আগামী সোমবার, ২২ জানুয়ারি রাম মন্দিরের (Ram Temple) উদ্বোধন। ওই দিনই রামলালার (Ram Lalla Murti) প্রাণপ্রতিষ্ঠা। তবে তার আগেই গতকাল প্রকাশ্যে এসেছিল রামলালার মূর্তির প্রথম ছবি। রামলালার যে ছবি প্রাথমিক ভাবে সামনে এসেছিল তাতে দেখা গিয়েছিল, বিগ্রহের মুখ ও হাত হলুদ রঙের কাপড়ে ঢাকা, শরীর সাদা রঙের কাপড়ে ঢাকা। কিন্তু সন্ধের দিকে রামলালার অনাবৃত মূর্তির ছবিই ভাইরাল হয়। কিন্তু প্রাণপ্রতিষ্ঠার আগে কীভাবে মূর্তির চোখ অনাবৃত হতে পারে, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলে দিলেন খোদ শ্রীরাম জন্মভূমি তীর্থক্ষেত্রের প্রধান পুরোহিত আচার্য সত্যেন্দ্র দাস। জন্ম হল এক নতুন বিতর্কের।
রামমন্দির কর্তৃপক্ষ গত সন্ধ্যায় রামলালার মূর্তির ব্যাখ্যামূলক একটি ছবি প্রকাশ করেছিলেন। যাকে আমরা ডায়াগ্রাম বলি। ‘মূর্তি কি খাসিয়ত’ নামে সেই ছবি নিয়েও দেশ জুড়ে হইহই। আবেগের বিস্ফোরণ। মুহূর্তে ছবি ভাইরাল। সেই ছবিতে অবশ্য রামলালার চোখ হলুদ কাপড়ে ঢাকা ছিল।
যাই হোক, আজ, শনিবার রামলালার অনাবৃত বিগ্রহের ছবি প্রকাশ নিয়ে তদন্ত দাবি করলেন শ্রীরাম জন্মভূমি তীর্থক্ষেত্রের প্রধান পুরোহিত আচার্য সত্যেন্দ্র দাস। তিনি বলেছেন, প্রাণপ্রতিষ্ঠার আগে কখনও কোনও মূর্তির মুখ অনাবৃত হতে পারে না, দেখতে পাওয়ার কথা নয় বিগ্রহের চোখও। তাহলে কী ভাবে রামালালার মূর্তি প্রকাশ্যে এল? কে প্রকাশ করল? কার অনুমতি নিয়ে তা প্রকাশ্যে এল? এসব নিয়ে রীতিমতো তদন্তের দাবি জানালেন শ্রীরাম জন্মভূমি তীর্থক্ষেত্রের প্রধান পুরোহিত আচার্য সত্যেন্দ্র দাস।
গতকাল যে মূর্তি-পরিচয় প্রকাশিত হয়েছিল, তা কেমন?
জানা গিয়েছিল, কর্ণাটকের ভাস্কর অরুণ যোগরাজের তৈরি রামলালার মূর্তিটির ওজন ২০০ কিলো। মূর্তিটি ৪.২৪ ফুট লম্বা, ৩ ফুট চওড়া। রামলালার মূর্তির উপরের দিকে স্বস্তিকচিহ্ন, ওঁ-চিহ্ন, চক্র ও গদা চিহ্ন। রামলালার মূর্তির একেবারে শীর্ষে সূর্য। রামলালার মূর্তির চারপাশে পাথরে অঙ্কিত দশাবতার। রামলালার ডানদিকে যথাক্রমে মৎস্য, কূর্ম, বরাহ, নৃসিংহ এবং বামন অবতার। বাঁদিকে যথাক্রমে পরশুরাম, রাম, কৃষ্ণ, বুদ্ধ এবং কল্কি অবতার। অবতারগণের একেবারে নীচে একদিকে আছেন হনুমান, একদিকে গরুড়। রামলালা দাঁড়িয়ে আছেন প্রস্ফুটিত এক পদ্মের উপরে।
বৃহস্পতিবার ভোররাতে রামমন্দিরের গর্ভগৃহের মূল ফটকের সামনে আনা হয় রামলালার মূর্তিকে। বৃহস্পতিবার বিকেলে গর্ভগৃহের আসনে বসানো হয় বিগ্রহটিকে। দেখা গিয়েছে, মূর্তির সামনে হাত জোড় করে দাঁড়িয়ে আছেন নির্মাণকাজের সঙ্গে জড়িত শ্রমিকরা। চার ঘণ্টারও বেশি সময় লেগেছে রামের এই মূর্তিটি গর্ভগৃহের আসনে বসাতে। রামলালার বিগ্রহের আবরণ উন্মোচন হয়নি। ঢাকা অবস্থাতেই মূর্তিটি গর্ভগৃহের আসনে স্থাপন করা হয়েছে।
৪ ঘণ্টা ধরে পুজোপাঠের পরে অযোধ্যার মহাযজ্ঞ শেষে রামমন্দিরের গর্ভগৃহে অধিষ্ঠিত হয়েছিলেন রামলালা। ২২ জানুয়ারি অযোধ্যায় রামমন্দিরের উদ্বোধন হবে। ওই দিন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর হাতেই উদ্বোধন। তবে দুদিন আগে ১৬ জানুয়ারি থেকেই শুরু হয়ে গিয়েছে রামমন্দিরের আচার-অনুষ্ঠান। ১৬ জানুয়ারি হয়েছে দশবিধ স্নান, বিষ্ণুপূজা, সরযূতীরে গোদান দিয়ে রামমন্দিরের অনুষ্ঠান-পর্ব শুরু হয়েছে। পরদিন ১৭ জানুয়ারি রামলালার মূর্তি নিয়ে শোভাযাত্রা অযোধ্যায় পৌঁছেছে। তাঁদের সঙ্গে ছিল সরযূর জলে পূর্ণ কলস। ১৮ জানুয়ারি গণেশ পুজো দিয়ে প্রাণ প্রতিষ্ঠার মূল অংশের আচারও শুরু হয়েছে। ছিল ব্রাহ্মণবরণ বা বাস্তুপূজার মতো অনুষ্ঠানও। আজ, ১৯ জানুয়ারি নবগ্রহ প্রতিষ্ঠা হবে, হবে হোমও। আজ, ২০ জানুয়ারি সরযূর জলে মন্দির ধোয়া হবে, পরে হবে অন্নাধিবাস। আগামীকাল, ২১ জানুয়ারি রামলালাকে ১২৫ কলসজলে স্নান করানো হবে। ২২ জানুয়ারি দুপুর ১২টা ৩০ মিনিট থেকে ১টা-র মধ্যে প্রাণ প্রতিষ্ঠা অনুষ্ঠান শুরু।