ইরানে মাহসা আমিনির মৃত্যুর পরে সারা দেশ প্রতিবাদ নেমেছে। সে দেশের মহিলারা প্রকাশ্যে তাঁদের হিজাব খুলে ফেলছেন এবং সেগুলি পুড়িয়ে দিচ্ছেন। ইরানের ‘নীতি পুলিশ’ আমিনিকে গ্রেফতার করেছিল। তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ ছিল, তিনি ‘ভুল প্রথায়’ হিজাব পরেছেন, তিনি তাঁর চুল পুরোপুরি ঢাকেননি। তেহরানে গ্রেফতার করা হয় তাঁকে। কয়েক দিন পরেই তাঁ মৃত্যু খবর আসে। অভিযোগ, তাঁকে মারধর করা হয়েছিল। তেমনই দাবি ওঠে সোশ্যাল মিডিয়ায়। পুলিশ সেই দাবি অস্বীকার করে। পুলিশের তরফে সাফাই দেওয়া হয়, অন্য বন্দিদের সঙ্গে আটক থাকার সময়ে তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন।
এর পর থেকেই ইরানে জ্বলছে আগুন। মহিলারা প্রতিবাদে রাস্তায় নামছেন। কেটে ফেলছেন চুল। পুড়িয়ে ফলছেন হিজাব। বিক্ষোভকারীরা সরকার বিরোধী স্লোগান দিচ্ছেন। এর ফলে প্রতিবাদীদের উপর চলছে নির্মম অত্যাচার। প্রকাশ্যে বহু মহিলাকে হত্যা করা হয়েছে। যে সব পুরুষরা প্রতিবাদের পক্ষে বাদ যাচ্ছেন না তাঁরাও। চলছে কাঁদানে গ্যাস, মারধোর, হত্যা।
এরই মধ্যে সোশ্যাল মিডিয়ায় ইরানের এক স্কুলের দু’টি ভিডিয়ো বেশ ভাইরাল হয়ে গিয়েছে। একটিতে দেখা গিয়েছে, স্কুলের এক ছাত্রীকে। তিনি দেওয়ালে ঝুলিয়ে রাখা একটি ছবি উলটো দিকে ঘুরিয়ে ঝুলিয়ে দিচ্ছেন। এবং ছবিটির পিছন দেখা কিছু লেখা রয়েছে, ছবিটি ঘুরিয়ে দেওয়ার ফলে তা স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে।
ছবিটি কাদের? এটি ইরানের দুই ‘সুপ্রিম লিডার’ রুহোল্লাহ খোমেইনি এবং আলি খামেনেইয়ের। এই দুই নেতাই হলেন ইরানের দীর্ঘতম শাসক। আলি খামেনেই ১৯৮০ সালে সুপ্রিম লিডারের পদে বসেন। ৪৩ বছর সে দেশ তিনি শাসন করে চলেছেন। তাঁর বিরুদ্ধে বারবার অভিযোগ উঠেছে, তিনি ইরানে নারীর অধিকার বিরোধী নানা সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। আর তাঁর শাসনকালে নারীদের অবস্থা খারাপ থেকে খারাপতর হয়েছে বলেও দাবি করেছেন অনেকে। তাঁর আগের সুপ্রিম লিডার রুহোল্লাহ খোমেইনি সম্পর্কেও একই অভিযোগ ছিল।
ইরানের প্রতিটি স্কুলঘরে এই দুই নেতার ছবি রাখা বাধ্যতামূলক। এহেন ছবিই উলটো করে ঝুলিয়ে দিচ্ছে এক স্কুলছাত্রী। দেখা যাচ্ছে, ছবির উলটো দিকে কিছু লেখা। বাংলায় সেই লেখার তর্যমা করলে দাঁড়ায়, ‘নারী, জীবন, স্বাধীনতা’। আর এটিই বিরাট পরিমাণে ভাইরাল হয়ে গিয়েছে সোশ্যাল মিডিয়ায়।
কিন্তু এখানেই শেষ নয়। এর পরে ভাইরাল হয়েছে, আরও একটি ভিডিয়ো। সেটিও একটি স্কুলের সেখানে দেখা যাচ্ছে, স্কুলের ছাত্রীরা তাঁদের হিজাব খুলে ফেলছেন এবং ছুঁড়ে ফেলে দিচ্ছেন। ইরানের স্কুলে মেয়েদের হিজাব পরা বাধ্যতামূলক। হিজাব খুলে ফেলার শাস্তি মারাত্মক। কিন্তু সেই সব ভয়ডরকে পাত্তা না দিয়ে তাঁরা খুলে ফেলছেন হিজাব। আর চিৎকার করে যা বলছেন, তার অর্থ, ‘স্বৈরাচারীর মৃত্যু হোক’। তাঁরা হোল্লাহ খোমেইনি এবং আলি খামেনেইয়ের ছবি ছিঁড়ে ফেলছেন এবং পা দিয়ে মারিয়ে যাচ্ছেন। এই ভিডিয়োটিও বিরাট ভাইরাল হয়ে গিয়েছেন সোশ্যাল মিডিয়া।
দু’টি ভিডিয়োই মারাত্মক ভাইরাল হয়েছে সোশ্যাল মিডিয়ায়। সারা পৃথিবী থেকে বহু মানুষ সমবেদনা জানিয়েছেন, ইরানের নারীদের প্রতি।