স্বাধীন ভারত গড়ার অন্যতম কারিগর নেতাজিকে আদর্শ করে তাঁর জন্মদিনে বিশেষভাবে শ্রদ্ধা জানাল আরএসএস। নেতাজির ১২৭ তম জন্মদিনে কলকাতার শহীদ মিনারে নেতাজি লহ প্রণাম অনুষ্ঠানের মাধ্যমে তাঁকে শ্রদ্ধা জানালো রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘ। এই সমাবেশের প্রধান বক্তা ছিলেন সংঘ প্রধান মোহন ভাগবত।
ভাগবত আজ নেতাজির আদর্শকে সামনে রেখে কীভাবে সংঘের কাজকর্ম চালানো হয় তা বোঝান। ভাগবত বলেন, তৃণমূলস্তর থেকে ভারত গঠনের কাজ করে চলেছে রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘ। এবার কলকাতায় নেতাজী সুভাষ চন্দ্রের ১২৭ তম জন্মদিনে অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছিল আরএসএস। তাই পূর্বনির্ধারিত কর্মসূচিকে সামনে রেখেই পাঁচ দিনের সফরে বঙ্গে এসেছিলেন সংঘপ্রধান মোহন ভাগবত। সোমবার সকালবেলা শহীদ মিনারে আরএসএস কর্মীরা (স্বয়ংসেবক) কুচকাওয়াজ করেন। অনুষ্ঠান মঞ্চের ব্যানারে বাংলায় লেখা ছিল নেতাজী লহ প্রণাম। আমন্ত্রিতদের মধ্যে দর্শক আসনের সামনে সারিতেই দেখা গিয়েছে দিলীপ ঘোষ, সুকান্ত মজুমদার, শুভেন্দু অধিকারী, জ্যোতির্ময় সিং মাহাতোর মতো একাধিক বিজেপি নেতৃত্বকে। এদিন আরএসএসের নির্দিষ্ট পোষাক সাদা শার্ট ও খাঁকি রঙের ট্রাউজার পরেই এসেছিলেন বিজেপি নেতৃত্ব।
নেতাজীকে শ্রদ্ধা জানিয়ে আরএসএসের তৈরি করা গান দিয়ে শুরু হয় আজকের অনুষ্ঠান। দশটা নাগাদ বক্তব্য রাখতে ওঠেন সংঘপ্রধান মোহন ভাগবত। নেতাজির আদর্শ, তাঁর কাজকর্ম জীবনের টুকরো টুকরো অংশ তুলে ধরেন তিনি নিজের বক্তব্যে। স্বাধীনতা সংগ্রামী হিসেবে নেতাজিকে আজীবন স্মরণে রাখা ও তাকে শ্রদ্ধা জানানোর পক্ষে যথেষ্ট কম বলেই মনে করেন ভাগবত। তাঁর কথায় নেতাজির স্বপ্ন ছিল ভারত গঠন। সমগ্র ভারতের একটা ধারণা দিয়েছিলেন তিনি। তার লক্ষ্যে আমাদের সকলের লক্ষ্য হওয়া উচিত। পথ আলাদা হতেই পারে কিন্তু গন্তব্য এক হোক। ব্যক্তিগত নয় সমষ্টিগতভাবে সবাইকে নিয়ে তৈরি হোক ভারত। রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘ সেই ভারত গড়ার কাজটাই করে চলেছে।
ভাগবত বলেন, নেতাজী যে স্বপ্ন দেখেছিলেন সেই স্বপ্ন আমাদের সত্যি করতে হবে। ভাগ্য সহায় থাকলে উনি আগে দেশ শাসন করতে পারতেন। নেতাজি যে কাজ করতেন সংঘ সেই কাজ করে। নেতাজি যে সমৃদ্ধশালী দেশ দেখতে চেয়েছিলেন, আমরাও সেটাই চাই। আমাদের দেশ গোটা দুনিয়াকে নেতৃত্ব দেওয়ার ক্ষমতা রাখে। আমাদের সেই উদাহরণ তৈরি করতে হবে।”
বিশ্বমঞ্চে, ভারতের অবস্থান প্রসঙ্গে ভারত ভাগবত বলেন, “ভারত অমর রাষ্ট্র। ভারত গোটা বিশ্বকে ধর্ম শিখিয়েছে। এই ধর্মের মানে আলাদা। এই ধর্ম ন্যায়ের কথা, ভারত বিশ্বকে একতার শিক্ষা দেয়। সেই ভারত গড়ার দিকেই আমরা এগিয়ে যাচ্ছি। দুনিয়া ভারতের দিকে তাকিয়ে আছে।”
নেতাজিকে নিয়ে রাজ্যের মাটিতে আরএসএস-এর এইএত বড় অনুষ্ঠানকে যথেষ্ট গুরুত্ব দিয়েই দেখছে রাজনৈতিক মহল। তৃণমূলের মুখপাত্র কুনাল ঘোষের বক্তব্য, “নেতাজি আপনাদের পছন্দ করতেন না। আপনাদের সঙ্গে বিরোধ ছিল। উনি ধর্মনিরপেক্ষ ছিলেন। আপনাদের অধিকার নেই নেতাজীকে নিয়ে কোনও কথা বলার। কুনালের এই বক্তব্যের পাল্টা দিতে গিয়ে দিলীপ ঘোষ বলেন, “নেতাজি অনেক বড় তাঁকে নিয়ে টানাটানি করে লাভ নেই। নেতাজী দেশনায়ক ছিলেন। আরএসএস দেশভক্ত। তারা নেতাজীর অনুপ্রেরণা নিয়েই কাজ করবে।”