রবীন্দ্রজয়ন্তীর দিন সকলেই সকাল থেকে হোয়াটস অ্যাপ হোক বা টুইটার, ফেসবুকে নিজের মতো করে শুভেচ্ছা পাঠিয়ে চলেছেন। বহু শুভেচ্ছাবার্তায় রয়েছে রবীন্দ্রনাথ সম্পর্কে নানান তথ্য, নানান উবাচ। তবে জানেন কি, শান্তিনিকেতন কিম্বা কলকাতা থেকে ক্রোশ ক্রোশ দূরে রিও দে জেনেইরিওর এক স্কুল আজ রবীন্দ্রজয়ন্তী উৎসবে মুখর। যদি আপনাকে কেউ জিজ্ঞাসা করেন যে, যে রবীন্দ্রনাথ সম্পর্কে সবচেয়ে ‘অন্যরকমের’ তথ্য আপনার কাছে কী জানা আছে? তাহলে তাঁকে হদিশ দিতে পারেন এই স্কুলের। যে স্কুল প্রকৃত অর্থে রবীন্দ্রভাবনায় উজ্জিবীত।
স্কুলে বিশেষভাবে সক্ষম থেকে শুরু করে সমাজের সমস্ত স্তরের সমস্ত রকমের ছেলে মেয়েরা ভেদাভেদ ভুলে একসঙ্গে পঠনপাঠন করে। স্কুল আজ সাড়ম্বরে পালন করছে রবীন্দ্রনাথের জন্মজয়ন্তী উৎসব। ভাবছেন কলকাতা থেকে এক দূরে কীভাবে রবীন্দ্রনাথকে ঘিরে এই উন্মাদনা আজও রয়েছে রিও দে জেনেইরিওতে? তাহলে শুনে নেওয়া যাক এক ইতিহাসের কাহিনি।
সালটা ১৯২৪। সেই বছর পেরুতে স্বাধীনতা দিবস উৎসব উপলক্ষ্যে আমন্ত্রিত ছিলেন নোবেলজয়ী রবীন্দ্রনাথ। সেই সময় ইউরোপগামী এক জাহাজে চড়ে কলম্বো থেকে রওনা হয়েছিলেন কবিগুরু। এরপর সাউথ আমেরিকা থেকে ফ্রান্সে যাওয়ার সময় , তিনি আচমকা অসুস্থ হয়ে পড়েন। চিকিৎসক তাঁকে পেরু যাওয়ার আগে খানিকটা বিশ্রাম নিতে বলেন। দক্ষিণ আমেরিকার সফর কাটছাঁট করে এরপর মাঝপথে রিওদে জেনেইরোতে অবতরণ করেন রবীন্দ্রনাথ। সাহিত্যিক সিসিলিয়া মেইরেলেস সেই সময় রবীন্দ্রনাথের বহু কবিকার অনুবাদ করেছেন। ফলে ব্রাজিলে তখন রবীন্দ্রনাথ অচেনা মানুষ ছিলেন না। ফলে কবিগুরু সেখানে যেতেই ব্যাপক সমাদর হয় তাঁর। কবিগুরুর সেই রিও দে জেনেইরো ভ্রমণকালকে স্মরণে রেখে সেখানে ১৯৬৩ সালে মিউনিসিপাল স্কুল টেগোর-এর প্রতিষ্ঠা হয়।
স্কুলে রবীন্দ্রচেতনায় উদ্বুদ্ধ হতে থাকে পড়ুয়ারা। যাবতীয় ভেদাভেদের উর্ধ্বে গিয়ে মানবচেতনার জয়গান গাওয়া হয় এই স্কুলে। এছাড়াও শিক্ষাবিদ লুসিয়া ক্যাসাস্যান্টাও এই ভেদাভেদের উর্ধ্বে গিয়ে পঠনপাঠনে এই স্কুলে বড়সড় ভূমিকা নেন। এই স্কুল বৈচিত্রের মধ্যে একাত্মতাকে খুঁজে নিতে আজও উদ্যোগ নেয়। আর সেই দর্শন থেকেই এখানে পালিত হচ্ছে রবীন্দ্র জয়ন্তী।