চণ্ডীগড়কে কি পঞ্জাব এবং হরিয়ানা থেকে আলাদা করে দেওয়া হবে? বলবৎ হবে রাষ্ট্রপতি শাসন? জাতীয় রাজনীতি সরগরম এমন নানা প্রশ্নে। শোনা যাচ্ছে, চণ্ডীগড়কে ভারতীয় সংবিধানের ২৪০ অনুচ্ছেদের আওতায় আনার চেষ্টা করছে কেন্দ্রীয় সরকার। সংসদে আসন্ন শীতকালীন অধিবেশনে সেই সংক্রান্ত বিলও আনা হতে পারে, এমন জল্পনাও চলছে। বিষয়টি নিয়ে পঞ্জাবের আপ সরকার বার বার নিশানা শানাচ্ছে কেন্দ্রের বিজেপি সরকারকে। সেই আবহে এ বার চণ্ডীগড় নিয়ে কেন্দ্রের অবস্থান জানাল অমিত শাহের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক।
বিবৃতি জারি করে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক জানিয়েছে, চণ্ডীগড় নিয়ে কেন্দ্রীয় আইন প্রণয়নের প্রক্রিয়া আরও সহজ করার যে প্রস্তাব নিয়ে আলোচনা হচ্ছে, তা এখনও বিবেচনাধীন। এ ব্যাপারে কোনও সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি। শাহের মন্ত্রক জোর দিয়েছে পঞ্জাব এবং হরিয়ানার সঙ্গে কেন্দ্রের ঐতিহ্যবাহী সম্পর্কের উপর। বলা হয়েছে, ‘‘চণ্ডীগড়ে বিদ্যমান শাসন ব্যবস্থা বা পঞ্জাব এবং হরিয়ানার সঙ্গে সম্পর্ক পরিবর্তন করতে চায় না কেন্দ্র।’’
সম্প্রতি সংসদীয় এক বুলেটিনে চণ্ডীগড় নিয়ে নতুন বিলের কথা উল্লেখ করা হয়। আন্দামান ও নিকোবর দ্বীপপুঞ্জ, দাদরা ও নগর হাভেলি, দমন ও দিউ, লক্ষদ্বীপ এবং পুদুচেরির মতো কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলগুলির তালিকায় চণ্ডীগড়কে জোড়ার প্রস্তাব দেওয়া হয়। তা নিয়ে বিতর্কের ঝড় ওঠে বিরোধী শিবিরে। বিশেষত, পঞ্জাবের আপ সরকার এর বিরোধিতা করে। অভিযোগ, চণ্ডীগড়ের উপর পঞ্জাবের দীর্ঘ দিনের দাবিকে দুর্বল করার চেষ্টা করছে কেন্দ্রীয় সরকার। উল্লেখ্য, ২৪০ ধারায় দেশের রাষ্ট্রপতি কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে শান্তি, অগ্রগতি এবং সুশাসনের জন্য বিধিমালা তৈরি করতে পারেন।
পঞ্জাবের মুখ্যমন্ত্রী ভগবন্ত সিংহ মান চণ্ডীগড় নিয়ে কেন্দ্রের প্রস্তাবের নিন্দা করেন। তাঁর অভিযোগ, বিজেপি নেতৃত্বাধীন কেন্দ্রের এনডিএ সরকার পঞ্জাবের রাজধানী চণ্ডীগড়কে ছিনিয়ে নেওয়ার ষড়যন্ত্র করছে। তিনি জোর দিয়ে বলেন, ‘‘চণ্ডীগড় সবসময় পঞ্জাবের অংশ ছিল, আছে আর থকবে। মূল রাজ্য হিসাবে পঞ্জাবেরই একমাত্র অধিকার রয়েছে তার রাজধানীর উপর।’’ মানের অভিযোগ, যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামো ভেঙে দেওয়ার চেষ্টা করছে কেন্দ্রীয় সরকার। মানের সুরেই সুর মিলিয়েছেন আপ প্রধান অরবিন্দ কেজরীওয়াল।
শুধু আপ নয়, কংগ্রেস, শিরোমণি অকালি দলও কেন্দ্রের পদক্ষেপের নিন্দা করেছে। পঞ্জাব কংগ্রেসের সভাপতি অমরিন্দর সিংহ রাজা কেন্দ্রের সিদ্ধান্তকে ‘সম্পূর্ণ অবাঞ্ছিত’ বলে উল্লেখ করেছেন। তাঁর দাবি, চণ্ডীগড়কে পঞ্জাবের থেকে কেড়ে নেওয়ার সব রকম চেষ্টা প্রতিহত করা হবে। কংগ্রেস সংসদে এই বিলের তীব্র বিরোধিতা করবে। শিরোমণি অকালি দলের সভাপতি সুখবীর সিংহ বাদল জানিয়েছেন, কেন্দ্রের এ ধরনের পদক্ষেপ পঞ্জাবের অধিকারের উপর সরাসরি আক্রমণ।
চণ্ডীগড়ের বিষয়ে বিরোধীদের সঙ্গে কিছুটা সহমত পোষণ করেন পঞ্জাবের বিজেপির প্রধান সুনীল জাখর। তাঁর দাবি, ‘‘রাজ্যের স্বার্থের সঙ্গে সবসময় দৃঢ় ভাবে রয়েছি, তা চণ্ডীগড় সমস্যা হোক বা জলের সমস্যা।’’ তবে তিনি এ-ও মনে করেন, এই বিষয়ে যে কোনও ধরনের বিভ্রান্তি কেন্দ্রের সঙ্গে আলোচনা করে সমাধান করা সম্ভব। আর রাজ্য বিজেপি তা-ই করবে। তারা সবসময় পঞ্জাবের মানুষের পক্ষে।
১৯৬৬ সালে পঞ্জাব থেকে হরিয়ানা আলাদা হয়ে যাওয়ার পরই চণ্ডীগড়কে কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল হিসাবে তৈরি করা হয়। তবে চণ্ডীগড় এখনও পঞ্জাব এবং হরিয়ানার যৌথ রাজধানী। বর্তমানে পঞ্জাবের রাজ্যপালই চণ্ডীগড়ের প্রশাসক। যদিও পঞ্জাবের দীর্ঘ দিনের দাবি, চণ্ডীগড়কে তাদের রাজধানী হিসাবেই রাখা হোক। হরিয়ানার জন্য ঠিক করা হোক পৃথক রাজধানী। যদিও এত দিন সংবিধানের ২৪০ অনুচ্ছেদের আওতায় ছিল না চণ্ডীগড়, যা আন্দামান-নিকোবরের মতো কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের জন্য প্রযোজ্য।

