মহারাষ্ট্রে ‘ধর্ষিতা’ মহিলা চিকিৎসকের আত্মহত্যার ঘটনায় স্বতঃপ্রণোদিত ভাবে মামলা রুজু করল জাতীয় মহিলা কমিশন। শুক্রবার ওই অভিযোগের গুরুত্ব অনুধাবন করে মহারাষ্ট্রের ডিজিকে চিঠি দিয়েছেন কমিশনের চেয়ারপার্সন বিজয়া রাহাতকর। তাঁর নির্দেশ, আগামী ৫ দিনের মধ্যে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ করতে হবে পুলিশকে। সব দিক দিয়ে অভিযোগ খতিয়ে দেখে রিপোর্ট দিতে হবে।
ডিজি-কে চিঠিতে জাতীয় মহিলা কমিশন লিখেছে, নারীর সুরক্ষা, সম্মান এবং কর্মক্ষেত্রে তাঁর মানসিক সুরক্ষা যাতে বজায় থাকে, তা নিশ্চিত করতেই হবে। মহারাষ্ট্রের ঘটনায় যাঁরা জড়িত, তাঁদের কড়া শাস্তি দেওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে পুলিশ-প্রশাসনকে। অন্য দিকে, মূল অভিযুক্ত এসআই-কে বরখাস্ত করা হলেও তাঁর খোঁজ মেলেনি বলে মহারাষ্ট্র পুলিশ সূত্রে খবর।
সাতারার ফলটনের উপ-জেলা হাসপাতালের মেডিক্যাল অফিসার হিসাবে কর্মরত ছিলেন ওই মহিলা চিকিৎসক। গত বৃহস্পতিবার রাতে তাঁর ঝুলন্ত দেহ উদ্ধার হয়। পুলিশের দাবি অনুযায়ী, রাত সাড়ে ১০টা নাগাদ সাতারা জেলার ফলটনের একটি ‘সুপরিচিত হোটেলে’র তালাবদ্ধ ঘর থেকে চিকিৎসকের দেহ পাওয়া যায়।
তার পরেই মহারাষ্ট্রের আলোড়ন ফেলে দিয়েছে ওই ঘটনা। কারণ, মহিলা চিকিৎসক আত্মহত্যার আগে বাঁ হাতের তালুতে লিখে গিয়েছেন, কেন নিজেকে শেষ করে দিতে চলেছেন তিনি। পরিবারের দাবি, ওটাই সুইসাইড নোট। চিকিৎসকের হাতের তালুতে লেখা ছিল, গত পাঁচ মাসের মধ্যে ওই চিকিৎসককে চার বার ধর্ষণ করেছেন এক এসআই। তাঁকে মানসিক হেনস্থা করতেন আর এক পুলিশকর্মী। তাঁদের নামও লিখে যান।
ওই ঘটনা সামনে আসার সঙ্গে সঙ্গে মহারাষ্ট্রের মুখ্যমন্ত্রী দেবেন্দ্র ফডনবীসের নির্দেশে অভিযুক্ত এসআইকে বরখাস্ত করা হয়েছে। শুক্রবার মহারাষ্ট্রের পুলিশ সূত্রকে উদ্ধৃত করে বেশ কয়েকটি সংবাদমাধ্যম জানিয়েছে, অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে ধর্ষণ এবং আত্মহত্যায় প্ররোচনার অভিযোগে মামলা দায়ের করা হয়েছে।
শুক্রবার বিকেলে সংবাদ সংস্থা এএনআই-কে সাতারার পুলিশ সুপার সুপারতুষার দোশী বলেন, ‘‘এক জন মহিলা চিকিৎসক আত্মহত্যা করেছেন। তাঁর হাতের তালুতে এক জন পুলিশকর্মী-সহ দু’জনের নাম লেখা ছিল। তাঁদের বিরুদ্ধে ধর্ষণ এবং আত্মহত্যায় প্ররোচনার অভিযোগে মামলা দায়ের করা হয়েছে। অভিযুক্ত এসআইকে দায়িত্ব থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। আমাদের বাহিনী দুই অভিযুক্তকে খুঁজে বার করার চেষ্টা করছে। পুঙ্খানুপুঙ্খ তদন্ত করে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’’
শুক্রবার মৃত মহিলা চিকিৎসকের ভাই জানান, তাঁরা মহারাষ্ট্রের বীড জেলার বাসিন্দা। বছর দুয়েক আগে ফলটনের উপ-জেলা হাসপাতালের মেডিক্যাল অফিসার হিসাবে নিযুক্ত হন তাঁর দিদি। কিন্তু কর্মক্ষেত্রে ক্রমাগত হুমকির মুখে পড়েন তিনি। দিদিকে দিয়ে জোর করে ভুয়ো ময়নাতদন্তের রিপোর্ট থেকে ফিটনেস রিপোর্ট তৈরি করানো হত। তাঁর কথায়, ‘‘দিদিকে বাধ্য করা হত রোগী বা রোগীর পরিজনদের অনুপস্থিতে ওই সমস্ত রিপোর্ট তৈরি করতে।’’ তিনি আরও বলেন, ‘‘গত বছর থেকে পুলিশ এবং নেতাদের চাপের সম্মুখীন হয়েছিল ও। ওকে দিয়ে মিথ্যা ময়নাতদন্তের রিপোর্ট তৈরি করার চাপ দেওয়া হত। এ জন্য ডিসিপি-র কাছে একটি চিঠি লিখেছিল দিদি। কিন্তু তাঁরা কিছুই করেননি।’’ একই কথা বলছেন মহিলা চিকিৎসকের কাকাও। তিনি দাবি করেছেন, এখনও চলছে এমন একটি মামলার ময়নাতদন্তের রিপোর্ট পরিবর্তন করার জন্য ওর উপর প্রচণ্ড চাপ ছিল। ওই চাপ আসছিল পুলিশ বিভাগের ভিতর থেকেই।’’ তাঁরও অভিযোগ, রাজনৈতিক এবং প্রশাসনিক চাপে এমন পথ বেছে নিতে বাধ্য হন মহিলা চিকিৎসক।
অন্য দিকে, মহারাষ্ট্র মহিলা কমিশনের প্রধান রূপালী চাকঙ্কর বলেছেন, ‘‘আমরা বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে দেখছি। সাতারা জেলা পুলিশকে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছি। অভিযুক্তদের খুঁজে বার করার জন্য একটি দলকে মোতায়েন করা হয়েছে। এই দুর্ভাগ্যজনক ঘটনায় জড়িতেরা রেহাই পাবে না।’’

