পিএম কেয়ার্স নিয়ে প্রশ্ন নয় তথ্যের অধিকার আইনে, দিল্লি হাই কোর্টে জানাল মোদীর দফতর

পিএম-কেয়ার্স (প্রাইম মিনিস্টার্স সিটিজেন অ্যাসিস্ট্যান্স অ্যান্ড রিলিফ ইন এমারজেন্সি সিচ্যুয়েশন ফান্ড) স্বেচ্ছাদানের ভিত্তিতে পরিচালিত জনসেবা মূলক প্রতিষ্ঠান (পাবলিক চ্যারিটেবল ট্রাস্ট)। এটি কোনও সরকারি সংস্থা নয়। তাই সংবিধানের ১২ নম্বর অনুচ্ছেদ অনুযায়ী তথ্যের অধিকার আইনের আওতায় এই তহবিল সংক্রান্ত কোনও প্রশ্ন তোলা যেতে পারে না। মঙ্গলবার দিল্লি হাই কোর্টে হলফনামা দিয়ে এ কথা জানাল প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর দফতর (পিএমও)।

প্রধানমন্ত্রীর পদের নামেই তহবিলের নামকরণ। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীই তার চেয়ারম্যান। তহবিলের ঠিকানা সাউথ ব্লকে প্রধানমন্ত্রীর দফতর। কিন্তু প্রধানমন্ত্রীর দফতরের দাবি, পিএম-কেয়ার্স তহবিলের সঙ্গে কেন্দ্রীয় সরকারের কোনও সম্পর্ক নেই! এই তহবিল কেন্দ্রীয় সরকারের অধীন নয়। এর কাজকর্মেও সরকারের কোনও নিয়ন্ত্রণ নেই।

প্রসঙ্গত, ২০২০ সালের মার্চ মাসে করোনা পরিস্থিতির মোকাবিলায় পিএম-কেয়ার্স তহবিল তৈরি হয়েছিল। শুধু যে প্রধানমন্ত্রী তার চেয়ারম্যান, তা নয়। দেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, প্রতিরক্ষামন্ত্রী, অর্থমন্ত্রী তহবিলের অছি পরিষদের সদস্য। তার ওয়েবসাইটে প্রধানমন্ত্রী মোদীর ছবি রয়েছে। নামের সঙ্গে জাতীয় প্রতীক অশোক স্তম্ভও রয়েছে। তাতে চাঁদা চেয়ে সরকারি খরচে বিজ্ঞাপন দেওয়া হয়েছে। কেন্দ্রীয় সরকারের কর্মচারী, রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা, ব্যাঙ্কের কর্মীদের বেতন কেটে তহবিলে টাকা জমা করা হয়েছে। রেল থেকে বিদেশ মন্ত্রক, শিক্ষা থেকে স্বাস্থ্য মন্ত্রক— সরকারের প্রতিটি মন্ত্রকই কোটি কোটি টাকা এই তহবিলে অনুদান হিসেবে জমা করেছে।

অভিযোগ, এমন একটা তহবিলের সরাকরি ভাবে কোনও হিসাব পরীক্ষা অবশ্য হয়নি। এ নিয়ে বারবার বিরোধীরা দাবি জানালেও কেন্দ্রীয় সরকারের তরফে বারবারই দাবি করা হয়েছে, এটা সরকারি তহবিল নয়। তাতে প্রশ্ন বেড়েছে বই কমেনি। ২০২১ সালে একটি মামলার জেরে প্রধানমন্ত্রীর দফতরের আন্ডার সেক্রেটারি প্রদীপ কুমার শ্রীবাস্তব দিল্লি হাই কোর্টে হলফনামা দিয়ে দাবি করেন, এই তহবিলে বাজেট থেকে কোনও অর্থ বরাদ্দ করা হয় না। শুধু মাত্র স্বেচ্ছায় অনুদানই জমা পড়ে। সংবিধান বা সংসদের তৈরি কোনও আইনের মাধ্যমে এই তহবিল তৈরি করা হয়নি। কংগ্রেস-সহ বিরোধী শিবিরের প্রশ্ন, পিএম-কেয়ার্সের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর কোনও সম্পর্ক না থাকলে তিনি কেন একটা বেসরকারি তহবিলে চাঁদা জোগাড়ের জন্য নিজের পদের অপব্যবহার করেছেন?

পিএম-কেয়ার্সে কত টাকা জমা পড়ছে আর সেই টাকা কোথায় খরচ হচ্ছে, তা নিয়ে গোড়া থেকেই অস্বচ্ছতার অভিযোগ উঠেছে। প্রধানমন্ত্রী জাতীয় ত্রাণ তহবিল থাকতে কেন আলাদা করে তহবিল তৈরির প্রয়োজন পড়ল, তা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। তথ্যের অধিকার আইনে এই তহবিলের জমা-খরচ নিয়ে কোনও তথ্য দিতে চায়নি প্রধানমন্ত্রীর দফতর। সরকারি হিসেব পরীক্ষক সংস্থা সিএজি-কেও এর হিসেবনিকেশ পরীক্ষা করতে দেওয়া হয়নি। বিরোধীরা এ নিয়ে সংসদে প্রশ্ন তুললেও জবাব মেলেনি বলে অভিযোগ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.