যুদ্ধে মোটেই আগ্রহী নয় ভারত, কিন্তু কেউ তাকে আঘাত করলে সে চুপ করে থাকবে না। দেশের এক বিখ্যাত গণমাধ্যম সংস্থা আয়োজিত অনুষ্ঠানে যুদ্ধবিষয়ে ভারতের মনোভাব পরিষ্কার করলেন ভারতের প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিং।
ভারতের সীমান্তে ইদানীং নানা চ্যালেঞ্জ আসছে। সেই সব চ্যালেঞ্জ নিজের মতো করে মোকাবিলাও করে আসছে ভারত। এবং সেই মোকাবিলার প্রক্রিয়ায় যদি যুদ্ধের দিকেও যেতে হয় তবে সেজন্যও ভারত প্রস্তুত বলে জানিয়ে দিলেন ভারতের প্রতিরক্ষামন্ত্রী। তিনি বলেন, জল-স্থল অন্তরীক্ষ– যে কোনও দিক থেকে দেশ আক্রান্ত হলে তার যথাযথ জবাব দিতে সক্ষম ভারত। রাজনাথ পরিষ্কার করে বলে দেন, ‘আমরা কখনও কারও জমি দখল করি না। কিন্তু কেউ আমাদের আক্রমণ করলে আমরা তার উপযুক্ত জবাব দেব। এ সংক্রান্ত যে কোনও রকম সংকট মোকাবিলায় প্রস্তুত ভারত।’
কারও দিকে ঈঙ্গিত করে কি এ কথা বলল ভারত? কার দিকে ঈঙ্গিত করে?
সংশ্লিষ্ট মহলের মতে, আসলে চিনকে ঠেস মেরেই এ কথা বলেছে ভারত।
কেন চিন?
আসলে ভারত যখন এ কথাটা বলল ঠিক সেই সময়েই চিন তার প্রতিরক্ষাবাজেট ৭.২ শতাংশ বৃদ্ধি করার কথা ঘোষণা করেছে। শুধু তাই নয়, গত কয়েকমাস ধরে ভারত মহাসাগরের দ্বীপরাষ্ট্র মলদ্বীপকে ঘিরে চিন-ভারত টানাপোড়েন তুঙ্গে। মলদ্বীপে চিনের সামরিক উপস্থিতি ভারতের চিন্তা বাড়িয়েছে। চিনের একটি যুদ্ধজাহাজকে মলদ্বীপে অনির্দিষ্টকালের জন্য নোঙর করার অনুমতি দেওয়া হয়েছে। এর উপর আবার মলদ্বীপকে বিনামূল্যে সামরিক সহযোগিতা দিতেও চুক্তিবদ্ধ হয়েছে চিন। মলদ্বীপে চিনপন্থী হিসেবে পরিচিত প্রেসিডেন্ট মহম্মদ মুইজ্জু ক্ষমতাসীন হওয়ার পর থেকে ভারতের সঙ্গে তাদের সম্পর্কের রীতিমতো অবনতি ঘটেছে। ঠিক এই রকম ভূরাজনৈতিক পরিস্থিতিতে এবং এই রকম বৈদেশিক সম্পর্কের প্রেক্ষিতে রাজনাথ সিংয়ের মন্তব্য তাই যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণই ঠেকছে।
কোনো কোনো মহলের ধারণা, সেনাবাহিনীর মনোবল বাড়ানোর পাশাপাশি দেশের মানুষকে নিরাপত্তা নিয়ে আশ্বস্ত করাই রাজনাথের মূল উদ্দেশ্য। সেই কারণে তিনি বারবার ভারতের শক্তিশালী হয়ে ওঠার উপর জোর দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, আজ আমরা প্রতিরক্ষার ক্ষেত্রে আত্মনির্ভর হতে পেরেছি, তাই বিশ্বে ভারতের মর্যাদা ও গুরুত্ব আগের চেয়ে অনেক বেড়েছে।
২০২০ সালে পূর্ব লাদাখে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ ঘটেছিল চিন-ভারতে। বিরোধী দলগুলোর অভিযোগ, ওই সংঘর্ষের সময় থেকে পূর্ব লাদাখে ভারতের ২০০০ বর্গকিলোমিটার জমি চিনের কবজায়। চিন সরকারের অবশ্য দাবি, ভারতের কোনও জমি চিনের দখলে নেই। ২০২০ সালের সংঘর্ষের পর থেকে চিন-ভারত সম্পর্কের যথেষ্ট অবনতি হয়েছে। ওই সংঘর্ষের পর দু’দেশের মধ্যে সীমান্ত-অবস্থান সংঘর্ষের আগের অবস্থায় ফিরিয়ে নিয়ে যেতে বহু বৈঠক হয়েছে দু’দেশের মধ্যে। কিন্তু এখনও তা পুরনো অবস্থায় ফিরিয়ে নিয়ে যাওয়া যায়নি।