পিয়ন থেকে ছাপোষা কেরানি— আদালত চত্বরে লোকচক্ষুর সামনেই অবাধে ঘুষ দেওয়া-নেওয়া চলছে। এমনকি, বাদ পড়েনি আদালতকক্ষের অন্দরও। ২০১৭ সালের এক নভেম্বরের সন্ধ্যায় টেলিভিশনের পর্দায় ভেসে উঠেছিল পটনা দেওয়ানি আদালতের কর্মীদের এ হেন কীর্তি।
প্রতীকী ছবি।
০২১৭
২০১৭ সালের ১৫ নভেম্বর দেশ জুড়ে সাড়া ফেলে দিয়েছিল রিপাবলিক টিভির একটি ‘স্টিং অপারেশন’। তাতে দেখা গিয়েছিল, আদালত চত্বরে বসে খোলাখুলিই ঘুষ চাইছেন পটনার বহু নিচুতলার কর্মী। সকলের সামনেই তাঁদের হাতে ঘুষের টাকা গুঁজে দেওয়া হচ্ছে।
প্রতীকী ছবি।
০৩১৭
ওই স্টিং অপারেশনে অভিযোগ করা হয়েছিল, পটনা আদালত চত্বরের প্রায় সর্বত্রই প্রকাশ্যে এ হেন ঘুষ দেওয়া-নেওয়ার খেলায় চলছে। আদালতের নিচুতলার কর্মী থেকে আইনজীবী, মায় পুলিশ পর্যন্ত বিচারাধীন বন্দিদের নানা সুযোগ-সুবিধা দিতে ঘুষ নেন।
প্রতীকী ছবি।
০৪১৭
আদালতকর্মীদের ঘুষ দিয়ে কী কী সুবিধা আদায় করা যেত? অভিযোগ, আবগারি মামলা হোক বা গুরুতর অপরাধে অভিযুক্ত জেলবন্দি— প্রায় সকলেই কিছু না কিছু সুযোগ-সুবিধা পেতে নোটের তাড়া দেখাতেন ওই কর্মীদের। কারও দাবি, সাজার মেয়াদ কাটাতে পছন্দসই জেল। কেউ আবার শুনানি কিংবা আদালতে হাজিরার তারিখ নিজেদের ইচ্ছেমতো ঠিক করতে ঘুষ দিতেন।
প্রতীকী ছবি।
০৫১৭
বিচারব্যবস্থায় এ হেন ফস্কা গেরোয় স্তম্ভিত হয়ে গিয়েছিল গোটা দেশ। এ যেন সর্ষের মধ্যেই ভূত! ’১৭-র বুধসন্ধ্যায় সেই স্টিং অপারেশনের পরের দিনই পটনা আদালতের ষোলো জন কর্মীকে সাসপেন্ড করা হয়েছিল।
প্রতীকী ছবি।
০৬১৭
অভিযুক্তদের মধ্যে ছিলেন পটনা দেওয়ানি আদালতের তিন রিডার মুকেশ কুমার, রমেন্দ্র কুমার, সন্তোষ তিওয়ারি এবং স্টেনোগ্রাফার সুবোধ কুমার-সহ পিয়ন-কেরানি মিলিয়ে ষোলো জন। মুকেশ-সহ ওই ৪ জনই বিশেষ আদালতের আবগারি বিভাগে কর্মরত ছিলেন।
প্রতীকী ছবি।
০৭১৭
১৫ নভেম্বর, বুধবার ওই ভিডিয়ো প্রকাশ্যে আসা মাত্রই মুকেশ, রমেন্দ্র, সন্তোষ এবং সুবোধকে সাসপেন্ড করেন পটনা জেলা ও দায়রা আদালতের বিচারক কৃষ্ণকান্ত ত্রিপাঠী। পরের দিন বাকিদের বিরুদ্ধেও একই নির্দেশ দেন তিনি।
প্রতীকী ছবি।
০৮১৭
নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক পটনা হাই কোর্টের এক আইনজীবী সংবাদমাধ্যমে বলেছিলেন, ‘‘দেওয়ানি আদালতের কর্মী-আধিকারিকদের বিরুদ্ধে স্টিং অপারেশনের ভিডিয়োটি হাই কোর্টের প্রধান বিচারপতির মোবাইলে কেউ পাঠিয়েছিলেন। যদিও এটা কার কাজ, তা আমরা জানি না। তবে ওই ভিডিয়ো দেখার পর প্রধান বিচারপতি দ্রুত পদক্ষেপ করেন।’’
প্রতীকী ছবি।
০৯১৭
ওই আইনজীবী আরও বলেছিলেন, ‘‘পটনা হাই কোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেল বিধুভূষণ পাঠককে চিঠি লিখে অবিলম্বে ওই অভিযুক্তদের সাসপেন্ড করার নির্দেশ দিয়েছেন প্রধান বিচারপতি।’’
প্রতীকী ছবি।
১০১৭
পাঠকের সবুজ সঙ্কেত পাওয়ার পর দ্রুততার সঙ্গে সে নির্দেশ পালন করেছিলেন পটনা জেলা ও দায়রা আদালতের বিচারক। ঘুষ-কাণ্ডে অভিযুক্তদের মধ্যে ছিলেন আদালতের কেরানি, স্টেনোগ্রাফার থেকে এক বিচারকের পিয়নও।
প্রতীকী ছবি।
১১১৭
ঘটনাচক্রে, ওই স্টিং অপারেশনের আগে থেকেই অবশ্য বিহারের বিচারব্যবস্থার ঘুঘুর বাসা ভাঙতে কড়া পদক্ষেপের নির্দেশ দিয়েছিলেন হাই কোর্টের তৎকালীন প্রধান বিচারপতি। বিহারের সমস্ত জেলা আদালতের বিচারকের কাছে তাঁর নির্দেশ ছিল, আদালত চত্বরে নিচুতলার কর্মীদের মধ্যে দুর্নীতি রুখতে হবে।
প্রতীকী ছবি।
১২১৭
পটনা হাই কোর্টের নির্দেশে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় তদন্তও শুরু করা হয়েছিল। হাই কোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেল একে গুরুগম্ভীর বিষয় বলে আখ্যা দিয়ে সংবাদমাধ্যমে বলেছিলেন, ‘‘ষোলো জনকে সাসপেন্ড করা হয়েছে। পাশাপাশি, অসাধু ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে কড়া নজর রাখতে এবং দ্রুত পদক্ষেপের জন্য জেলার সমস্ত বিচারকদের নির্দেশ দিয়েছে হাই কোর্ট।’’ এ বিষয়ে সমস্ত রিপোর্ট হাই কোর্টে জমা দিতে বলেছিল উচ্চ আদালত।
ছবি: সংগৃহীত।
১৩১৭
সংবাদমাধ্যমের কাছে জেলা ও দায়রা আদালতের তৎকালীন বিচারক বলেছিলেন, ‘‘আদালত হল ন্যায়ব্যবস্থার মন্দির। সে চত্বরে কোনও রকমের দুর্নীতি বরদাস্ত করব না আমরা। অনেক আশাভরসা নিয়ে এখানে আসেন মানুষজন। তাঁদের আমরা নিরাশ করতে পারি না।’’
প্রতীকী ছবি।
১৪১৭
ঘুষ-কাণ্ডে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে পটনা হাই কোর্টে জনস্বার্থ মামলাও রুজু করা হয়েছিল। ২০১৯ সালে এই কাণ্ডে সিবিআই তদন্তের নির্দেশ দিয়েছিল পটনা হাই কোর্টের তৎকালীন বিচারপতি রাকেশ কুমারের নেতৃত্বাধীন ১১ সদস্যের বেঞ্চ।
প্রতীকী ছবি।
১৫১৭
ওই স্টিং অপারেশনের বছর তিনেক পর দোষীদের সকলকে চাকরি থেকে ছাঁটাই করার নির্দেশ দেয় পটনা হাই কোর্ট।
ছবি: সংগৃহীত।
১৬১৭
অভিযুক্তদের কড়া শাস্তির দাবিতে আগেই সরব হয়েছিলেন পটনা হাই কোর্টের আইনজীবী দীনেশ সিংহ। সংবাদমাধ্যমে তিনি বলেছিলেন, ‘‘২০২০ সালের জানুয়ারিতে দোষীদের বিরুদ্ধে সাজা শোনায় আদালত। ওই রায়ে বলা হয়েছিল, এই মামলায় সমস্ত তথ্যপ্রমাণ হাই কোর্টের প্রধান বিচারপতির কাছে জমা দিতে হবে।’’
প্রতীকী ছবি।
১৭১৭
২০২১ সালের জানুয়ারিতে ওই ষোলো জনকে চাকরি থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়। পাশাপাশি, তাঁদের বিরুদ্ধে পটনার পিরবহোর থানায় নতুন করে এফআইআর দায়ের করা হয়েছিল।