পুরীতে জগন্নাথের রথযাত্রার সময় হুড়োহুড়ি পড়ে যায় ভক্তদের মধ্যে। আর তাতেই পদপিষ্টের মতো পরিস্থিতি তৈরি হয় বলে দাবি। এখনও পর্যন্ত এক জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া যাচ্ছে। তবে কী কারণে মৃত্যু তা এখনও স্পষ্ট নয়। স্থানীয় সংবাদমাধ্যম সূত্রে খবর, ভিড়ে দমবন্ধ হয়ে মৃত্যু হয়েছে ওই ব্যক্তির। ঘটনার পর পরই ভিড় নিয়ন্ত্রণ করতে উদ্যোগ নেয় স্থানীয় প্রশাসন।
সংবাদমাধ্যম সূত্রে খবর, রবিবার পুরীর জগন্নাথ মন্দির থেকে রথ বার হয়। রথ উপলক্ষে রবিবার পুরীতে জনসমাগম হয় লাখ লাখ মানুষের। রথ পুরীর গ্র্যান্ড রোডের উপর দিয়ে যাওয়ার সময়ই বিপত্তি ঘটে। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানাচ্ছেন, রথের দড়ি ধরে টানার জন্য হুড়োহুড়ি পড়ে যায়। তখনই পদপিষ্টের মতো পরিস্থিতি তৈরি হয়। ভিড় থেকে বেরিয়ে আসতে চান অনেকে। তাতেই বিপদ বাড়ে। ঘটনায় বেশ কয়েক জন পুণার্থী জখম হয়েছেন।
অন্য দিকে, রবিবার সকাল থেকেই পুরীর তীব্র গরম ছিল। গরমে হাঁসফাঁস অবস্থা হয় মানুষের। বেশ কয়েক জন অসুস্থও হয়ে পড়েন। পুণ্যার্থীদের যাতে ভিড়ে কষ্ট না হয়, সে জন্য জলও ছেটানো হচ্ছিল সকাল থেকেই। জানা গিয়েছে, রবিবার বিকেল ৫টা ২০ মিনিট নাগাদ পুরীর মন্দির থেকে রথ বার হয়। অত্যাধিক গরমে ভিড়ের মধ্যেই অসুস্থ হয়ে পড়েন অনেকে। তাঁরা ভিড় থেকে বেরিয়ে আসতে চান। তখনই বিপত্তি ঘটে। ‘ওড়িশা টিভি’ সূত্রে খবর, পর্যন্ত এক জনের মৃত্যু হয়েছে। অনেকেই হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।
৫৩ বছর পর এ বার দু’দিন ধরে পুরীতে পালিত হচ্ছে রথযাত্রা। প্রতি বছরের মতো এ বছরও রথ উপলক্ষে সেজে উঠেছে পুরী। মন্দির তো বটেই সাজানো হয়েছে রাস্তাঘাট। চারপাশ আলোয় আলোকিত। এমনিতে এক দিন ধরে চলে রথযাত্রা। ১৯৭১ সালে শেষ বার দু’দিন ধরে চলেছিল রথযাত্রা। ‘নবযৌবন দর্শন’ এবং ‘নেত্র উৎসব’ রথের আগে হয়ে যায়। কিন্তু এ বার তা হয় রবিবার।
রথ উপলক্ষে দেশ তো বটেই, বিদেশ থেকেও বহু মানুষ আসেন। এ বারও তার অন্যথা হয়নি। অনেক বাঙালিও রথে পুরীতে গিয়েছেন। জগন্নাথ মন্দিরের সিংহদরজার সামনে থেকে রথ টানা শুরু হয়। ভক্তেরা তা টেনে নিয়ে যান গুণ্ডিচা মন্দিরে। সেখানে সাত দিন রাখা থাকবে রথ। তার পর আবার তা ফিরে আসবে মন্দিরে। রবিবার এই যাত্রাপথেই ঘটে পদপিষ্টের মতো ঘটনা। জানা গিয়েছে, বলরামের রথের কাছেই এই ঘটনা ঘটেছে।
উল্লেখ্য, মঙ্গলবার উত্তরপ্রদেশের হাথরসে এক ‘সৎসঙ্গে’ পদপিষ্টের ঘটনা ঘটে। ওই ঘটনায় ১২১ জনের মৃত্যু হয়েছে। মৃতদের পরিজনের চোখের জল শুকোয়নি। স্বঘোষিত ধর্মগুরু সূরজ পাল ওরফে ভোলে বাবার জন্যই ওই ‘সৎসঙ্গ’ আয়োজন করা হয়েছিল। সেখানেই বিপত্তি ঘটে। কী ভাবে হাথরসের ‘সৎসঙ্গে’ দুর্ঘটনা ঘটল, তা নিয়ে বিস্তর কাঁটাছেঁড়া চলছে। প্রত্যক্ষদর্শীদের বয়ানে উঠে আসছে নানা তথ্য। ঘটনায় দায়ের হওয়া এফআইআরে দাবি করা হয়েছে, মঙ্গলবার ‘সৎসঙ্গে’ ৮০ হাজার মানুষের জমায়েতের অনুমতি দেওয়া হয়েছিল পুলিশের তরফে। কিন্তু সেখানে উপস্থিত মানুষের সংখ্যা আড়াই লাখের বেশি ছিল। ওই ঘটনায় মূল অভিযুক্ত ভোলে বাবার ঘনিষ্ঠ দেবপ্রকাশ মধুকর আত্মসমর্পণ করেছেন। তবে এখনও পর্যন্ত ভোলে বাবার খোঁজ পাওয়া যায়নি বলেই খবর। তার মধ্যেই পুরীতে এমন পরিস্থিতি। তবে তাতে কোনও দুর্ঘটনা ঘটেনি।