‘নাকতলার পুজো থেকে যে নাম সরে গেল পার্থদা’! শুনে মান্না দে-র গানে উত্তর দিলেন প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী

আদালতে এসেছিলেন জামিনের শুনানির জন্য। বেরনোর পথে হঠাৎই পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের গলায় শোনা গেল মান্না দে-র প্রেমের গানের লিরিক!

সংবাদ মাধ্যমের প্রতিনিধিদের ভিড় ঠেলে তখন সবে গাড়ির ভিতর উঠে বসেছেন পার্থ। তার পরও তাঁকে লক্ষ্য করে ছুটে আসছে একের পর এক প্রশ্ন। একই প্রশ্ন। ‘‘নাকতলার পুজোয় তো আর আপনার নাম থাকল না পার্থ দা, তা হলে?’’

আধ খোলা কাচের ফাঁকে ক্যামেরার আলোর ঝলকানি তখন পার্থের চোখে। একটু হলেও বিষন্নতা দেখা গেল কি? এক কালে এই নাকতলার প্রধান উপদেষ্টা ছিলেন তিনি। হই হই করে পুজোর আয়োজন করতেন। খুঁটি পুজো থেকে শুরু করে উদ্বোধন— সবকিছুর সঙ্গে জড়িয়ে থাকতেন নিজে। তাঁরই উদ্যোগে মুখ্যমন্ত্রী আসতেন নাকতলার পুজোর উদ্বোধনে। আসতেন তারকারাও। সংবাদ মাধ্যমের প্রতিনিধিদের প্রশ্ন শুনে বোধ হয় সেই সব দিনের কথাই মনে পড়ে গেল পার্থের। প্রশ্ন শুনে সরাসরি কারও দিকে তাকালেন না প্রাক্তন মন্ত্রী। শুধু সামনের দিকে তাকিয়ে মুখে একটি ছন্দবদ্ধ লাইন বললেন। সেই লাইন মান্না দে-র প্রেমের গানের কথা। তবে তাতে সুর নেই। প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী বললেন, ‘‘হৃদয়ের লেখা নাম রয়ে যাবে।’’

শুক্রবার নিম্ন আদালতে ছিল পার্থের জামিনের আবেদনের শুনানি। শিক্ষক নিয়োগ মামলায় গত এক বছর দেড় মাস হেফাজতে রয়েছেন প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী। এর মধ্যে একটি পুজো প্রেসিডেন্সি জেলেই কেটেছে তাঁর। বছর ঘুরে আরও একটি পুজো আসন্ন। জামিনে মুক্তি চেয়ে ইতিমধ্যেই নিম্ন আদালতের পাশাপাশি হাই কোর্টেও আবেদন করেছেন প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী। তবে সেই মামলার শুনানিতে এখনও দেরি। আগামী ৯ অক্টোবর, পুজোর ঠিক দু’সপ্তাহ আগে সিদ্ধান্ত হবে আরও একটি পুজো পার্থ জেলেই কাটাবেন কি না। কিন্তু তার আগে আরও এক জায়গায় বদল হয়ে গিয়েছে।

পুজোর আর বাকি দেড় মাস। ইতিমধ্যেই পুজোর প্রস্তুতি সর্বত্র শুরু হয়ে গিয়েছে পুরোদমে। থিম-প্যান্ডেল-প্রতিমা— নিয়ে ব্যস্ত ‘পার্থের পুজো’ বলে পরিচিত নাকতলা উদয়ন সংঘের পুজো কমিটিও। তবে এ বার আর ‘পার্থের পুজো’ পার্থের নেই। এক কালে নাকতলার পুজোর প্রধান উপদেষ্টা পার্থের পদে এখন বসানো হয়েছে রাজ্যের আর এক মন্ত্রী অরূপ বিশ্বাসকে। নাকতলা থেকে সর্বতো ভাবে চ্ছিন্ন হয়েছে পার্থের সম্পর্ক। শুক্রবার আদালত চত্বরে সে ব্যাপারেই প্রশ্ন করা হয় পার্থকে।

পার্থকে বলা হয়, ‘‘নাকতলায় তো অরূপদাকে দায়িত্ব দেওয়া হল পার্থ দা।’’ উত্তরে প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী বলেন : ‘‘খুব ভালো সিদ্ধান্ত অরুপ অনেক সুদক্ষ পূজা সংগঠক।’’ জবাব দিয়ে এগিয়ে যেতেই ধেয়ে এল আরও প্রশ্ন। পার্থকে বলা হল , ‘‘আপনার নামেই তো নাকতলার পুজো হতো সেটা এখন সরিয়ে অরূপ দাকে দেওয়া হলো কিছু বলবেন না?’’ এই প্রশ্ন শুনেও পার্থ প্রথমে কিছু বলেননি। চুুপচাপ এগিয়ে যান গাড়ির দিকে। ভিতরে গুছিয়ে বসেন। তার পর হঠাৎ কাচ নামিয়ে বলেন, ‘‘তাহলে সেটাই থাকবে, হৃদয়ে লেখা নাম রয়ে যাবে।’’

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.