চিহ্নকরণ, দাসত্ব, নির্বাসন এবং অন্যান্য অমানবিক কার্যকলাপ; বা কোনো অপরাধের সম্পাদনায় বা তার সাথে সম্পর্কিত রাজনৈতিক, জাতিগত, বা ধর্মীয় কারণে নিপীড়ন, যা ট্রাইবুনালের এখতিয়ারের আওতাভুক্ত, তা দেশীয় আইনের লঙ্ঘন হোক বা না হোক।”
এক মতাদর্শের বশীভূত হয়ে কোটি কোটি মানুষের হত্যা , নির্বাসন , জোরপূর্বক শ্রম নিঃসন্দেহে ‘মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধের’ আওতাভুক্ত।
‘Trud’ পত্রিকার ১৯২৭ সালের ১৩ই নভেম্বরেরং সংখ্যায় সোভিয়েত ট্রেড ইউনিয়নের নেতা মিখাইল টমস্কির মন্তব্য প্রকাশিত হয় “We allow all parties to exist. However, the fundamental principle that distinguishes us from the West is as follows: one party rules , and all others are in jail!”
লেনিনের পুলিশ বাহিনী ‘Cheka’র প্রধান মার্টিন লাটসিসের তার সহায়ককে দেওয়া আদেশ থেকে একটা ধারণা পাওয়া যায় কোনো অপরাধমূলক কাজ ছাড়াও শুধুমাত্র জীবিকা, বাসস্থান ও শিক্ষার জন্যেও একজন একটি বিশেষ শ্রেণীভুক্ত হিসেবে অভিযুক্ত হতে ও অপরাধী হিসেবে বিবেচিত হতে পারে –“We don’t make war against any people in particular. We are exterminating the bourgeoisie as a class. In your investigations don’t look for documents and pieces of evidence about what the defendant has done, whether in deed or in speaking or acting against Soviet authority. The first question you should ask him is what class he comes from , what are his roots, his education, his training, and his occupation.”
‘জাতি’ হিসেবে নিশ্চিহ্ন হওয়ার থেকেও ‘শ্রেণী’ হিসেবে নিশ্চিহ্ন হওয়ার মধ্যে হত্যাকারীদের পাশবিকতা আরো বেশি ফুটে ওঠে এই কারণে যে একটি শ্রেণী হিসেবে চিহ্নিত হয়ে যারা প্রাণ হারিয়েছে তারা নিজেরাই জানতে পারে নি তারা কেনো সেই বিশেষ ‘শ্রেণীভুক্ত’ ? কারণ তারা মার্ক্সবাদের তৈরি করা সেই ‘শ্রেণী’ বিভাজন জানতেন না আর তারা সেই ‘শ্রেণী’ভুক্ত নিজের ইচ্ছামত হন নি বরং জাতিগত পরিচয়ের মত সেই কৃত্রিম শ্রেণীগত বিভাজন তাদের জন্মগত।
প্রাক্তন কমিন্টার্ন আধিকারিক জোসেফ বার্গারকে শুদ্ধিকরণের ( The Great Purge) সময় গুলাগ ক্যাম্পে নির্বাসিত করা হয়। তিনি গুলাগের শ্রমশিবিরে নির্বাসিত অন্য এক বন্দীর চিঠি উদ্ধৃত করেন — “আমাদের প্রজন্মের কমিউনিস্টরা সর্বত্র স্টালিনিস্ট নেতৃত্বের রূপটি মেনে নিয়েছিল। আমরা এই অপরাধগুলিতে সম্মতি দিয়েছিলাম। এটি শুধুমাত্র সোভিয়েত কমিউনিস্টদের জন্যই নয়, বরং সারা বিশ্বের কমিউনিস্টদের জন্যও সত্য। আমরা, বিশেষ করে পার্টির সক্রিয় এবং নেতৃস্থানীয় সদস্যরা, আমাদের বিবেকের উপর ব্যক্তিগত এবং সমষ্টিগতভাবে একটি কলঙ্ক বহন করছি। এটি মুছে ফেলার একমাত্র উপায় হল নিশ্চিত করা যে এমন কিছু আর কখনোই না ঘটে। এটা কীভাবে সম্ভব হলো? আমরা সবাই কি পাগল হয়ে গিয়েছিলাম, নাকি এখন আমরা কমিউনিজমের সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করছি? সত্য হল যে আমাদের সকলেই, স্টালিনের অধীনে থাকা নেতাদেরও অন্তর্ভুক্ত করে, এই অপরাধগুলিকে বিপরীতভাবে দেখেছিলাম। আমরা বিশ্বাস করতাম যে এগুলো সমাজতন্ত্রের বিজয়ের জন্য গুরুত্বপূর্ণ অবদান। আমরা মনে করতাম সোভিয়েত ইউনিয়ন এবং বিশ্বের কমিউনিস্ট পার্টির ক্ষমতার রাজনীতিকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া যে কোনো কিছু সমাজতন্ত্রের জন্য ভালো। আমরা কখনও সন্দেহ করিনি যে কমিউনিস্ট রাজনীতি এবং কমিউনিস্ট নীতিশাস্ত্রের মধ্যে দ্বন্দ্ব সম্ভব।”
আসলে কমিউনিস্ট রাজনীতি ও কমিউনিস্ট মতাদর্শের মধ্যে কোনো দ্বন্দ্ব ছিলও না। মার্ক্স যে ‘সর্বহারার একনায়কত্ব’ কে সাম্যবাদী সমাজ প্রতিষ্ঠার অন্তর্বর্তী অবস্থা হিসেবে প্রতিপাদন করেছিলেন আর ‘সর্বহারার একনায়কত্ব’ প্রতিষ্ঠা করতে শ্রেণী সংগ্রামের মাধ্যমে বিপ্লবকে অবশ্যম্ভাবী বলেছিলেন সেই বিপ্লবের ও ‘সর্বহারার একনায়কত্ব’-এর বাস্তবায়নের জন্যই সারা পৃথিবীতে প্রায় ১০ কোটি মানুষ প্রাণ হারিয়েছেন।এই হত্যালীলাকে কমিউনিজম মতাদর্শের প্রয়োগের ভ্রান্তি হিসেবে দেখিয়ে অনেকে কমিউনিজমকে রক্ষাকবচ দেওয়ার চেষ্টা করেন কিন্তু বিকৃতিটা কমিউনিজমের তথা মার্ক্সবাদের ভেতরেই আছে। মানুষকে শুধুমাত্র এক অর্থনৈতিক সত্ত্বা হিসেবে দেখা আর ইতিহাসকে অর্থনৈতিক দৃষ্টিকোণ থেকে ব্যাখ্যা করার মধ্যেই এক বিকৃত চিন্তা দেখা যায়।
প্লেটোর ‘রিপাবলিক’ থেকে একটা আদর্শ সমাজের ধারণা পাওয়া যায়। কমিউনিজম এক আদর্শ সমাজের লক্ষ্যকে সামনে রেখে সংগ্ৰামের কথা বলে। পৃথিবীকে পরিবর্তনের তীব্র আকাঙ্খা মানব মনস্তত্ত্বের একটা অংশ। কিন্তু কমিউনিজমের রক্তাক্ত পথ যে আদর্শ সমাজ প্রতিষ্ঠার নামে সমাজের বর্তমান স্থিতির আরো অবনমন ঘটায়, তত্ত্বের বাস্তবায়নের জন্য মানবজীবনের মূল্য যে কিছুই থাকে না — এই উপলব্ধি হতে হতে দেখা যায় একটি দেশের বিশাল জনগোষ্ঠী ‘বৈজ্ঞানিক সমাজতন্ত্র’-এর বলি হয়ে গিয়েছে। ১৮২৫ থেকে ১৯১৭ পর্যন্ত জারের শাসনকালে রাজনৈতিক কারণে মোট ৬৩৬০ জন অভিযুক্ত হয়েছিল আর তার মধ্যে ৩৯৩২ জনের মৃত্যুদণ্ড হয়েছিল। অন্যদিকে ১৯১৮ সালের মার্চে বলশেভিকদের ক্ষমতা দখলের ৪ মাসের মধ্যেই এই সংখ্যা ছাপিয়ে যায়। পরের ৭৩ বছরের হিসাব কমিউনিজমের ‘রক্তচরিত্র’ বোঝানোর জন্য যথেষ্ট । জারের শাসনে রাশিয়ার শ্বাসরুদ্ধকর অবস্থা থেকে রেহাই পেতে রাশিয়ার জনগণকে যেনো জোর করে বিষাক্ত গ্যাসের চেম্বারে নিয়ে যাওয়া হলো , তাও আবার এক সাম্যবাদী সমাজের মরিচীকা দেখিয়ে।
১৯৫৬ সালে ক্রুশ্চেভের ‘গোপন বক্তব্য’ (Secret Speech) প্রথম কোনো কমিউনিস্ট শাসকের দ্বারা কমিউনিস্ট নৃশংসতার স্বীকারোক্তি। কিন্তু ক্রুশ্চেভ শুধুমাত্র কমিউনিস্টদের উপর হওয়া অত্যাচারের কথাই বলেছিল আর স্তালিনের আমলে ইউক্রেনের কমিউনিস্ট পার্টির প্রধান থাকাকালীন তার অপরাধকে স্তালিনের খাতায় ফেলার চেষ্টা করেছিল। সোভিয়েত রাশিয়ার সংবাদপত্রের উপর নিয়ন্ত্রণ, স্বৈরাচারী শাসকের পক্ষে নিরন্তর প্রচার আর একনায়কের তৈরি করা ভয়ার্ত পরিবেশ ‘সত্য’কে প্রকাশ করার সাহস জন্মাতেই দেয় নি।
লেখক, বুদ্ধিজীবীদেরকেও প্রচারের কাজে লাগানো হয়েছিল। ১৯২৮ সালে ম্যাক্সিম গোর্কিকে ‘সোলোভেটস্কি’ দ্বীপের ‘গুলাগ’ ক্যাম্পের পরিদর্শন করানো হয় আর এমনভাবে দেখানো হয় যে গোর্কি সোভিয়েত সরকার আর ‘গুলাগ’ ক্যাম্পের ভূয়সী প্রশংসা করেন। এমনকি পশ্চিম বিশ্বের নেতারাও এইভাবে ঠকে ছিলেন। ইয়াল্টা বৈঠকে প্রেসিডেন্ট রুজভেল্ট পূর্ব ইউরোপের দায়িত্ব স্টালিনকে দিয়েছিলেন এই ভেবে যে সেখানে নির্বাচন হবে। কিন্তু সেই সময়েও ‘কমিউনিজম’ আর ‘নির্বাচন’ যে বিপরীত শব্দ তা বুঝতে আরো কয়েকদশকের অভিজ্ঞতা প্রয়োজন ছিল ! ‘বিপ্লব’ , ‘মুষ্টিবদ্ধ হাত’ আর ‘লাল’ পতাকা যেনো যে কোনো দেশের সমাজ পরিবর্তনের জন্য অপরিহার্য হয়ে উঠেছিল কিন্তু গোটা বিশ্বের কাছে এই তথ্যগুলো অজানাই ছিল যে যেখানে ‘মুষ্টিবদ্ধ হাত’ আর ‘লাল পতাকা’ ক্ষমতার প্রতীক হয়েছে , সেই দেশের মানুষের জীবন কতটা দুর্বিষহ হয়েছে !
কমিউনিজমের নামে অত্যাচারের ইতিহাসকে বিশ্বের সামনে প্রতিষ্ঠিত করতে ক্রুশ্চেভের ‘সিক্রেট স্পিচ’ এর কোনো প্রতিদ্বন্দ্বী নেই। ক্রুশ্চেভের মতে, ১৯১৭ সালের পর থেকে কমিউনিস্ট শাসন অপরাধের দিকে বাঁক নিতে শুরু করে। নিজের স্মৃতিকথায় নিকিতা ক্রুশ্চেভ জানাচ্ছে – ” যাদের গ্রেফতার এবং নিশ্চিহ্ন করা হয়েছিল তাদের সম্পর্কে আমরা কী করতে যাচ্ছি? আমরা এখন জানি যে দমন-পীড়নের সময় যারা ভুক্তভোগী ছিল তারা নির্দোষ ছিল। আমাদের কাছে অনস্বীকার্য প্রমাণ রয়েছে যে, জনগণের শত্রু হওয়া দূরের কথা , তারা ছিলেন সৎ পুরুষ ও মহিলা, পার্টির প্রতি নিবেদিত, বিপ্লবের জন্য নিবেদিত এবং লেনিনবাদী উদ্দেশ্য এবং সোভিয়েত ইউনিয়নে সমাজতন্ত্র ও কমিউনিজম গড়ে তোলার জন্য প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। .. আমি এখনও মনে করি সবকিছু ঢেকে রাখা অসম্ভব। শীঘ্রই বা পরে লোকেরা কারাগার এবং শিবির থেকে বেরিয়ে আসবে এবং তারা শহরে ফিরে আসবে। তারা তাদের আত্মীয়স্বজন, বন্ধুবান্ধব এবং কমরেডদের এবং বাড়িতে ফিরে যা ঘটেছে তা সবাইকে বলবে। আলোচ্য বছরগুলিতে পার্টি নেতৃত্বের আচরণ সম্পর্কে আমরা প্রতিনিধিদের সাথে অকপটে কথা বলতে বাধ্য… কী ঘটেছিল তা আমরা কীভাবে না জানার ভান করতে পারি? আমরা এখন জানি যে দমন-পীড়নের সময় যারা ভুক্তভোগী ছিল তারা নির্দোষ ছিল। আমাদের কাছে অনস্বীকার্য প্রমাণ রয়েছে যে, জনগণের শত্রু হওয়া দূরের কথা , তারা ছিলেন সৎ পুরুষ ও মহিলা, পার্টির প্রতি নিবেদিত, বিপ্লবের জন্য নিবেদিত এবং লেনিনবাদী উদ্দেশ্য এবং সোভিয়েত ইউনিয়নে সমাজতন্ত্র ও কমিউনিজম গড়ে তোলার জন্য প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। .. আমি এখনও মনে করি সবকিছু ঢেকে রাখা অসম্ভব। শীঘ্রই বা পরে লোকেরা কারাগার এবং শিবির থেকে বেরিয়ে আসবে এবং তারা শহরে ফিরে আসবে। তারা তাদের আত্মীয়স্বজন, বন্ধুবান্ধব এবং কমরেডদের এবং বাড়িতে ফিরে যা ঘটেছে তা সবাইকে বলবে। আলোচ্য বছরগুলিতে পার্টি নেতৃত্বের আচরণ সম্পর্কে আমরা প্রতিনিধিদের সাথে অকপটে কথা বলতে বাধ্য… কী ঘটেছিল তা আমরা কীভাবে না জানার ভান করতে পারি? আমরা জানি পার্টিতে দমন-পীড়ন ও স্বেচ্ছাচারিতার রাজত্ব ছিল, এবং আমরা যা জানি তা অবশ্যই কংগ্রেসকে জানাতে হবে… যে কেউ অপরাধ করুক না কেন তার জীবনে এমন একটি মুহূর্ত আসে যখন একটি স্বীকারোক্তি তাকে বহিষ্কার না হলেও নম্রতার আশ্বাস দেয় ।”
প্রাথমিকভাবে শুধু কমিউনিস্ট ভুক্তভোগীদের কথা বললেও ১৯৬১ সালে স্তালিনের অত্যাচারের শিকার সমস্ত নিপীড়িত মানুষদের জন্য স্মৃতিসৌধ নির্মাণের প্রস্তাব দেন ক্রুশ্চেভ।
‘গোপন বক্তৃতার’ গুরুত্ব সম্পর্কে বলতে ফরাসি কমিউনিস্ট পার্টির ফ্রাঁসোয়া ফুরেট, লিখেছিলেন –“এখন হঠাৎ করেই ১৯৫৬ সালের ফেব্রুয়ারির ‘গোপন বক্তৃতা’ সারা বিশ্বে বিরাজমান কমিউনিস্ট ধারণাকে এককভাবে ভেঙে দিয়েছিল। যে কণ্ঠস্বর স্ট্যালিনের অপরাধের নিন্দা করেছিল তা পশ্চিম থেকে আসেনি বরং মস্কো থেকে এসেছে এবং মস্কোর “পবিত্রতম স্থান” ক্রেমলিন থেকে এসেছে। এটি কোনো কমিউনিস্টের কণ্ঠস্বর ছিল না যাকে বহিষ্কৃত করা হয়েছিল, বরং এটি ছিল বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় কমিউনিস্ট, সোভিয়েত ইউনিয়নের কমিউনিস্ট পার্টির প্রধানের কণ্ঠস্বর। এইভাবে, প্রাক্তন কমিউনিস্টদের দ্বারা করা অভিযোগে অবিচ্ছিন্নভাবে যে সন্দেহের সৃষ্টি হয়েছিল তাতে কলঙ্কিত হওয়ার পরিবর্তে, ক্রুশ্চেভের মন্তব্যটি এমন দীপ্তি অর্জন করেছিল যা তার নেতার প্রতি মহিমা প্রতিফলিত করেছিল এবং মনের উপর “গোপন বক্তৃতা” এর অসাধারণ শক্তি এই সত্য থেকে উদ্ভূত হয়েছিল যে এটি কোন প্রতিপক্ষ ছিল না।”
ক্রুশ্চেভের বক্তৃতার আগে, কমিউনিস্টদের দ্বারা সংঘটিত অপরাধের নিন্দা শুধুমাত্র তাদের বিরোধীদের কাছ থেকে বা ট্রটস্কীয় ভিন্নমতাবলম্বী বা নৈরাজ্যবাদীদের কাছ থেকে এসেছিল। বেশিরভাগ সময়, গুলাগ ক্যাম্পে বা অন্যধরনের কমিউনিস্ট নৃশংসতার ভুক্তভোগী সাক্ষীর বক্তব্য এবং স্বাধীন কমিশন দ্বারা সম্পাদিত কাজ, যেমন ডেভিড রুসেটের ‘ইন্টারন্যাশনাল কমিশন অন দ্য কনসেন্ট্রেশন ক্যাম্প সিস্টেম’ এবং স্টালিনের অপরাধ সম্পর্কে সত্য খোঁজার কমিশন, কমিউনিস্টদের প্রচারের নীচে চাপা পড়ে গিয়েছিল । এই ধরনের প্রচার অন্যান্য ভুক্তভোগীদের ভীরুতা বা উদাসীনতা থেকে জন্ম নেওয়া নীরবতায় বল পেয়েছিল। ভার্লাম শালামভের ‘কলিমা টেলস’ , সোলঝেনিটসিনের ‘গুলাগ আর্কিপেলাগো’ সোভিয়েত রাশিয়ায় কমিউনিস্ট নৃশংসতা আর পিন ইয়াথায়ের ‘স্টে অ্যালাইভ, মাই সন’ কম্বোডিয়ায় কমিউনিস্ট অত্যাচারের বিবরণ দেয়।
কিন্তু কমিউনিস্ট প্রচারতন্ত্র প্রত্যক্ষদর্শীদের এই বিবরণকে কমিউনিস্ট বিরোধীদের চক্রান্ত বলে উড়িয়ে দিতে পারলেও ক্রুশ্চেভের ‘গোপন বক্তব্য’ কে তারা বিরোধীদের চক্রান্ত বলে উড়িয়ে দিতে পারে না।
একবিংশ শতাব্দীতে যদি যে কোনো গণতান্ত্রিক দেশে গণহত্যাকারীদের সামনে রেখে সামাজিক ন্যায়ের কথা বলা হয় , উন্নত রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থার মরিচীকা দেখানো হয় তাহলে ইতিহাসের সেই কলঙ্কিত অধ্যায়গুলোকে সমাজের সামনে রাখা প্রত্যেক ইতিহাসবিদের কর্তব্যের মধ্যে পড়ে। কিন্তু উল্টে যদি ইতিহাসবিদরা নিজেই কমিউনিজমের সমর্থক হয়ে কলঙ্কিত অধ্যায়গুলিকে যথাসম্ভব ঢাকার চেষ্টা করেন বা মহিমান্বিত করেন তাহলে কমিউনিজমের আসল রূপ উদঘাটনের দায়িত্ব সাধারণ নাগরিকদের নিতে হয়। হিটলারের সর্বগ্ৰাসী একনায়ত্বকে যেমন ইতিহাস পাঠ্যপুস্তকে রাখা হয়েছে আর যেমন অকপটভাবে রাখা হয়েছে , কমিউনিস্টদের তথাকথিত ‘সর্বহারার একনায়কত্ব’ -এর আসল রূপকে পর্দার আড়াল থেকে সরানো প্রয়োজন।
তথ্যসূত্র :
১) The Human Cost of Soviet Communism —- Robert Conquest
২) The Black Book of Communism —- Harvard University Press (1999)
পিন্টু সান্যাল