শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতিতে গ্রেফতার পার্থ চট্টোপাধ্যায় উপস্থিত ছিলেন রেশন দুর্নীতিতে গ্রেফতার বাকিবুর রহমানের সিনেমার প্রিমিয়ারে। বাকিবুর প্রযোজিত ওই ছবির অভিনেত্রী দোলন রায় বিশেষ সাক্ষাৎকারে আনন্দবাজার অনলাইনকে জানিয়েছেন, পার্থকে সিনেমার প্রিমিয়ারের অনুষ্ঠানে দেখে অবাকই হয়েছিলেন তিনি।
রেশন বণ্টন দুর্নীতিতে সম্প্রতিই গ্রেফতার হয়েছেন রাজ্যের বনমন্ত্রী তথা প্রাক্তন খাদ্যমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক। বাকিবুর তাঁরই ঘনিষ্ঠ বলে ইডির দাবি। সম্প্রতিই তারা তদন্তে জানতে পারে, এই বাকিবুর ২০১৪ সালে একটি বাংলা সিনেমা বানিয়েছিলেন। ছবির নাম ছিল ‘ম্যানগ্রোভ’। সেই ছবিতে অভিনয় করেছিলেন পার্থ ‘ঘনিষ্ঠ’ বলে পরিচিত অর্পিতা মুখোপাধ্যায়। ছবির নায়িকা ছিলেন তিনি। নায়ক নাইজেল ওক্কারা। এ ছাড়া টলিউডের আরও অভিনেতা-অভিনেত্রীরা ছিলেন ওই ছবিতে। ছিলেন অভিনেত্রী দোলনও। তাঁকে রবিবার ‘ম্যানগ্রোভের’ বিষয়ে জানতে যোগাযোগ করা হয় আনন্দবাজার অনলাইনের তরফে। প্রশ্ন করা হয়, তিনি কি তাঁর সহ-অভিনেত্রী অর্পিতা মুখোপাধ্যায়কে চিনতেন? জবাবে দোলন স্পষ্ট জানিয়ে দেন, চিনতেন না। দোলনের কথায়, ‘‘অর্পিতার সঙ্গে আমার কোনও দৃশ্য ছিল না। ছবিটা দেখার যদি খুব দুর্ভাগ্য হয় তবে দেখতে পারেন, আমার সঙ্গে বড়জোর নাইজেলের দৃশ্য ছিল। ফলে আমার চেনার দরকার পড়েনি।’’ তবে অর্পিতাকে না চিনলেও ছবির প্রিমিয়ারে তৎকালীন মন্ত্রী পার্থকে দেখে চিনতে পেরেছিলেন এবং অবাকও হয়েছিলেন দোলন।
দোলনের কথায়, ‘‘ছবিতে আমার একটি চরিত্রাভিনয় ছিল। গুরুত্বপূর্ণ, তবে ছোট চরিত্র। ছবিটার প্রচার তেমন হয়নি। একেবারেই মুক্তি পেয়েছিল ইয়েলোকার্টে। সেখানেই দেখেছিলাম পার্থবাবু এসেছেন। উনি কেন এসেছেন বুঝতে পারিনি। তাঁর সঙ্গে যে অর্পিতার সম্পর্ক ছিল, সেই ইতিহাস জানতে পেরেছি অনেক পরে। তখন জানতাম না। জানার ইচ্ছেও হয়নি। ফ্রিল্যান্সার হিসাবে কাজ করেছি। পয়সা পেয়েছি। চলে এসেছি। তবে পার্থবাবুকে দেখে অবাক হয়েছিলাম। কারণ ওঁকে আগে কখনও শিল্পীদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখতে দেখিনি। অরূপবাবু (মন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস) যান। ভেবেছিলাম কারও বন্ধু হবেন হয়তো। তাই এসেছেন।’’
তবে যে ছবিতে তিনি অভিনয় করছেন, সেই ছবি কে বানাচ্ছেন, কে প্রযোজক, তা জানা ছিল না দোলনের। অভিনেত্রীকে আনন্দবাজার অনলাইন প্রশ্ন করেছিল, যে ছবিতে অভিনয় করেছিলেন, সেই ছবি প্রযোজনা করেন রেশন দুর্নীতিতে গ্রেফতার বাকিবুর। তাঁকে চিনতেন? দোলন বলেন, ‘‘খবর হওয়ার পরে জানলাম। তার আগে জানতামই না। ভেবেছিলাম, যিনি পরিচালক, তিনিই প্রযোজক।’’ কিন্তু নিজের ছবির শুটিংয়ে কি কখনও বাকিবুর আসেননি? প্রশ্ন শুনে এ বারও দোলন বলেন, ‘‘ওঁকে তো চিনতামই না। শুটিংয়ের সময় অনেকেই আসেন। উনিও এসে থাকতে পারেন। কিন্তু আমি তো চিনতামই না। বাকিবুর এসেছিলেন কি না বুঝব কী করে!’’
দোলন জানিয়েছেন, তিনি বাকিবুরকে চেনার প্রয়োজনই বোধ করেননি। বলেছেন, ‘‘টাকা নিয়ে কাজ করেছি। সে ব্যাপারে কখনও কোনও সমস্যা হয়নি। ওঁরা প্রথমে টাকা দিয়ে বুকিং করে গিয়েছিলেন। পরে যে দিন যেমন শুটিং হয়েছে, সে দিনই টাকা মিটিয়ে দিয়েছেন।’’ তবে টাকা ব্যাঙ্কে পাঠানো হয়নি। পারিশ্রমিক নগদেই পেয়েছিলেন বলে জানিয়েছেন দোলন।
কিন্তু রেশন দুর্নীতির অর্থ সিনেমায় বিনিয়োগ হয়েছেন শুনে এখন তাঁর কী মনে হচ্ছে? প্রশ্ন করা হয়েছিল দোলনকে। তাঁর জবাব, ‘‘অবাক হচ্ছি। যদিও আমি পরিশ্রমের বিনিময়েই অর্থ নিয়েছি। চুরি করিনি। তবু টাকাটার উৎসটা কী সেটা জানার পর খারাপ লাগছে।’’ তবে এজেন্সি নিয়ে চিন্তিত নন তিনি। আনন্দবাজার অনলাইনকে জানিয়েছেন, ‘‘এজেন্সি যদি সাহায্য চায়, সাহায্য করব। যা এখন বললাম, তা-ই আবার বলব। আমার তো সবই খোলা খাতা। আমার তো আর কোনও গোপন ডায়েরি নেই!’’