মহরাষ্ট্রের তরুণী চিকিৎসকের আত্মহত্যার ঘটনায় এ বার মুখ খুললেন মুখ্যমন্ত্রী দেবেন্দ্র ফডণবীস। নিজের হাতের তালুতে দু’জনের নাম লিখে আত্মঘাতী হন ওই চিকিৎসক। তাঁর অভিযোগ, এসআই পদমর্যাদার এক পুলিশ আধিকারিক তাঁকে চার বার ধর্ষণ করেছেন। এ ছাড়া, বাড়িওয়ালার পুত্র টানা পাঁচ মাস ধরে শারীরিক এবং মানসিক ভাবে তাঁকে হেনস্থা করেছেন। সেই ঘটনায় কাউকে রেয়াত করা হবে না, শনিবার স্পষ্ট করে দিলেন মহারাষ্ট্রের মুখ্যমন্ত্রী। তিনি জানান, দোষীদের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ করা হবে।
মহারাষ্ট্রের ওই তরুণী চিকিৎসকের আত্মঘাতীর ঘটনায় দুঃখপ্রকাশ করেন ফডণবীস। তিনি বলেন, ‘‘এটা খুবই গুরুতর বিষয় যে, তরুণী চিকিৎসক তাঁর জীবন শেষ করার আগে এ ভাবে নিজের যন্ত্রণা প্রকাশ করেছেন। এটা আমাদের সকলের কাছে দুঃখজনক।’’ এ ব্যাপারে রাজ্য সরকার যে ‘জ়িরো টলারেন্স’ নীতি নিয়েছে, তা বুঝিয়ে দিয়েছেন মহারাষ্ট্রের মুখ্যমন্ত্রী। তিনি জানান, ইতিমধ্যেই সংশ্লিষ্ট ওই পুলিশ আধিকারিককে বরখাস্ত করা হয়েছে। তাঁর কথায়, ‘‘গ্রেফতারিও শুরু হয়েছে। কাউকে রেয়াত করা হবে না।’’
পাশাপাশি, এই ঘটনায় রাজনীতির রং না-লাগানোর বার্তাও দিয়েছেন ফডণবীস। রাজনৈতিক দলগুলির উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘‘আমি বিশ্বাস করি এই ধরনের সংবেদশীল বিষয় নিয়ে বিরোধীদের রাজনীতি করা উচিত নয়।’’ তিনি এ-ও জানান, ঘটনা প্রকাশ্যে আসার পর পরই সাতারার পুলিশ সুপার তুষার দোশির সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন এবং অভিযুক্ত সাব-ইন্সপেক্টরকে বরখাস্ত করার নির্দেশ দিয়েছেন।
তবে মুখ্যমন্ত্রী দোষীদের রেয়াত না-করার কথা বললেও পুলিশ উল্টে মৃত তরুণী চিকিৎসককে ‘কাঠগড়ায়’ তুলছে। চিকিৎসকের বিরুদ্ধে ‘দুর্ব্যবহার’ এবং কাজে অসহযোগিতার অভিযোগ দায়ের করে পুলিশ। সংবাদমাধ্যম সূত্রে খবর, ফলটন গ্রামীণ থানার ইন্সপেক্টর সুনীল মহাধিক তাঁর চিঠিতে দাবি করেছেন, ওই তরুণী চিকিৎসক পুলিশের সঙ্গে সহযোগিতা করতেন না। আধিকারিকদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করতেন প্রায়ই।
ফলটনের একটি সরকারি হাসপাতালে চুক্তিভিত্তিক চিকিৎসক হিসাবে কর্মরত ছিলেন ওই তরুণী। গত বৃহস্পতিবার সাতারার একটি হোটেল থেকে তাঁর দেহ উদ্ধার হয়। তাঁর হাতের তালুতে লেখা শেষ বার্তায় গুরুতর অভিযোগ করেন তিনি। চিকিৎসকের পরিবারের দাবি, চাপ দিয়ে নানা অনৈতিক কাজ করতে বাধ্য করা হত তরুণীকে। এমনকি, লিখিয়ে নেওয়া হত ভুয়ো মেডিক্যাল রিপোর্ট। কোনও রকম শারীরিক পরীক্ষা ছাড়াই ওই সমস্ত রিপোর্ট লিখতে বাধ্য করা হত তরুণীকে। হুমকিও দেওয়া হত। একাধিক বার ডিএসপি-সহ পুলিশের উচ্চপদস্থ আধিকারিকদের চিঠি লিখেছিলেন তিনি, কিন্তু লাভ হয়নি। শুধু হাতের তালুতে নয়, চার পাতার একটি সুইসাইড নোটও উদ্ধার করেছে পুলিশ। সূত্রের খবর, সেই নোটেও ভুয়ো মেডিক্যাল রিপোর্টের জন্য চাপের কথা উল্লেখ করেছিলেন তরুণী চিকিৎসক। এই ঘটনায় এখনও পর্যন্ত এক জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। পুলিশ জানিয়েছে, বাড়িওয়ালার অভিযুক্ত পুত্র প্রশান্ত বঙ্করকে ধরা হয়েছে। তবে এখনও অধরা পুলিশ আধিকারিক।

