তৃতীয় বার নরেন্দ্র মোদীকে প্রধানমন্ত্রী করতে বাংলা থেকে চাই ৩৫টি আসন। অনেক দিন আগেই রাজ্য বিজেপিকে সেই লক্ষ্য ঠিক করে দিয়েছেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। শুধু বাংলাই নয়, দেশের সব রাজ্যকেই লক্ষ্য ঠিক করে লোকসভা নির্বাচনের প্রস্তুতি নিতে বলেছে কেন্দ্রীয় বিজেপি। সব রাজ্যে প্রস্তুতি পর্ব চললেও বাংলায় থমকে ছিল পঞ্চায়েত নির্বাচনের জন্য। অগস্ট থেকেই জোরকদমে ভোটের লড়াই শুরু করার পরিকল্পনা নিচ্ছে রাজ্য বিজেপি। ইতিমধ্যেই জেলায় জেলায় রাজ্য নেতৃত্বের নির্দেশ পৌঁছে গিয়েছে। অগস্ট মাসে কী কী করতে হবে, তা সবিস্তারে জানানো হয়েছে। অগস্টে যে তিনটি কর্মসূচি বিজেপি নিয়েছে, তার দায়িত্বে রয়েছেন রাজ্যের তিন সাধারণ সম্পাদক। অগস্টের এই কর্মসূচিগুলিতে মূলত মোদীর নামই নেবে গেরুয়া শিবির। তবে তার সঙ্গে মিশে থাকবে ‘গাছ’ ও ‘মাটি’ প্রসঙ্গও।
পঞ্চায়েত ভোট পর্ব শেষ হতে না হতেই সংসদে শুরু হয়ে যায় বাদল অধিবেশন। রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার-সহ সাংসদেরা দীর্ঘ সময় দিল্লিতেই রয়েছেন। মাঝে রাজ্যে এলেও সাংগঠনিক বৈঠকের বাইরে সভা-সমাবেশ করতে পারেননি। শুক্রবার শেষ হচ্ছে সংসদের অধিবেশন। আর তার পর থেকেই তিনটি কর্মসূচি নিয়ে ঝাঁপাতে চায় রাজ্য বিজেপি।
অগস্টের একটি কর্মসূচির নাম ‘এক হাজার মণ্ডল ভিত্তিক সভা।’ দায়িত্বে রয়েছেন রাজ্যের সাধারণ সম্পাদক তথা আসানসোল দক্ষিণের বিধায়ক অগ্নিমিত্রা পাল। এই কর্মসূচিতে রাজ্যের প্রতিটি বিধানসভা এলাকায় কমপক্ষে তিনটি সভা করতে হবে। বিজেপির সাংগঠনিক জেলা এক একটি লোকসভা এলাকা ধরে। সেই হিসাবে প্রতিটি জেলার সাতটি বিধানসভা এলাকা মিলিয়ে ২১ থেকে ২৫টি সভা করতে হবে। সদ্য বিজেপি অনেক জেলায় দলীয় সভাপতি বদল করেছে। ইতিমধ্যেই পুরনো এবং নতুন সব জেলা সভাপতিকে রাজ্য স্তর থেকে এই সভার প্রস্তুতি নেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। বলা হয়েছে, প্রতিটি সভায় কমপক্ষে দু’হাজার মানুষের সমাগম চাই। ১৬ থেকে ৩০ অগস্টের মধ্যে এই কর্মসূচি শেষ করতে হবে। প্রতিটি সভায় রাজ্যে তৃণমূল সরকারের দুর্নীতি এবং পঞ্চায়েত নির্বাচনে সন্ত্রাসের অভিযোগ নিয়ে সরব হওয়ার পাশাপাশি জোর দিতে হবে মোদী সরকারের সাফল্য বর্ণনায়। কোথায়, কবে সভা হবে, কারা উপস্থিত থাকবেন, তা যত দ্রুত সম্ভব রাজ্য নেতৃত্বকে জানাতে হবে। পরে রাজ্য নেতৃত্ব জেলাকে জানিয়ে দেবেন, কোন সভায় রাজ্য স্তরের কোন নেতা উপস্থিত থাকবেন।
দ্বিতীয় কর্মসূচিটি কেন্দ্রীয় সরকারের হলেও তা সফল করতে জেলা নেতৃত্বকেই দায়িত্ব দিয়েছে বিজেপি। মোদীর ঘোষণা করা ‘আমার মাটি আমার দেশ’ কর্মসূচির জন্যও রাজ্য বিজেপি সব জেলাকে চিঠি পাঠিয়েছে। এই কর্মসূচি সফল করার দায়িত্বে রাজ্যের সাধারণ সম্পাদক তথা ফালাকাটার বিধায়ক দীপক বর্মণ। স্বাধীনতার ৭৫ বছর উপলক্ষে দেশের সব গ্রাম থেকে গাছ ও মাটি নিয়ে গিয়ে দিল্লিতে ‘অমৃত বাটিকা’ নামে একটি বাগান তৈরির কথা মোদী তাঁর জুলাই মাসের ‘মন কি বাত’ অনুষ্ঠানে ঘোষণা করেছেন। সেই কর্মসূচি সফল করতে রাজ্য থেকে যে নির্দেশ জেলায় জেলায় গিয়েছে তাতে বলা হয়েছে, ১৩ থেকে ১৫ অগস্টের মধ্যে রাজ্যের সব গ্রাম থেকে গাছ ও মাটি সংগ্রহ করতে হবে। সেগুলি প্রথমে ব্লক স্তরে নিয়ে আসতে হবে। এর পরে মাটি ভরা কলস নিয়ে ব্লক স্তরের এক জন প্রতিনিধি ২৮ বা ২৯ অগস্ট দিল্লি পৌঁছবেন। এই কর্মসূচির অঙ্গ হিসাবে বিভিন্ন স্থানে বৃক্ষরোপণও করতে হবে বলে জানানো হয়েছে। বাছাই গ্রামে এই কর্মসূচির কথা জানিয়ে ‘শিলা ফলক’ লাগানোর পরিকল্পনাও নিয়েছে বিজেপি।
অগস্ট মাসের দ্বিতীয় পক্ষে তৃতীয় যে কর্মসূচিটি বিজেপি নিয়েছে, তা মূলত লোকসভা নির্বাচনের আগে বুথ স্তরের সংগঠন মজবুত করার লক্ষ্যে। ‘ঘর ঘর জনসম্পর্ক’ নামের এই কর্মসূচি সফল করার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে রাজ্যের সাধারণ সম্পাদক জগন্নাথ চট্টোপাধ্যায়কে। এই কর্মসূচি মূলত মোদী সরকারের ন’বছর পূর্তিতে কেন্দ্রীয় সরকারের ‘সাফল্যগাথা’ নিয়ে সাধারণ মানুষের কাছে যাওয়া। গত পঞ্চায়েত নির্বাচনের আগে চেষ্টা করলেও রাজ্যের অর্ধেকের বেশি বুথে কমিটি তৈরি করতে পারেনি বিজেপি। অগস্ট মাসের গোড়াতেই যে সব জায়গায় কমিটি গঠন করা যায়নি, সেখানে কাজ শুরুর জন্য জেলা নেতৃত্বকে নির্দেশ দিয়েছিলেন রাজ্য নেতৃত্ব। সেই কাজে গতি আনতেই জগন্নাথের নেতৃত্বে নতুন কর্মসূচি বলে রাজ্য বিজেপি সূত্রে জানা গিয়েছে। এ জন্য রাজ্যের তরফে প্রচার সরঞ্জাম জেলা স্তরে পৌঁছে গিয়েছে। রাজ্য নেতৃত্বের যে নির্দেশ, তাতে জেলাগুলিকে ১৫ অগস্টের আগেই এই কর্মসূচির জন্য আলাদা দল গঠন করে তা পাঠাতে বলা হয়েছে। এই কর্মসূচিতে রাজ্যের সব সাংসদ ও বিধায়ক যাতে অংশ নেন, সেই বার্তাও দিয়েছেন রাজ্য নেতৃত্ব।