তরুণীকে রাস্তায় ফেলে এক ছড়া কঞ্চি দিয়ে বেধড়ক মেরে চলেছেন এক পুরুষ। মার খেতে খেতে গুটিয়ে যাওয়া মেয়েটিকে আবার চুলের মুঠি ধরে টেনে এনে ধাক্কা দিয়ে মাটিতে ফেলা হচ্ছে। আবার শুরু হচ্ছে মার। খানিক পরে দেখা গেল, এক তরুণও ওই তরুণীর কাছেই রাস্তায় পড়ে কাতরাচ্ছেন। গোটা ঘটনাটিই ঘটছে গোল হয়ে দাঁড়িয়ে থাকে একদল মানুষের চোখের সামনে। কাউকে খুব একটা বাধা দিতেও দেখা যাচ্ছে না। এই দৃশ্য দেখা যাচ্ছে ছড়িয়ে পড়া একটি ভিডিয়ো ক্লিপে।
রবিবার দুপুরে নিজের এক্স (সাবেক টুইটার) হ্যান্ডলে ভিডিয়োটি পোস্ট করেছেন সিপিএম রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম। সেলিম লিখেছেন, ‘‘সালিশি সভাও নয়। অপরাধের বিচার এবং শাস্তি দিচ্ছে তৃণমূলের পোষা গুন্ডা। যার ডাকনাম জেসিবি। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের শাসনে এ ভাবেই বিচার ব্যবস্থাকে দুরমুশ করা হচ্ছে চোপড়ায়।’’ পরে একই ভিডিয়ো পোস্ট করে বিজেপির আইটি সেলের প্রধান অমিত মালবীয় লেখেন, ‘‘মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের শাসনে থাকা বাংলার কুৎসিত মুখ।… প্রত্যেক গ্রামেই সন্দেশখালি রয়েছে।’’
চোপড়া উত্তর দিনাজপুর জেলার মধ্যে হলেও, আলাদা পুলিশ জেলা ইসলামপুরের অংশ। আনন্দবাজার অনলাইনের তরফে যোগাযোগ করা হয় ইসলামপুরের পুলিশ সুপার জবি থমাস কে-র সঙ্গে। এসপি বলেন, ‘‘আমরা ঘটনাটির ব্যাপারে জেনেছি। ভিডিয়োও দেখেছি। প্রাথমিক তদন্তে জানতে পেরেছি লক্ষ্মীপুর গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকায় দিন দু’য়েক আগে এটি ঘটেছে। এ ব্যাপারে আমরা একটি সুয়ো মোটো (স্বতঃপ্রণোদিত) মামলা দায়ের করেছি। যাঁরা অত্যাচার করেছেন, তাঁদেরকে গ্রেফতার করার জন্য ওই এলাকায় অভিযান চালাচ্ছে পুলিশ।’’
জেলা সিপিএমের দাবি, যিনি মারছেন তাঁর নাম তাজম্মুল। তিনি চোপড়ার তৃণমূল বিধায়ক হামিদুল রহমানের ঘনিষ্ঠ। এলাকায় জেসিবি নামেই চেনেন সকলে। সিপিএমের জেলা সম্পাদক তথা রাজ্যের প্রাক্তন মন্ত্রী আনোয়ার উল হক বলেন, ‘‘যত দূর শুনেছি, ভিডিয়োতে যে মহিলাকে মাটিতে ফেলে মারধর করা হচ্ছে, তিনি বিবাহিত। তবে এক ব্যক্তির সঙ্গে বাড়ি ছেড়ে চলে যান। পরে ফিরে এলে দু’জনের কাছ থেকে ১০ হাজার টাকা চাওয়া হয়। বলা হয় ওই অর্থ না দিলে তাঁদের এলাকায় থাকতে দেওয়া হবে না। তাঁরা সেই জরিমানা না দেওয়ায় তাঁদের উপর অত্যাচার করা হয়।’’
ঘটনাটি যে ঘটেছে, সে কথা মেনে নিয়েছেন চোপড়ার বিধায়ক হামিদুলও। একই সঙ্গে স্বীকার করেছেন, ভিডিয়োয় তরুণী এবং তরুণকে মারধর করতে দেখা যাচ্ছে যাঁকে, সেই তাজম্মুল এলাকায় তৃণমূলেরই হয়ে কাজ করেন। হামিদুল বলেন, ‘‘এ রকম একটি ঘটনা ঘটেছে। ওই মহিলা যদি পুলিশে এ ব্যাপারে অভিযোগ করেন, অবশ্যই তাজম্মুলকে গ্রেফতার করা হবে।’’ অন্য দিকে, তৃণমূলের উত্তর দিনাজপুরের জেলা সভাপতি কানাইলাল আগরওয়াল বলেন, ‘‘সুয়োমোটো মামলা করে জেসিবির খোজে বেড়িয়েছে চোপড়া পুলিশ।’’ জেলার সহ সভাপতি অরিন্দম সরকার বলেন, ‘‘এই ঘটনাটি যিনিই ঘটিয়ে থাকুক, তা নিন্দনীয়। প্রশাসন নিশ্চই ব্যবস্থা নেবে। আমাদের দল (তৃণমূল), আমাদের সরকার এসব কাজকে প্রশ্রয় দেয় না।’’ পাল্টা ইসলামপুরের বিজেপি নেতা সুরজিৎ সেনের দাবি, ‘‘লক্ষীপুরের ওই ব্যক্তি অনেকগুলি মামলায় অভিযুক্ত হলেও তাকে পুলিশ গ্রেফতার করেনি। তার কারন তিনি চোপড়ার বিধায়কের ঘনিষ্ঠ।’’
দিন কয়েক আগে কোচবিহারে এক বিজেপি নেত্রীকে পোশাক খুলিয়ে মারধর করা হয়। তাতেও অভিযুক্ত তৃণমূল। এ বার চোপড়ার ঘটনা প্রকাশ্যে এল। সেলিম এ প্রসঙ্গে আনন্দবাজার অনলাইনকে বলেন, ‘‘কার সঙ্গে কার কী সম্পর্ক, তার উপর জরিমানা করে তৃণমূলের পেট ভরে। তার জন্যই এমন পৈশাচিক এবং মধ্যযুগীয় বর্বরতার ঘটনা ঘটানো হয়েছে চোপড়ায়।’’
এর পাল্টা তৃণমূল নেতা কুণাল ঘোষ বলেন, ‘‘ভিডিয়ো দেখে উপর উপরে কিছু বোঝা যাবে না। স্থানীয় স্তরে বাড়িওয়ালা-ভাড়াটে, স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্ক ইত্যাদিতে নাক গলানো শুরু হয়েছিল সিপিএম জমানাতেই। সেটাকেই সিপিএম অন্য কিছু করে ভিডিয়ো টুইট করছে কি না সেটা খতিয়ে দেখতে হবে।’’