বড়দিনে ‘ছোট বড় সবার’ জন্য ‘টনিক’ নিয়ে হাজির হলেন দেব। ২০২১ এর দেবের ক্রিসমাস রিলিজ ‘টনিক।এই ছবির মাধ্যমেই প্রথমবার দেব-পরাণ জুটিকে পর্দায় দেখবে দর্শক। ইতিমধ্যেই ‘ও টনিক’ তালে মজেছে আট থেকে আশি।অভিজিৎ সেন পরিচালিত এই ছবিতে দেব ছাড়াও মুখ্যচরিত্রে রয়েছেন পরাণ বন্দ্যোপাধ্যায় এবং শকুন্তলা বড়ুয়া।ট্রেলারে নজর কেড়েছে দেব-পরাণ রসায়ন। ‘টনিক’য়ে কাজ করার অভিজ্ঞতা থেকে শুরু করে দেব, সবকিছু একান্ত সাক্ষাৎকারে হিন্দুস্তান টাইমসকে জানালেন ছবির নায়ক পরাণ বন্দ্যোপাধ্যায়।
ছবিতে দেব রয়েছে অথচ নায়কের নাম পরাণ বন্দ্যোপাধ্যায়।এটা কীরকম ব্যাপার?ট্রেন্ডিং স্টোরিজ
(হাসি)। এখানে গল্পটা ভীষণভাবে সাহায্য করেছে। অদ্ভুত একটা বাঙালিয়ানা ছড়িয়ে রয়েছে ছবির পরতে পরতে। তাছাড়া এই ব্যাপারটার পিছনে দেবেরও বিরাট ভূমিকা রয়েছে। ছবিটা দেখলেই বোঝা যাবে।
দেবের সঙ্গে এটাই আপনার প্রথম কাজ….
হ্যাঁ। এবং জানিয়ে রাখি দুর্দান্ত আনন্দ পেয়েছি ওঁর সঙ্গে ‘টনিক’য়ে কাজ করে। ছবির শ্যুটিংয়ে ওই আমাকে ‘টনিক’ জুগিয়েছে। এমনও হয়েছে মাঝেমধ্যেই হতাশ হয়েছি, একটু আধটু ভয় পেয়েছি তখনই উৎসাহিত করেছে। ওঁকে দেখেই অনেক সময় হতাশার দরজা থেকে ফিরে এসেছি। একটা কথা বলি?
হ্যাঁ, নিশ্চয়ই!
ছবিতে এক জায়গায় রিভার রাফটিং এর একটা সিকোয়েন্স রয়েছে। তিস্তা নদীতে। বিরাট স্রোত। আমি তখনও দোনোমোনো করছি, ও কিন্তু ততক্ষণে বোটে উঠে আমার দিকে হাত বাড়িয়ে দিয়েছে। হাসিমুখে বলছে, ‘আরে, পরাণদা চলে এসো। পাঁচ মিনিট তো লাগবে। আমিও উঠে পড়লাম। এরপর দেখি বিরাট একটা ঢেউ আসছে। কিন্তু পাশে তো দেব তাই মনে হয়েছিল ধুর, কিচ্ছু হবে না আমার। বলতে চাইছি, ও সঙ্গে থাকলে এত উৎসাহিত করে, এত সুন্দর ব্যবহার যে ভরসা পেয়েছি যেকোনও কঠিন কাজ উৎরে দেব (হাসি)। তবে শুধু আমাকে নয়, গোটা ইউনিটকে উৎসাহ জুগিয়ে গিয়েছে।
দেবকে এতদিন ধরে চেনেন, দেখেছেন, ‘টনিক’ এর বাইরে কোনও মনে রাখার মতো অভিজ্ঞতা?
অভিনেতা হিসেবে ওঁর তো উত্তরণ হয়েছে, সেকথা সকলের জানা। তবে মানুষ হিসেবে ও কিন্তু একেবারে আগের মতোই রয়েছে। একটা ঘটনা বলি। দেবের সঙ্গে আমার প্রথম আলাপ ‘মীরাক্কেল’ এর সেটে। প্রথম দেখাতেই মনে হয়েছিল ভীষণ ‘ডাউন টু আর্থ’ একজন মানুষ। সেদিন ও একটি কথা বলেছিল যা আজও আমার মনে আছে। তখন ও তারকা-অভিনেতা হিসেবে সদ্য যাত্রা শুরু করেছে। ‘মীরাক্কেল’ এর শ্যুটিংয়ের ফাঁকে গল্প করতে করতে দেব আমাকে বলেছিল যে ওঁর ভীষণ ইচ্ছে বাবাকে একটা বাড়ি তৈরি করে দেবে। একথাটা শুনে আমি দেবকে জড়িয়ে ধরেছিলাম,আনন্দে। বলতে চাইছি, একজন সন্তান যখন তাঁর বাবার অনুপস্থিতে এরকম প্রতিজ্ঞার কথা প্রকাশ করে, তখন বুঝতে হবে সেই মানুষটার মন কতটা খাঁটি। আমারও তো একটি পিতৃত্ব স্বত্বা রয়েছে। তাই সেই কথার মর্মার্থ টের পেতে কোনও অসুবিধে হয়নি।
ফিরে আসি ‘টনিক’ এর কথায়।এ ছবির বিশেষ কোনও দৃশ্য যা হৃদয় ছুঁয়ে গেছে আপনার?
(সামান্য ভেবে) দেখুন, সেভাবে বলতে গেলে একটি দৃশ্যের কথা বলি। ট্রেলারেও দেখানো হয়েছে সেটি। আবেগপ্রবণ হয়ে কান্না ভেজা গলায় দেবকে জড়িয়ে ধরে আমি বলছি ‘তুই যে সে টনিক নয়….’ ওই সিকোয়েন্সটি যখন শ্যুট হচ্ছিল আমার কিন্তু ‘মীরাক্কেল’ এর দেবের বলা সেই কথাগুলো অদ্ভুতভাবে মনে পড়ে গেছিল। তারপর আমিও তো অভিনেতার বাইরে একজন বাবা। সবমিলিয়ে সত্যিই…(একটু থেমে) আবেগপ্রবণ হয়ে গেছিলাম। ভীষণ, ভীষণ প্রিয় ওই দৃশ্যটি। আবার বলি, এই ছবিতে কাজ করি আমি ভীষণ তৃপ্ত।
শকুন্তলা বড়ুয়ার সঙ্গেও তো প্রথম কাজ?
না, না। ওঁর সঙ্গে আমি আগেও একটি ছবিতে কাজ করেছি। প্রায় ১০ বছর আগে। নাম ছিল ‘কাঞ্চনবাবু’। তবে যেকোনও কারণেই হোক ছবিটি আর মুক্তি পেল না। ‘বদলাপুর’ ছবির অন্যতম চিত্রনাট্যকার অভিজিৎ এই ছবিটি পরিচালনা করেছিলেন। ভীষণ, ভীষণ আনন্দ পেয়েছিলাম সেই ছবিতে কাজ করে।
‘টনিক’ এর পরিচালক অভিজিৎ সেনেরও বড়পর্দায় এটি প্রথম কাজ…
ওঁর কথা তো বলতেই হবে!(জোর গলায়) সবার আগে ও ভীষণ ভালো একজন মানুষ। অত্যন্ত মৃদুভাষী এবং ঠান্ডা মাথায় যেভাবে ইউনিটকে সামলেছে তার জন্য ওঁকে কুর্ণিশ। একজন পরিচালক হিসেবে ওঁর ভবিষ্যৎ যে অত্যন্ত উজ্জ্বল, একথা আমি জোর দিয়ে বলতে পারি।
‘টনিক’য়ে অভিনয় করেছেন তাই জানতে ইচ্ছে করে বাস্তবে আপনার জীবনে সত্যিকারের টনিক কে?
দর্শকই আমার ‘টনিক’। তাঁরা ছাড়া কোনও শিল্পী, অভিনেতা সফল হতে পারে না। দর্শকই আমার দেবতা। আর অভিনয়, সংলাপ হল আমার পুজোর মন্ত্রোচ্চারণ। তাই তাঁরা যদি সন্তুষ্ট হয়ে আমার এই অর্ঘ্য নিবেদনে তাহলেই আমি সফল!