অশান্তির আশঙ্কা ছিলই। আম আদমি পার্টি (আপ)-র প্রধানমন্ত্রীর বাসভবন ঘেরাও কর্মসূচি ঘিরে উত্তেজনা ছড়াল দিল্লিতে। সকালেই দিল্লি পুলিশের তরফে জানিয়ে দেওয়া হয়, তারা আপকে কর্মসূচির জন্য অনুমতি দেয়নি। রাজধানীর নির্দিষ্ট কিছু জায়গায় ১৪৪ ধারা জারি করা হয়। আপ সমর্থকেরা জমায়েত করার চেষ্টা করলে তাদের সঙ্গে ধস্তাধস্তি শুরু হয় পুলিশের। বেশ কয়েক জনকে আটক করে টেনেহিঁচড়ে গাড়িতে তোলে পুলিশ।
মঙ্গলবার সকাল ১০টা নাগাদ দিল্লির পটেল চক মেট্রো স্টেশনের সামনে জড়ো হন আপ সমর্থকেরা। পুলিশ এসে মাইকিং করে জানায়, এলাকায় ১৪৪ ধারা জারি করা হয়েছে। তাই আপ সমর্থকেরা যেন ৫ মিনিটের মধ্যে জমায়েত সরিয়ে নেন। কিন্তু তার পরেও বিক্ষোভকারীরা এলাকা ছাড়তে রাজি হননি। তার পরেই টেনেহিঁচড়ে আপ সমর্থকদের গাড়িতে তোলে পুলিশ। আপের অভিযোগ, কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের অধীন দিল্লি পুলিশের মাধ্যমে বিজেপি বিরোধী দলের উপর অত্যাচার চালাচ্ছে।
আপের কর্মসূচির পাল্টা কর্মসূচির ডাক দিয়েছে বিজেপিও। তারা মঙ্গলবার ফিরোজ় শাহ কোটলা স্টেডিয়াম থেকে দিল্লি সেক্রেটারিয়েট পর্যন্ত মিছিলের ডাক দিয়েছে। এই মিছিলের নেতৃত্বে থাকবেন দিল্লির বিজেপি সভাপতি বীরেন্দ্র সচদেব। বিজেপির বক্তব্য, তাদের মিছিলেও অনুমতি দেয়নি পুলিশ। তবে তারা শান্তিপূর্ণ ভাবে্ কর্মসূচি পালন করবে বলে জানিয়েছে বিজেপি।
মঙ্গলবার সকালেই দিল্লি পুলিশের ডেপুটি কমিশনার দেবেশ কুমার মাহলা জানান যে, আপকে (প্রতিবাদ কর্মসূচির) কোনও অনুমতি দেওয়া হয়নি। অশান্তি এবং কোনও ধরনের অপ্রীতিকর পরিস্থিতির মোকাবিলায় দিল্লি পুলিশ কী পদক্ষেপ করছে, সেই প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “আমরা প্রধানমন্ত্রীর বাসভবনের সামনে এবং পটেল চকের সামনে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির মোকাবিলায় প্রয়োজনীয় সংখ্যক বাহিনী রাখছি। কোনও অবস্থান বিক্ষোভ বা মিছিলের অনুমতি দেওয়া হবে না।”
দিল্লির ৭, লোককল্যাণ মার্গেই রয়েছে প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন। মঙ্গলবার সকাল থেকেই লোককল্যাণ মার্গ মেট্রো স্টেশনের সামনে প্রচুর সংখ্যক পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। পটেল চক এবং সেন্ট্রাল সেক্রেটারিয়েট মেট্রো স্টেশনে ঢোকা বেরোনোর কিছু গেট ‘নিরাপত্তার কারণে’ বন্ধ রাখা হয়েছে। তবে স্বাভাবিক রয়েছে মেট্রো পরিষেবা। দিল্লি পুলিশের তরফে জানানো হয়েছে, রাজধানী এলাকায় টহল দিচ্ছে তাদের ৫০টি টহলদার গাড়ি।
দিল্লি ট্র্যাফিক পুলিশের তরফে একটি বিজ্ঞপ্তি দিয়ে মঙ্গলবার ব্যস্ত সময়ে দিল্লির সফদরজং রোড, আকবর রোড এবং তিন মূর্তি মার্গ এড়িয়ে যাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। এর পাশাপাশি যাঁরা বিমানবন্দর, রেলস্টেশনে যাবেন, তাঁদের হাতে ‘যথেষ্ট সময়’ নিয়ে বেরোনোর পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
গত বৃহস্পতিবার দিল্লির মুখ্যমন্ত্রীর বাড়িতে হানা দেয় ইডি। দিল্লির আবগারি দুর্নীতি মামলায় টানা দু’ঘণ্টা জিজ্ঞাসাবাদ এবং তল্লাশি অভিযানের পর রাতেই তাঁকে গ্রেফতার করা হয়। আবগারি মামলায় কেজরীওয়ালের গ্রেফতারিকে ‘বেআইনি’ বলে দাবি করে আপ। ইডির হাতে গ্রেফতার হওয়ার পরেও দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী পদ থেকে ইস্তফা দেননি আপ প্রধান। বরং তাঁর দলের তরফে জানানো হয়, কেজরীই মুখ্যমন্ত্রী থাকবেন। দেশের ইতিহাসে কেজরীওয়ালই প্রথম মুখ্যমন্ত্রী, যিনি পদে থাকাকালীন দুর্নীতির অভিযোগে গ্রেফতার হন।